ঢাকা ০৪:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রে নাইট্রোজেন গ্যাস দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • Update Time : ০১:৫২:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৭০ Time View

১৯৯৩ সালের একটি হত্যাকাণ্ডের জন্য দোষী সাব্যস্ত একজন ব্যক্তিকে নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা রাজ্য। এভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর দেশটিতে অত্যন্ত বিতর্কিত একটি পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত। সমালোচকেরা একে “নিষ্ঠুর ও অস্বাভাবিক শাস্তি” বলে বর্ণনা করেছেন।

শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫৪ বছর বয়সী এন্থনি বয়েডকে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। অভিযোগ ছিল তিনি মাত্র ২০০ ডলারের মাদক সংক্রান্ত বিরোধে এক ব্যক্তিকে পুড়িয়ে হত্যা করেছিলেন। তবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বয়েড নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
মৃত্যুর আগে শেষ কথায় তিনি বলেন, ‘আমি কাউকে হত্যা করিনি। আমি কাউকে হত্যায় অংশগ্রহণও করিনি। এই ব্যবস্থা পরিবর্তন না করা পর্যন্ত কোনো ন্যায়বিচার হতে পারে না।’

২০২৪ সালের জানুয়ারির পর থেকে আলাবামায় এটি সপ্তম মৃত্যুদণ্ড, যেখানে নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করা হলো। যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক ডেথ পেনাল্টি ইনফরমেশন সেন্টারের মতে, ওষুধ সংগ্রহ ও প্রয়োগে জটিলতার কারণে প্রাণঘাতী ইনজেকশনের পরিবর্তে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে।

নাইট্রোজেন গ্যাসের ব্যবহার বিশেষভাবে বিতর্কিত, কারণ এই পদ্ধতিতে মৃত্যুর প্রক্রিয়া দীর্ঘ হয়। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে বয়েড আদালতে আবেদন করেছিলেন যেন তাকে ফায়ারিং স্কোয়াডে (গুলি করে) মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। বয়েড যুক্তি দিয়েছিলেন যে নাইট্রোজেন গ্যাস অষ্টম সংশোধনীতে নিষিদ্ধ “নিষ্ঠুর ও অস্বাভাবিক শাস্তি”র আওতায় পড়ে। কিন্তু সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে আদালত।

যদিও আদালতের সংখ্যাগরিষ্ঠ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের তিন উদারপন্থি বিচারপতি। তারা হলেন- সোনিয়া সোটোমায়র, এলেনা কাগান এবং কেতানজি ব্রাউন জ্যাকসন। ভিন্নমত পোষণ করে সোটোমায়র নাইট্রোজেন গ্যাসকে অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় “নির্যাতনমূলক শ্বাসরোধ” হিসেবে বর্ণনা করেন।

তিনি বলেন, ‘বয়েড কেবল একটুখানি দয়া চেয়েছিলেন আর তা হলো গুলিতে মৃত্যু, যা কয়েক সেকেন্ডেই ঘটত। কিন্তু আদালত তাকে সেই অনুগ্রহও দিলো না।’ ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় সাংবাদিক সারা ক্লিফটন বলেন, ‘বয়েডকে বেঁধে রাখার সময় থেকে মৃত ঘোষণা করা পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি প্রায় ৪০ মিনিট সময় নেয়।’

স্থানীয় সময় ৫টা ৫৭ মিনিটে নাইট্রোজেন গ্যাস প্রয়োগ শুরু হয়। এরপরও বয়েড শ্বাস নিতে থাকেন এবং ২০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে শ্বাস নেন তিনি। তখন তার শরীর কাঁপতে থাকে। ৬টা বেজে ১৮ মিনিটে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। এরপর ৬টা বেজে ২৭ মিনিটে গ্যাস বন্ধ করে দেয়া হয়, আর ৬টা ৩৩ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

মৃত্যুর আগে বয়েড ৩০ বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। ১৯৯৫ সালে গ্রেগরি নিউ ইয়র্ক হুগুলি হত্যার জন্য তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। মামলাটি কেবল সাক্ষ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়। কোনো শারীরিক প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। ডেথ পেনাল্টি ইনফরমেশন সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, মামলাটি এমন একটি কাউন্টিতে হয়েছিল, যেখানে তখন মাথাপিছু মৃত্যুদণ্ডের হার ছিল যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সর্বোচ্চ।

 

Please Share This Post in Your Social Media

যুক্তরাষ্ট্রে নাইট্রোজেন গ্যাস দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
Update Time : ০১:৫২:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

১৯৯৩ সালের একটি হত্যাকাণ্ডের জন্য দোষী সাব্যস্ত একজন ব্যক্তিকে নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা রাজ্য। এভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর দেশটিতে অত্যন্ত বিতর্কিত একটি পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত। সমালোচকেরা একে “নিষ্ঠুর ও অস্বাভাবিক শাস্তি” বলে বর্ণনা করেছেন।

শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫৪ বছর বয়সী এন্থনি বয়েডকে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। অভিযোগ ছিল তিনি মাত্র ২০০ ডলারের মাদক সংক্রান্ত বিরোধে এক ব্যক্তিকে পুড়িয়ে হত্যা করেছিলেন। তবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বয়েড নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
মৃত্যুর আগে শেষ কথায় তিনি বলেন, ‘আমি কাউকে হত্যা করিনি। আমি কাউকে হত্যায় অংশগ্রহণও করিনি। এই ব্যবস্থা পরিবর্তন না করা পর্যন্ত কোনো ন্যায়বিচার হতে পারে না।’

২০২৪ সালের জানুয়ারির পর থেকে আলাবামায় এটি সপ্তম মৃত্যুদণ্ড, যেখানে নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করা হলো। যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক ডেথ পেনাল্টি ইনফরমেশন সেন্টারের মতে, ওষুধ সংগ্রহ ও প্রয়োগে জটিলতার কারণে প্রাণঘাতী ইনজেকশনের পরিবর্তে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে।

নাইট্রোজেন গ্যাসের ব্যবহার বিশেষভাবে বিতর্কিত, কারণ এই পদ্ধতিতে মৃত্যুর প্রক্রিয়া দীর্ঘ হয়। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে বয়েড আদালতে আবেদন করেছিলেন যেন তাকে ফায়ারিং স্কোয়াডে (গুলি করে) মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। বয়েড যুক্তি দিয়েছিলেন যে নাইট্রোজেন গ্যাস অষ্টম সংশোধনীতে নিষিদ্ধ “নিষ্ঠুর ও অস্বাভাবিক শাস্তি”র আওতায় পড়ে। কিন্তু সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে আদালত।

যদিও আদালতের সংখ্যাগরিষ্ঠ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের তিন উদারপন্থি বিচারপতি। তারা হলেন- সোনিয়া সোটোমায়র, এলেনা কাগান এবং কেতানজি ব্রাউন জ্যাকসন। ভিন্নমত পোষণ করে সোটোমায়র নাইট্রোজেন গ্যাসকে অন্যান্য পদ্ধতির তুলনায় “নির্যাতনমূলক শ্বাসরোধ” হিসেবে বর্ণনা করেন।

তিনি বলেন, ‘বয়েড কেবল একটুখানি দয়া চেয়েছিলেন আর তা হলো গুলিতে মৃত্যু, যা কয়েক সেকেন্ডেই ঘটত। কিন্তু আদালত তাকে সেই অনুগ্রহও দিলো না।’ ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় সাংবাদিক সারা ক্লিফটন বলেন, ‘বয়েডকে বেঁধে রাখার সময় থেকে মৃত ঘোষণা করা পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি প্রায় ৪০ মিনিট সময় নেয়।’

স্থানীয় সময় ৫টা ৫৭ মিনিটে নাইট্রোজেন গ্যাস প্রয়োগ শুরু হয়। এরপরও বয়েড শ্বাস নিতে থাকেন এবং ২০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে শ্বাস নেন তিনি। তখন তার শরীর কাঁপতে থাকে। ৬টা বেজে ১৮ মিনিটে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। এরপর ৬টা বেজে ২৭ মিনিটে গ্যাস বন্ধ করে দেয়া হয়, আর ৬টা ৩৩ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

মৃত্যুর আগে বয়েড ৩০ বছর কারাগারে কাটিয়েছেন। ১৯৯৫ সালে গ্রেগরি নিউ ইয়র্ক হুগুলি হত্যার জন্য তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। মামলাটি কেবল সাক্ষ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়। কোনো শারীরিক প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। ডেথ পেনাল্টি ইনফরমেশন সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, মামলাটি এমন একটি কাউন্টিতে হয়েছিল, যেখানে তখন মাথাপিছু মৃত্যুদণ্ডের হার ছিল যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সর্বোচ্চ।