ঢাকা ০৪:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মিয়ানমারে সার পাচারের হিড়িক : সীমান্তে ৩৮শত টাকা বস্তা !

ইকবাল হোসাইন, উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৩:২০:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫
  • / ৯ Time View

বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে সার পাচারের হিড়িক পড়েছে। চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ,রামু ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির জল ও স্থল বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে দেদারছে পাচার করছে সরকারের ভর্তূকি দেওয়া ইউরিয়া সার।

১২শত টাকার ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা সার মিয়ানমার সীমান্তে ৩৬০০ থেকে ৩৮০০ টাকা।সরকার নির্ধারিত মুল্য প্রতি বস্তা ১২০০ টাকা হলেও সংশ্লিষ্ট ডিলারগণ কালোবাজারি ও চোরাকারবারিদের বিক্রি করছেন ১৪০০ টাকায়।মিয়ানমার সীমান্তে নিয়ে গেলেই বস্তা প্রতি মুনাফা ২২ শত টাকা।

এতে জল-স্থল সীমান্ত গুলো ব্যবহার করছে সংঘবদ্ধ চোরাকারবারিরা।এদিকে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে জল সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারে পাচারকালে বৃহৎ তিনটি সারের চালান জব্দ করেছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। এতে তিন চালানে ১৬৮২ বস্তা ইউরিয়া সার জব্দ করা হয়।জব্দ করা কাঠের তৈরী ইঞ্জিন চালিত বোট।আটক করা হয় প্রায় ২১ মাঝিমাল্লা’কে।

১৭মে (শনিবার) দুপুরে নৌ-পুলিশ জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে একটি কাঠের ট্রলারে তল্লাশি করে ৩৪০ বস্তায় থাকা ১৭ টন ইউরিয়া উদ্ধার করেছে। নৌ-পুলিশের চট্টগ্রামের কুমিরা ফাঁড়ির পরিদর্শক মোহাম্মদ ওয়ালী উদ্দিন আকবর জানান, এফভি আবদুর রহমান-১ নামে ট্রলারটি বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী পাহাড়তলীর খেজুরতলা এলাকায় অপেক্ষমাণ ছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ট্রলার আটকে ৩৪০ বস্তা সার উদ্ধার করা হয়। প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি করে মোট ১৭ হাজার কেজি সার পাওয়া গেছে। অভিযানের সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ট্রলারে থাকা লোকজন কৌশলে পালিয়ে যায়। পরে উদ্ধার করা সারগুলো কুমিরা নৌ-ফাঁড়িতে আনা হয়।

তিনি বলেন, সারগুলো চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানিতে (কাফকো) উৎপাদিত। কৃষকদের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির জন্য বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) সেগুলো কাফকো থেকে কিনেছিল। সাধারণত প্রথমে বিসিআইসি তাদের নিয়োজিত ঠিকাদারের মাধ্যমে কারখানা থেকে সারগুলো তাদের বাফার গুদামে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদের নিয়োজিত ডিলারের কাছে সরবরাহ করা হয়। ‘আমাদের ধারণা, আটক করা ট্রলারের মালিকসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র বিসিআইসির ঠিকাদার বা অন্য কোনো উৎস থেকে সারগুলো সংগ্রহ করে মিয়ানমারে পাচারের জন্য মজুত করেছিল।’এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে পাহাড়তলী থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। ট্রলার মালিক আব্দুল করিম ও মাস্টার জসীম উদ্দিনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মামলাটি করেন কুমিরা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুর রহমান সওদাগর। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে- গত ১৪ মে ট্রলারটি আটক করা হয়।

গত এক সপ্তাহ আগে (৮ মে) সকালে কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ এ তথ্য জানান,গত ৭ মে দিনগত রাত ৪টার দিকে কোস্ট গার্ড জাহাজ বিসিজিএস মনসুর আলী সেন্টমার্টিনের ছেড়াদ্বীপ থেকে ৪ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণে একটি ইঞ্জিনচালিত সন্দেহজনক কাঠের বোট দেখতে পায়। বঙ্গোপসাগরে ৫৮ দিনের মৎস্য আহরণ নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকায় ওই এলাকায় বোট থাকা বেআইনি।

কোস্ট গার্ড জাহাজ বিসিজি এস মনসুর আলী বোটটিকে থামার সংকেত দিলে বোটটি সংকেত অমান্য করে দ্রুত গতিতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।পরে জাহাজ কর্তৃক ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া করে বোটটিকে আটক করা হয় এবং বোটটিতে তল্লাশি করে অবৈধভাবে শুল্ক-কর ফাঁকি দিয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পাচারকালে ৭৪২ বস্তা ইউরিয়া সারসহ ১১ জন পাচারকারীকে আটক করা হয়। পাচারকারীরা উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং চট্টগ্রামের বাসিন্দা।
পরে জব্দ করা সার টেকনাফ কাস্টমসে এবং আটক পাচারকারী ও পাচার কাজে ব্যবহৃত বোট টেকনাফ মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন আরও বলেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ২৪ ঘণ্টা টহল জারি রেখেছে। যার মাধ্যমে কোস্ট গার্ডের আওতাধীন উপকূলীয় এবং নদী তীরবর্তী অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও চোরাচালানরোধ কমে গেছে। চোরাচালান রোধকল্পে কোস্ট গার্ড ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখবে।
অপরদিকে দুই সপ্তাহ আগে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পাচারের সময় ৬০০ বস্তা ইউরিয়া সার জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড। এ সময় চক্রের ১০ জনকে আটক করা হয়।

শুক্রবার (২ মে) দুপুরে কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এইচ এম এম হারুন-অর-রশীদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।কমান্ডার হারুন-অর-রশিদ বলেন, কোস্ট গার্ডের জাহাজ তাজউদ্দিন সেন্টমার্টিনের দক্ষিণে ছেঁড়া দ্বীপ এলাকায় একটি ইঞ্জিন চালিত কাঠের নৌকা দেখতে পায়। এ সময় থামার সংকেত প্রদান করলে নৌকাটিকে তা অমান্য করে দ্রুত গতিতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে ধাওয়া করে নৌকাটিকে আটক করা হয়।

তিনি আরও বলেন, পরে নৌকাটিকে তল্লাশি করে অবৈধভাবে শুল্ক-কর ফাঁকি দিয়ে আনা ৬শত বস্তা ইউরিয়া সারসহ ১০ জন পাচারকারীকে আটক করা হয়। সারগুলো রাখাইন রাজ্যে পাচার করা হচ্ছিল। জব্দকৃত সার টেকনাফ কাস্টমসে হস্তান্তর করা হয়।

আটককৃতরা কক্সবাজার এবং চট্টগ্রামের বাসিন্দা। তাদের টেকনাফ মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।শুধু জল সীমান্ত নয়,বিচ্ছিন্ন ভাবে নাইক্ষ্যংছড়ি, উখিয়া ও রামু’র বেশ কয়েকটি স্থল সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে দিবারাত্রি পাচার হচ্ছে সার।

টমটম,সিএনজি, মিনি ট্রাক,ডাম্প ট্রাক ও পিকআপ যোগে মিয়ানমারে সার পাচারের হিড়িক পড়েছে।নাইক্ষ্যংছড়ির ফুলতলী,জারুলছড়ি,
চাকঢালা,সোনাইছড়ি,রেজু,আমতলী,বাইশফাঁড়ী,তুমব্রু কোনার পাড়া,বাজার পাড়া,ভাজাবনিয়া, চাকমা পাড়া,পশ্চিমকুল,জলপাইতলী,মধ্যম পাড়া,নয়াপাড়া,উখিয়ার বালুখালী,ধামনখালী, রহমতের বিল,পুটিবনিয়া,আঞ্জুমান পাড়া ও রামুর কচ্ছপিয়া, গর্জনিয়ার বেশ কয়েকটি স্থল সীমান্ত দিয়ে নির্বিঘ্নে সার পাচার করা হচ্ছে।পাচার কাজে জড়িত চোরাকারবারিরা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, টমটম ও সিএনজি চালক,প্রশাসনের সোর্স পরিচয় দেওয়া কতিপয় লোক, মুদির দোকানী ও মহিলাও রয়েছে।

উখিয়ার পালংখালী ইউপি’র চেয়ারম্যান এম.গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন,মিয়ানমারে সার,তেল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্য সামগ্রী যাচ্ছে।মিয়ানমার থেকে দিচ্ছে,রোহিঙ্গার দল,ইয়াবা,মাদক সহ নিষিদ্ধ পণ্য।

এদিকে উখিয়া,রামু,নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন ডিলারগণ অতিরিক্ত মুনাফার লোভে চোরাকারবারিদের হাতে তুলে দিচ্ছে সারের বস্তা। ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে অন্তত ৬০টি টমটম-সিএনজি রয়েছে দিবারাত্রি সার বহন কাজে। এসব সার প্রতি গাড়ীতে ৩/৫ বস্তা করে বিরতিহীন ভাবে বহন করছে।

ঘুমধুম পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে দায়িত্বরত উপসহকারী পুলিশ পরিদর্শক( এসআই) গোলাম কিবরিয়া জানান,সীমান্ত দিয়ে বিচ্ছিন্ন ভাবে সার পাচার হচ্ছে শুনতেছি। পুলিশের চোখ ফাঁকি নিয়ে গেলেও ওখানে আলাদা সীমান্ত রক্ষী বাহিনী আছে। পুলিশ কিন্তু নিয়মিত টহল দেওয়ার কারণে চোরাকারবারিরা সুবিধা করতে পারেনা।

Please Share This Post in Your Social Media

মিয়ানমারে সার পাচারের হিড়িক : সীমান্তে ৩৮শত টাকা বস্তা !

ইকবাল হোসাইন, উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
Update Time : ০৩:২০:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫

বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে সার পাচারের হিড়িক পড়েছে। চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ,রামু ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির জল ও স্থল বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে দেদারছে পাচার করছে সরকারের ভর্তূকি দেওয়া ইউরিয়া সার।

১২শত টাকার ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা সার মিয়ানমার সীমান্তে ৩৬০০ থেকে ৩৮০০ টাকা।সরকার নির্ধারিত মুল্য প্রতি বস্তা ১২০০ টাকা হলেও সংশ্লিষ্ট ডিলারগণ কালোবাজারি ও চোরাকারবারিদের বিক্রি করছেন ১৪০০ টাকায়।মিয়ানমার সীমান্তে নিয়ে গেলেই বস্তা প্রতি মুনাফা ২২ শত টাকা।

এতে জল-স্থল সীমান্ত গুলো ব্যবহার করছে সংঘবদ্ধ চোরাকারবারিরা।এদিকে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে জল সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারে পাচারকালে বৃহৎ তিনটি সারের চালান জব্দ করেছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। এতে তিন চালানে ১৬৮২ বস্তা ইউরিয়া সার জব্দ করা হয়।জব্দ করা কাঠের তৈরী ইঞ্জিন চালিত বোট।আটক করা হয় প্রায় ২১ মাঝিমাল্লা’কে।

১৭মে (শনিবার) দুপুরে নৌ-পুলিশ জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে একটি কাঠের ট্রলারে তল্লাশি করে ৩৪০ বস্তায় থাকা ১৭ টন ইউরিয়া উদ্ধার করেছে। নৌ-পুলিশের চট্টগ্রামের কুমিরা ফাঁড়ির পরিদর্শক মোহাম্মদ ওয়ালী উদ্দিন আকবর জানান, এফভি আবদুর রহমান-১ নামে ট্রলারটি বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী পাহাড়তলীর খেজুরতলা এলাকায় অপেক্ষমাণ ছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ট্রলার আটকে ৩৪০ বস্তা সার উদ্ধার করা হয়। প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি করে মোট ১৭ হাজার কেজি সার পাওয়া গেছে। অভিযানের সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ট্রলারে থাকা লোকজন কৌশলে পালিয়ে যায়। পরে উদ্ধার করা সারগুলো কুমিরা নৌ-ফাঁড়িতে আনা হয়।

তিনি বলেন, সারগুলো চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানিতে (কাফকো) উৎপাদিত। কৃষকদের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির জন্য বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) সেগুলো কাফকো থেকে কিনেছিল। সাধারণত প্রথমে বিসিআইসি তাদের নিয়োজিত ঠিকাদারের মাধ্যমে কারখানা থেকে সারগুলো তাদের বাফার গুদামে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাদের নিয়োজিত ডিলারের কাছে সরবরাহ করা হয়। ‘আমাদের ধারণা, আটক করা ট্রলারের মালিকসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র বিসিআইসির ঠিকাদার বা অন্য কোনো উৎস থেকে সারগুলো সংগ্রহ করে মিয়ানমারে পাচারের জন্য মজুত করেছিল।’এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে পাহাড়তলী থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। ট্রলার মালিক আব্দুল করিম ও মাস্টার জসীম উদ্দিনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মামলাটি করেন কুমিরা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুর রহমান সওদাগর। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে- গত ১৪ মে ট্রলারটি আটক করা হয়।

গত এক সপ্তাহ আগে (৮ মে) সকালে কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ এ তথ্য জানান,গত ৭ মে দিনগত রাত ৪টার দিকে কোস্ট গার্ড জাহাজ বিসিজিএস মনসুর আলী সেন্টমার্টিনের ছেড়াদ্বীপ থেকে ৪ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণে একটি ইঞ্জিনচালিত সন্দেহজনক কাঠের বোট দেখতে পায়। বঙ্গোপসাগরে ৫৮ দিনের মৎস্য আহরণ নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকায় ওই এলাকায় বোট থাকা বেআইনি।

কোস্ট গার্ড জাহাজ বিসিজি এস মনসুর আলী বোটটিকে থামার সংকেত দিলে বোটটি সংকেত অমান্য করে দ্রুত গতিতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।পরে জাহাজ কর্তৃক ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া করে বোটটিকে আটক করা হয় এবং বোটটিতে তল্লাশি করে অবৈধভাবে শুল্ক-কর ফাঁকি দিয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পাচারকালে ৭৪২ বস্তা ইউরিয়া সারসহ ১১ জন পাচারকারীকে আটক করা হয়। পাচারকারীরা উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং চট্টগ্রামের বাসিন্দা।
পরে জব্দ করা সার টেকনাফ কাস্টমসে এবং আটক পাচারকারী ও পাচার কাজে ব্যবহৃত বোট টেকনাফ মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন আরও বলেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ২৪ ঘণ্টা টহল জারি রেখেছে। যার মাধ্যমে কোস্ট গার্ডের আওতাধীন উপকূলীয় এবং নদী তীরবর্তী অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও চোরাচালানরোধ কমে গেছে। চোরাচালান রোধকল্পে কোস্ট গার্ড ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখবে।
অপরদিকে দুই সপ্তাহ আগে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পাচারের সময় ৬০০ বস্তা ইউরিয়া সার জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড। এ সময় চক্রের ১০ জনকে আটক করা হয়।

শুক্রবার (২ মে) দুপুরে কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এইচ এম এম হারুন-অর-রশীদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।কমান্ডার হারুন-অর-রশিদ বলেন, কোস্ট গার্ডের জাহাজ তাজউদ্দিন সেন্টমার্টিনের দক্ষিণে ছেঁড়া দ্বীপ এলাকায় একটি ইঞ্জিন চালিত কাঠের নৌকা দেখতে পায়। এ সময় থামার সংকেত প্রদান করলে নৌকাটিকে তা অমান্য করে দ্রুত গতিতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে ধাওয়া করে নৌকাটিকে আটক করা হয়।

তিনি আরও বলেন, পরে নৌকাটিকে তল্লাশি করে অবৈধভাবে শুল্ক-কর ফাঁকি দিয়ে আনা ৬শত বস্তা ইউরিয়া সারসহ ১০ জন পাচারকারীকে আটক করা হয়। সারগুলো রাখাইন রাজ্যে পাচার করা হচ্ছিল। জব্দকৃত সার টেকনাফ কাস্টমসে হস্তান্তর করা হয়।

আটককৃতরা কক্সবাজার এবং চট্টগ্রামের বাসিন্দা। তাদের টেকনাফ মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।শুধু জল সীমান্ত নয়,বিচ্ছিন্ন ভাবে নাইক্ষ্যংছড়ি, উখিয়া ও রামু’র বেশ কয়েকটি স্থল সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে দিবারাত্রি পাচার হচ্ছে সার।

টমটম,সিএনজি, মিনি ট্রাক,ডাম্প ট্রাক ও পিকআপ যোগে মিয়ানমারে সার পাচারের হিড়িক পড়েছে।নাইক্ষ্যংছড়ির ফুলতলী,জারুলছড়ি,
চাকঢালা,সোনাইছড়ি,রেজু,আমতলী,বাইশফাঁড়ী,তুমব্রু কোনার পাড়া,বাজার পাড়া,ভাজাবনিয়া, চাকমা পাড়া,পশ্চিমকুল,জলপাইতলী,মধ্যম পাড়া,নয়াপাড়া,উখিয়ার বালুখালী,ধামনখালী, রহমতের বিল,পুটিবনিয়া,আঞ্জুমান পাড়া ও রামুর কচ্ছপিয়া, গর্জনিয়ার বেশ কয়েকটি স্থল সীমান্ত দিয়ে নির্বিঘ্নে সার পাচার করা হচ্ছে।পাচার কাজে জড়িত চোরাকারবারিরা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, টমটম ও সিএনজি চালক,প্রশাসনের সোর্স পরিচয় দেওয়া কতিপয় লোক, মুদির দোকানী ও মহিলাও রয়েছে।

উখিয়ার পালংখালী ইউপি’র চেয়ারম্যান এম.গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন,মিয়ানমারে সার,তেল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্য সামগ্রী যাচ্ছে।মিয়ানমার থেকে দিচ্ছে,রোহিঙ্গার দল,ইয়াবা,মাদক সহ নিষিদ্ধ পণ্য।

এদিকে উখিয়া,রামু,নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন ডিলারগণ অতিরিক্ত মুনাফার লোভে চোরাকারবারিদের হাতে তুলে দিচ্ছে সারের বস্তা। ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে অন্তত ৬০টি টমটম-সিএনজি রয়েছে দিবারাত্রি সার বহন কাজে। এসব সার প্রতি গাড়ীতে ৩/৫ বস্তা করে বিরতিহীন ভাবে বহন করছে।

ঘুমধুম পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে দায়িত্বরত উপসহকারী পুলিশ পরিদর্শক( এসআই) গোলাম কিবরিয়া জানান,সীমান্ত দিয়ে বিচ্ছিন্ন ভাবে সার পাচার হচ্ছে শুনতেছি। পুলিশের চোখ ফাঁকি নিয়ে গেলেও ওখানে আলাদা সীমান্ত রক্ষী বাহিনী আছে। পুলিশ কিন্তু নিয়মিত টহল দেওয়ার কারণে চোরাকারবারিরা সুবিধা করতে পারেনা।