ঢাকা ০২:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিঠাপুকুরে বাড়িতে আগুন দিয়ে যুবকের হাত-পাঁ ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ

মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি
  • Update Time : ১২:৫২:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৩৮ Time View

রংপুরের মিঠাপুকুরে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মোন্নাফ মিয়া (৪৮) নামে এক যুবককে বেধড়ক মারপিট করে গুরুত্বর আহত করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আহত মোন্নাফ মিয়াকে উদ্ধার করতে গেলে প্রতিপক্ষরা নিজ বাড়ির সামনে খড়ের গাদায় আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে নাশকতাকারীরা বাড়িতে হামলা এবং অগ্নিসংযোগ করেছে এমন অভিযোগ এনে সেনাবাহিনীকে ফোন দিয়ে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগও রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নের বিরাহিমপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হোসাইন আহম্মেদ নাসিমের সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে তার মামা বজলার রহমানের জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে একাধিকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এবং একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। এরই সূত্রধরে গত শনিবার সকালে মোন্নাফ মিয়া পাশ্ববর্তী ভাংনী ইউনিয়নে তার শ্বশুর বাড়িতে ভ্যানযোগে যাওয়ার সময় হোসাইন আহম্মেদ নাসিম,রিপন, সুরুজ, হাবিব,মোসলেম উদ্দিন, হেলাল,বেলাল, চাঁন মিয়া সহ তার ভাই ভাতিজা মিলে ১০/১২ জন মোন্নাফের পথরোধ করেন। জীবন রক্ষার্থে মোন্নাফ দৌড়ে আকবর নামে একজনের বাড়িতে আশ্রয় নিলে রিপনের হুকুমে আকবরের বাড়ি ভেঙে প্রবেশ করে অভিযুক্তরা মোন্নাফকে দেশীয় ছোরা দিয়ে মাথায় কোপ এবং এলোপাতাড়ি মারপিট করে। এতে মোন্নাফের দু-পা, ও হাত ভেঙে যায়। এমনকি মোন্নাফকে রক্ষা করতে গিয়ে আকবরের স্ত্রীর হাত ভেঙে গিয়েছে।
মোন্নাফকে মারধরের খবর শুনে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করতে গেলে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে হুসাইন আহমেদ নাসিম এবং তার পরিবারের লোকজন বাড়ির বাহিরে রাখা একটি খড়ের গাদায় আগুন লাগিয়ে সেনাবাহিনীকে খবর দেয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখানে গেলে নাসিম জানায়,তার বাড়িতে মোন্নাফ আগুন লাগাতে এসেছিল এবং তার ভাতিজারা কোটা বিরোধী আন্দোলন করায় আওয়ামী লীগের লোকজন তার বাড়িতে নাশকতা করতে এসেছে।

হোসাইন আহম্মেদ নাসিমের দাবি, পূর্ব শত্রুতার জেরে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির সূযোগে মোন্নাফ হোসেন তার বাড়িতে নাশকতা করতে এসেছিলো। পরে মোন্নাফকে আটক করা হলে আরো প্রায়, ৩০০/৪০০,লোকজন তার বাড়িতে হামলা চালায়। তবে এত লোকজন বাড়িঘরে হামলা করার পরেও সব অক্ষত আছে এবং বাহিরে শুধু খড়ের গাদায় আগুন লাগলো! এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, হোসাইন আহম্মেদ নাসিম এবং তার মামা বজলার রহমানের জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ইতিপূর্বে একাধিকবার মারামারি হয়েছে। হোসাইন আহম্মেদ নাসিম এবং তার পরিবার, বিভিন্ন সময়ে মারামারির ঘটনায় নিরীহ গ্রামবাসীকে মারধর করে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে। দেশের চলমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে হোসাইন আহম্মেদ নাসিম সহ তার ভাই ভাতিজারা। মোন্নাফ বজলারের প্রতিবেশী হওয়ায় তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। মোন্নাফের গুরত্বর অবস্থা দেখে হয়তোবা তার স্বজনরা হোসাইন আহম্মেদ নাসিমের ভাতিজা আজহারুল ইসলামের ঔষধের দোকানে ভাংচুর করেছে। কিন্তু নাসিমের বাড়ির উঠানে রাখা খড়ের গাদায় নাসিম নিজে আগুন দিয়েছে।

রায়হান নামে একজন জানান, মোন্নাফের অবস্থা সংকটাপন্ন। তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কোটা বিরোধী আন্দোলন সংক্রান্ত বা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ঘটনা এটি নয়।

মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, এ বিষয়ে থানায় এখনো কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। তিনি বলেন, দেশের এমন পরিস্থিতিতে যারা ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরে ঘটনা ভিন্নক্ষাতে প্রভাবিত করে আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

মিঠাপুকুরে বাড়িতে আগুন দিয়ে যুবকের হাত-পাঁ ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ

মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি
Update Time : ১২:৫২:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৪

রংপুরের মিঠাপুকুরে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মোন্নাফ মিয়া (৪৮) নামে এক যুবককে বেধড়ক মারপিট করে গুরুত্বর আহত করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আহত মোন্নাফ মিয়াকে উদ্ধার করতে গেলে প্রতিপক্ষরা নিজ বাড়ির সামনে খড়ের গাদায় আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে নাশকতাকারীরা বাড়িতে হামলা এবং অগ্নিসংযোগ করেছে এমন অভিযোগ এনে সেনাবাহিনীকে ফোন দিয়ে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগও রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নের বিরাহিমপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হোসাইন আহম্মেদ নাসিমের সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে তার মামা বজলার রহমানের জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে একাধিকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এবং একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। এরই সূত্রধরে গত শনিবার সকালে মোন্নাফ মিয়া পাশ্ববর্তী ভাংনী ইউনিয়নে তার শ্বশুর বাড়িতে ভ্যানযোগে যাওয়ার সময় হোসাইন আহম্মেদ নাসিম,রিপন, সুরুজ, হাবিব,মোসলেম উদ্দিন, হেলাল,বেলাল, চাঁন মিয়া সহ তার ভাই ভাতিজা মিলে ১০/১২ জন মোন্নাফের পথরোধ করেন। জীবন রক্ষার্থে মোন্নাফ দৌড়ে আকবর নামে একজনের বাড়িতে আশ্রয় নিলে রিপনের হুকুমে আকবরের বাড়ি ভেঙে প্রবেশ করে অভিযুক্তরা মোন্নাফকে দেশীয় ছোরা দিয়ে মাথায় কোপ এবং এলোপাতাড়ি মারপিট করে। এতে মোন্নাফের দু-পা, ও হাত ভেঙে যায়। এমনকি মোন্নাফকে রক্ষা করতে গিয়ে আকবরের স্ত্রীর হাত ভেঙে গিয়েছে।
মোন্নাফকে মারধরের খবর শুনে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করতে গেলে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে হুসাইন আহমেদ নাসিম এবং তার পরিবারের লোকজন বাড়ির বাহিরে রাখা একটি খড়ের গাদায় আগুন লাগিয়ে সেনাবাহিনীকে খবর দেয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখানে গেলে নাসিম জানায়,তার বাড়িতে মোন্নাফ আগুন লাগাতে এসেছিল এবং তার ভাতিজারা কোটা বিরোধী আন্দোলন করায় আওয়ামী লীগের লোকজন তার বাড়িতে নাশকতা করতে এসেছে।

হোসাইন আহম্মেদ নাসিমের দাবি, পূর্ব শত্রুতার জেরে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির সূযোগে মোন্নাফ হোসেন তার বাড়িতে নাশকতা করতে এসেছিলো। পরে মোন্নাফকে আটক করা হলে আরো প্রায়, ৩০০/৪০০,লোকজন তার বাড়িতে হামলা চালায়। তবে এত লোকজন বাড়িঘরে হামলা করার পরেও সব অক্ষত আছে এবং বাহিরে শুধু খড়ের গাদায় আগুন লাগলো! এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, হোসাইন আহম্মেদ নাসিম এবং তার মামা বজলার রহমানের জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ইতিপূর্বে একাধিকবার মারামারি হয়েছে। হোসাইন আহম্মেদ নাসিম এবং তার পরিবার, বিভিন্ন সময়ে মারামারির ঘটনায় নিরীহ গ্রামবাসীকে মারধর করে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে। দেশের চলমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে হোসাইন আহম্মেদ নাসিম সহ তার ভাই ভাতিজারা। মোন্নাফ বজলারের প্রতিবেশী হওয়ায় তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। মোন্নাফের গুরত্বর অবস্থা দেখে হয়তোবা তার স্বজনরা হোসাইন আহম্মেদ নাসিমের ভাতিজা আজহারুল ইসলামের ঔষধের দোকানে ভাংচুর করেছে। কিন্তু নাসিমের বাড়ির উঠানে রাখা খড়ের গাদায় নাসিম নিজে আগুন দিয়েছে।

রায়হান নামে একজন জানান, মোন্নাফের অবস্থা সংকটাপন্ন। তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কোটা বিরোধী আন্দোলন সংক্রান্ত বা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ঘটনা এটি নয়।

মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, এ বিষয়ে থানায় এখনো কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। তিনি বলেন, দেশের এমন পরিস্থিতিতে যারা ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরে ঘটনা ভিন্নক্ষাতে প্রভাবিত করে আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।