রংপুরে সাংবাদিক নির্যাতনকারীরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় উদ্বেগ

- Update Time : ১১:২৬:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৭২ Time View
সংবাদ প্রকাশের জেরে রংপুরে সিনিয়র সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলকে মারধর ও হেনস্তার মামলায় আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ‘মিট দ্যা পুলিশ কমিশনার’ কর্মসূচি পালন করেছে গণমাধ্যমকর্মীরা। এসময় জড়িত এবং ইন্ধনদাতারা গ্রেপ্তার না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের উদ্যোগে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে এই কর্মসূচি পালন করেন সাংবাদিক সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ।
এসময় উপ-পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) তোফায়েল আহমেদ, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু উপস্থিত ছিলেন।
‘মিট দ্যা পুলিশ কমিশনার’ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের (আরপিইউজে) সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেক, সিটি প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বপন চৌধুরী, রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান, সিটি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির মানিক, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশন রংপুরের সভাপতি মমিনুল ইসলাম রিপন ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আফজাল, টিসিএ রংপুরের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ডেমি, অনলাইন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের আহ্বায়ক আতিক হাসান ও সদস্য সচিব ফেরদৌস জয় প্রমুখ।
সাংবাদিক নেতারা অভিযোগ করেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও প্রমাণ উপস্থাপন করে মামলা দেয়া হয়েছে। ঘটনার আট দিন হলেও মাত্র ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন থেকে চারজনকে আইওয়াশ বদলি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মব তৈরির চেষ্টা করছে ফেসবুকে লাইভ করছে। কর্মূসচির নামে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের হুমকি ধামকি দিচ্ছে আসামিরা। মিথ্যাচার, অপপ্রচার এবং বিষোদাগার করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করছে।
নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন,সরকারি চাকরিবিধি অমান্য করে রংপুর সিটি করপোরেশনের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক নাগরিকদের জিম্মি করে নাগরিক সেবা বন্ধ করে দেয়া এবং নাগরিক সেবা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। ঘটনার তদন্ত কমিটি গঠনের কোন খবর নাই।মাত্র ৪ জনকে আইওয়াশ বদলি করে দায় সেরেছে সিটি করপেোরেশন কর্তৃপক্ষ। এসব ঘটনার ব্যবস্থা ৭ দিনের মধ্যে দৃশ্যমান দেখতে চান সাংবাদিক নেতারা।
এসময় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ আগামী ৭ অক্টোবর পর্যন্ত ধারাবাহিক কর্মসূচির কথা জানান পুলিশ কমিশনারকে। সেই অনুযায়ী ২৮ সেপ্টেম্বর মহানগর পুলিশ কমিশনারের সাথে বৈঠক হয়। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক, ৩০ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় কমিশনার, ১ অক্টোবর ডিআইজি ও র্যাব-১৩’এর অধিনায়ক, ৪ অক্টোবর সেনাক্যাম্প ইনচার্জের সাথে সাক্ষাত, ৫ ও ৬ অক্টোবর সকল রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের সাথে গণসংযোগ এবং ৭ অক্টোবর দাবি আদায়ে প্রেসক্লাব চত্বরে বেলা ১১ টায় সংহতি সমাবেশ হবে।
বৈঠক শেষে মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী জানান, সিনিয়র সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলের সাথে যে ঘটনা ঘটেছে তা কোনভাবেই কাম্য নয়। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি অভিযোগপত্র দাখিলের প্রক্রিয়া চলছে। আমরা আইনের এমন প্রয়োগ করতে চাই ভবিষ্যতে যেন কেউ এ ধরণের ধৃষ্টতা দেখানোর সাহস না পায়।
প্রসঙ্গত: গেল ২১ সেপ্টেম্বর সংবাদ প্রকাশের জেরে সিনিয়র সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলকে নগরীর কাচারী বাজার থেকে জুলাই যোদ্ধা ও রাজবন্দি পরিচয়ে বেশ কয়েকজন তাকে তুলে নিয়ে যায় সিটি করপোরেশনে। সেখানে তাকে এনে নির্যাতন করা হয়। পরে নতুন ভবনের দোতলায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে নিউজের জন্য ক্ষমতা চাইতে বাধ্য করার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক।
এ ঘটনার খবর পেয়ে সাংবাদিকরা ছুটে গেলে সিটি করপোরেশনের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রধান ফটক আটকে দিয়ে মব তৈরি করে সাংবাদিকদের মারধর ও হেনস্তা করেন। এ ঘটনায় সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমা, ট্রেড লাইসেন্স শাখার প্রধান মিজানুর রহমান মিজু, সাবেক কাউন্সিলর লিটন পারভেজ, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা তম্ময় কুমার সরকারসহ ১৪ জনের নামে মামলা দায়ের করেন।
এই মামলায় রতন ও সাগর নামের দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে রতন মিয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এদিকে, বদলি করা হয়েছে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ চারজনকে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও বিভাগীয় কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। জড়িত সিটি করপোরেশনের অপর কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। উল্টো সরকারি চাকরি বিধিমালার নিয়ম ভেঙ্গে নগরবাসিকে জিম্মি করে নাগরিক সেবা বন্ধ করে দেয়া ও হুমকি দিলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদল দৈনিক সংবাদ, একুশে টেলিভিশন ও বাংলা ট্রিবিউনের রংপুর প্রতিনিধি এবং রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের সদস্য সচিব। গত ১৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক সংবাদে ‘রংপুরে জুলাই যোদ্ধার নামে অটোর লাইসেন্স, পাঁচ কোটি টাকার বাণিজ্যের পাঁয়তারা’ শিরোনামে তার একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের প্রেক্ষিতেই এই ঘটনাটি ঘটেছে।