ঢাকা ০৮:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
‌‌‌‌‌‌‘লকডাউন’ প্রতিরোধে ‌বৃহস্পতিবার রাজপথে নামবে জামায়াত কুবি ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা ডেঙ্গুতে মৃত্যু আরও ৫ জনের, নতুন শনাক্ত ১১৩৯ দাবি না মানলে যমুনা ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি জামায়াতসহ আট ইসলামী দলের আ.লীগের নাশকতা ঠেকাতে ১৩ নভেম্বর রাজপথে থাকবে জামায়াতসহ ৮ দল ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ; গাজীপুর-৬ আসন বহাল রাখার দাবি ৪৯তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের গণিতে প্রথম কুবির অলি উল্লাহ শয়তানের নিশ্বাস প্রয়োগ করে অর্থ ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেয়া চক্রের মূলহোতা গ্রেফতার আওয়ামী লীগ নিয়ে আসলে কী বলেছেন মির্জা ফখরুল অস্ত্রধারীদের দেখামাত্র এসএমজি দিয়ে ব্রাশফায়ারের নির্দেশ সিএমপি কমিশনারের

মামুন হত্যা: যেভাবে ছক কষেছিল মুদি দোকানি রনি

রাজধানী ডেস্ক
  • Update Time : ০৭:০৫:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫
  • / ৪২ Time View

মাত্রই দুদিন আগে পুরান ঢাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে খুন হয়েছেন তারিক সাইফ মামুন (৫৫) নামে এক ব্যক্তি। সোমবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর সুত্রাপুরে তাকে ধাওয়া করে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সামনে জনসমক্ষে একের পর এক গুলি করে দুজন শ্যুটার।

দিনে-দুপুরে রাজধানীর বুকে ঘটে যাওয়া এমন নৃশংস ঘটনায় জোর তদন্তে নামে পুলিশ এবং জানা যায়, নিহত তারিক সাইফ মামুন নিজেই একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী। একসময় আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের সহযোগী ছিলেন তিনি।

শুধু তাই নয়, এক সময়ের আন্ডারওয়ার্ল্ডের আলোচিত এই ইমন-মামুন জুটি চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার আসামিও ছিলেন। তবে, অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে বিরোধ শুরু হয় কয়েক বছর আগে। আর এ বিরোধের জেরেই মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন ইমন।

শীর্ষ এই সন্ত্রাসী তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও ‘একসময়ের মুদি দোকানি’ রনি ফারুকের সহায়তায় আগেও একাধিকবার মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন এবং ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত তাদের পরিকল্পনা সফল হয় ১০ নভেম্বর। এদিন এক মামলায় হাজিরার দিন ধার্য ছিল মামুনের।

হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া দুই শ্যুটারসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানতে পেরেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

গ্রেপ্তার দুই শ্যুটার হলেন, ফারুক ওরফে কুত্তা ফারুক ও রবিন। গ্রেপ্তার বাকি তিনজন হলেন- ইউসুফ, রুবেল ও শামীম। পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার ফারুক ও রবিন ছিলেন পেশাদার শ্যুটার। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি পিস্তল, হত্যাকাণ্ডের পারিশ্রমিক নগদ টাকা, হত্যার কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

ডিবি জানায়, হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী রনি। তিনি ছিলেন এক সময়ের মুদি দোকানি; কিন্তু বর্তমানে তিনি কাফরুলের বাসিন্দা এবং শীর্ষ সন্ত্রাসী। আন্ডারওয়ার্ল্ডের আলোচিত জুটি ইমন-মামুনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য এবং প্রকট। হত্যাকাণ্ডের জন্য রনি নিজে দুই লাখ টাকা দেয় এবং অস্ত্রও সরবরাহ করে। মূল আন্ডারওয়ার্ল্ডের আধিপত্য বিস্তার নিয়েই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রনি পলাতক রয়েছেন। তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

বুধবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির ডিবিপ্রধান মো. শফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, গত ১০ নভেম্বর ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রবেশের পথে দুজন অস্ত্রধারী গুলি ছোড়ার ঘটনায় তারিক সাইফ মামুন গুরুতর জখম হলে তাকে প্রথমে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এবং পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ঢামেকের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ ছায়া তদন্ত শুরু করে জানিয়ে ডিবিপ্রধান বলেন, ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করা হয়। গোয়েন্দা তথ্য ও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে প্রাথমিকভাবে অপরাধীদের শনাক্ত করা হয়। পরে তাদেরকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে সিলেট সদর, নরসিংদী ও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও আলামত উদ্ধার করা হয়।

অভিযানকালে আসামি ফারুক, রবিন, শামীম ও রুবেলকে নরসিংদী সদর থানাধীন ভেলানগর থেকে গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের তল্লাশি করে ফারুক ও রবিনের কাছ থেকে নগদ ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৪০ টাকা উদ্ধার করা হয়; যা ফারুক ও রবিনকে মূল পরিকল্পনাকারী রনি হত্যাকাণ্ডের পারিশ্রমিক হিসেবে প্রদান করে।

ডিবির এই কর্মকর্তা আরও জানান, হত্যাকাণ্ডের পর ফারুক ও রবিন তাদের ব্যবহৃত অস্ত্র ও অব্যবহৃত গুলি রনির নির্দেশে রেন্ট-এ কারের গাড়িচালক রুবেলের কাছে দেয়। রুবেল অস্ত্র ও গুলি পাওয়ার পর তা রনিকে মোবাইল ফোনে জানায়।

রুবেলকে নিয়ে মোহাম্মদপুর থানাধীন রায়েরবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপর আসামি ইউসুফের (পেশায় দর্জি) বাসার মেজে থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, ৬ রাউন্ড গুলি ও ২টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তার ইউসুফ এবং রুবেল জানায়, হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দিন রুবেল অস্ত্র-গুলি ভর্তি একটি ব্যাগ ইউসুফকে তার কাছে রাখার জন্য বুঝিয়ে দিয়ে যায়।ডিবি জানায়, এক সময়ের আন্ডারওয়ার্ল্ডের আলোচিত জুটি ইমন-মামুনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য এবং প্রকট। গত কয়েকদিনে এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ও শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের ঘনিষ্ঠ সন্ত্রাসী রনি ফারুকের সহায়তায় একাধিকবার মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তখন তারা নতুন পরিকল্পনা করে ১০ নভেম্বরকে হত্যাকাণ্ডের জন্য বেছে নেয়। যেহেতু নিহত মামুনের মামলায় হাজিরার দিন ধার্য্য ছিল ১০ নভেম্বর। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঘটনার আগের দিন সন্ধ্যার দিকে মূল পরিকল্পনাকারী রনি তার নিজের বাসায় আরেক সন্ত্রাসী রবিনকে ডেকে নেয়।

ডিবিপ্রধান শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ১০ নভেম্বর রনি সকাল ৯টার দিকে রবিনকে ফোন দিয়ে জজ কোর্ট এলাকায় যেতে বলে এবং সে অনুযায়ী সকাল ১০টার দিকে রবিন তার বন্ধু শামীমের ড্রাইভিংয়ে জজ কোর্ট এলাকায় যায় হত্যার মিশনে অংশগ্রহণের জন্য।

অন্যদিকে রনির নির্দেশে ফারুকসহ সুমন কামাল ও আরও দুই-একজন জজ কোর্ট এলাকায় উপস্থিত হয়। রনির নির্দেশে ফারুক অটোরিকশাযোগে জজ কোর্ট এলাকায় যায়।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথমে সুমন ও ফারুককে শুটিংয়ের জন্য রনি নির্দেশ দেয়। এক পর্যায়ে সুমন ও রনির মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। রনি তখন সুমনের কাছ থেকে দুটি পিস্তল নিয়ে একটি ফারুক ও অপরটি রবিনকে দিয়ে হত্যার মিশনে পাঠায়।

অপর পলাতক কামালের ওপর নির্দেশনা থাকে মামুনকে অনুসরণ করে তার গতিবিধি তাদেরকে জানানো। সে মোতাবেক কামাল মামুনের সঙ্গেই থাকে এবং তার সংকেত পেয়েই ফারুক ও রবিনকে দেয়। এরপর মামুনকে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গুলি ছুড়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে ফারুক ও রবিন। এরপর ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তারা বেড়িবাঁধ হয়ে রায়েরবাজারে যায় এবং রনির নির্দেশে রুবেল, ফারুক ও রবিনের কাছ থেকে অস্ত্র-গুলিগুলো গ্রহণ করে তা রুবেলের বন্ধু ইউসুফের কাছে জমা রাখে। পরবর্তীতে রনির দেওয়া ২ লাখ টাকা রুবেল, শ্যুটার ফারুক ও শ্যুটার রবিন প্রত্যেককে ১ লাখ করে টাকা দেয়।

পরবর্তীতে রনির পরিকল্পনা ও নির্দেশে রুবেলে মাধ্যমে ফারুক, রবিন ও শামীমরা ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। তাদের সঙ্গে রুবেল নিজেও সফরসঙ্গী হয়। ঘটনার পরপরই ফারুক, রবিন, রুবেল ও শামীমের ব্যবহৃত মোবাইলগুলো তাৎক্ষণিকভাবে হাতিয়ে নেয় রনি; যেন আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা কোনোভাবেই তাদেরকে চিহ্নিত ও অনুসরণ না করতে পারে।

তারা প্রথমে সিলেটে যায় এবং রবিন ও রুবেলের প্রচেষ্টায় ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করে। সেখানে ভারতে প্রবেশের কোনো সুবিধা না করতে পেরে তারা সাতক্ষীরা সীমান্ত পার হয়ে ভারতে প্রবেশের লক্ষ্যে সিলেট ত্যাগ করে ঢাকা অভিমুখে রওয়ানা করে এবং পথে ডিবি তাদের গ্রেপ্তার করে।

Please Share This Post in Your Social Media

মামুন হত্যা: যেভাবে ছক কষেছিল মুদি দোকানি রনি

রাজধানী ডেস্ক
Update Time : ০৭:০৫:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫

মাত্রই দুদিন আগে পুরান ঢাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে খুন হয়েছেন তারিক সাইফ মামুন (৫৫) নামে এক ব্যক্তি। সোমবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর সুত্রাপুরে তাকে ধাওয়া করে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সামনে জনসমক্ষে একের পর এক গুলি করে দুজন শ্যুটার।

দিনে-দুপুরে রাজধানীর বুকে ঘটে যাওয়া এমন নৃশংস ঘটনায় জোর তদন্তে নামে পুলিশ এবং জানা যায়, নিহত তারিক সাইফ মামুন নিজেই একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী। একসময় আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের সহযোগী ছিলেন তিনি।

শুধু তাই নয়, এক সময়ের আন্ডারওয়ার্ল্ডের আলোচিত এই ইমন-মামুন জুটি চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার আসামিও ছিলেন। তবে, অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে বিরোধ শুরু হয় কয়েক বছর আগে। আর এ বিরোধের জেরেই মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন ইমন।

শীর্ষ এই সন্ত্রাসী তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও ‘একসময়ের মুদি দোকানি’ রনি ফারুকের সহায়তায় আগেও একাধিকবার মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন এবং ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত তাদের পরিকল্পনা সফল হয় ১০ নভেম্বর। এদিন এক মামলায় হাজিরার দিন ধার্য ছিল মামুনের।

হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া দুই শ্যুটারসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানতে পেরেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

গ্রেপ্তার দুই শ্যুটার হলেন, ফারুক ওরফে কুত্তা ফারুক ও রবিন। গ্রেপ্তার বাকি তিনজন হলেন- ইউসুফ, রুবেল ও শামীম। পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার ফারুক ও রবিন ছিলেন পেশাদার শ্যুটার। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি পিস্তল, হত্যাকাণ্ডের পারিশ্রমিক নগদ টাকা, হত্যার কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

ডিবি জানায়, হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী রনি। তিনি ছিলেন এক সময়ের মুদি দোকানি; কিন্তু বর্তমানে তিনি কাফরুলের বাসিন্দা এবং শীর্ষ সন্ত্রাসী। আন্ডারওয়ার্ল্ডের আলোচিত জুটি ইমন-মামুনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য এবং প্রকট। হত্যাকাণ্ডের জন্য রনি নিজে দুই লাখ টাকা দেয় এবং অস্ত্রও সরবরাহ করে। মূল আন্ডারওয়ার্ল্ডের আধিপত্য বিস্তার নিয়েই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রনি পলাতক রয়েছেন। তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

বুধবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির ডিবিপ্রধান মো. শফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, গত ১০ নভেম্বর ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রবেশের পথে দুজন অস্ত্রধারী গুলি ছোড়ার ঘটনায় তারিক সাইফ মামুন গুরুতর জখম হলে তাকে প্রথমে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এবং পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ঢামেকের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ ছায়া তদন্ত শুরু করে জানিয়ে ডিবিপ্রধান বলেন, ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করা হয়। গোয়েন্দা তথ্য ও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে প্রাথমিকভাবে অপরাধীদের শনাক্ত করা হয়। পরে তাদেরকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে সিলেট সদর, নরসিংদী ও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও আলামত উদ্ধার করা হয়।

অভিযানকালে আসামি ফারুক, রবিন, শামীম ও রুবেলকে নরসিংদী সদর থানাধীন ভেলানগর থেকে গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের তল্লাশি করে ফারুক ও রবিনের কাছ থেকে নগদ ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৪০ টাকা উদ্ধার করা হয়; যা ফারুক ও রবিনকে মূল পরিকল্পনাকারী রনি হত্যাকাণ্ডের পারিশ্রমিক হিসেবে প্রদান করে।

ডিবির এই কর্মকর্তা আরও জানান, হত্যাকাণ্ডের পর ফারুক ও রবিন তাদের ব্যবহৃত অস্ত্র ও অব্যবহৃত গুলি রনির নির্দেশে রেন্ট-এ কারের গাড়িচালক রুবেলের কাছে দেয়। রুবেল অস্ত্র ও গুলি পাওয়ার পর তা রনিকে মোবাইল ফোনে জানায়।

রুবেলকে নিয়ে মোহাম্মদপুর থানাধীন রায়েরবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপর আসামি ইউসুফের (পেশায় দর্জি) বাসার মেজে থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, ৬ রাউন্ড গুলি ও ২টি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তার ইউসুফ এবং রুবেল জানায়, হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দিন রুবেল অস্ত্র-গুলি ভর্তি একটি ব্যাগ ইউসুফকে তার কাছে রাখার জন্য বুঝিয়ে দিয়ে যায়।ডিবি জানায়, এক সময়ের আন্ডারওয়ার্ল্ডের আলোচিত জুটি ইমন-মামুনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য এবং প্রকট। গত কয়েকদিনে এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ও শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের ঘনিষ্ঠ সন্ত্রাসী রনি ফারুকের সহায়তায় একাধিকবার মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তখন তারা নতুন পরিকল্পনা করে ১০ নভেম্বরকে হত্যাকাণ্ডের জন্য বেছে নেয়। যেহেতু নিহত মামুনের মামলায় হাজিরার দিন ধার্য্য ছিল ১০ নভেম্বর। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঘটনার আগের দিন সন্ধ্যার দিকে মূল পরিকল্পনাকারী রনি তার নিজের বাসায় আরেক সন্ত্রাসী রবিনকে ডেকে নেয়।

ডিবিপ্রধান শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ১০ নভেম্বর রনি সকাল ৯টার দিকে রবিনকে ফোন দিয়ে জজ কোর্ট এলাকায় যেতে বলে এবং সে অনুযায়ী সকাল ১০টার দিকে রবিন তার বন্ধু শামীমের ড্রাইভিংয়ে জজ কোর্ট এলাকায় যায় হত্যার মিশনে অংশগ্রহণের জন্য।

অন্যদিকে রনির নির্দেশে ফারুকসহ সুমন কামাল ও আরও দুই-একজন জজ কোর্ট এলাকায় উপস্থিত হয়। রনির নির্দেশে ফারুক অটোরিকশাযোগে জজ কোর্ট এলাকায় যায়।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথমে সুমন ও ফারুককে শুটিংয়ের জন্য রনি নির্দেশ দেয়। এক পর্যায়ে সুমন ও রনির মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। রনি তখন সুমনের কাছ থেকে দুটি পিস্তল নিয়ে একটি ফারুক ও অপরটি রবিনকে দিয়ে হত্যার মিশনে পাঠায়।

অপর পলাতক কামালের ওপর নির্দেশনা থাকে মামুনকে অনুসরণ করে তার গতিবিধি তাদেরকে জানানো। সে মোতাবেক কামাল মামুনের সঙ্গেই থাকে এবং তার সংকেত পেয়েই ফারুক ও রবিনকে দেয়। এরপর মামুনকে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গুলি ছুড়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে ফারুক ও রবিন। এরপর ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তারা বেড়িবাঁধ হয়ে রায়েরবাজারে যায় এবং রনির নির্দেশে রুবেল, ফারুক ও রবিনের কাছ থেকে অস্ত্র-গুলিগুলো গ্রহণ করে তা রুবেলের বন্ধু ইউসুফের কাছে জমা রাখে। পরবর্তীতে রনির দেওয়া ২ লাখ টাকা রুবেল, শ্যুটার ফারুক ও শ্যুটার রবিন প্রত্যেককে ১ লাখ করে টাকা দেয়।

পরবর্তীতে রনির পরিকল্পনা ও নির্দেশে রুবেলে মাধ্যমে ফারুক, রবিন ও শামীমরা ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। তাদের সঙ্গে রুবেল নিজেও সফরসঙ্গী হয়। ঘটনার পরপরই ফারুক, রবিন, রুবেল ও শামীমের ব্যবহৃত মোবাইলগুলো তাৎক্ষণিকভাবে হাতিয়ে নেয় রনি; যেন আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা কোনোভাবেই তাদেরকে চিহ্নিত ও অনুসরণ না করতে পারে।

তারা প্রথমে সিলেটে যায় এবং রবিন ও রুবেলের প্রচেষ্টায় ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করে। সেখানে ভারতে প্রবেশের কোনো সুবিধা না করতে পেরে তারা সাতক্ষীরা সীমান্ত পার হয়ে ভারতে প্রবেশের লক্ষ্যে সিলেট ত্যাগ করে ঢাকা অভিমুখে রওয়ানা করে এবং পথে ডিবি তাদের গ্রেপ্তার করে।