মানবতাবিরোধী অপরাধে মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের মৃত্যুদণ্ড
- Update Time : ০৬:৩৯:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
- / ১৭ Time View
গত বছর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে রায় পড়ার পর এই সাজা ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আনা পাঁচটি অভিযোগেই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে এই মামলায় ট্রাইব্যুনালের আনা পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে প্রথমটিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় অভিযোগে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড।
অন্যদিকে, মামলায় রাজসাক্ষী হওয়ায় আরেক আসামি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে মামলার রায় পড়া শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দেড় ঘণ্টা দেরি হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার পর রায় পড়া শুরু করেন বিচারক।
গত বছর জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালীন ১৫০০ এর বেশি ছাত্র-জনতা পুলিশ বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর ক্যাডারের ছোড়া গুলিতে নিহত হন। যার মধ্যে ৩০ জনের বেশি শিশুও ছিল। এসব শিশুরা কেউ রাস্তায় খেলতে এসে, কেউ বাড়ির ছাদে, আবার কেউ ঘরের ভেতরেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।
শুধু সরকারি হিসেব এবং তদন্তে নয়, জাতিসংঘের দীর্ঘ অনুসন্ধান এবং সংস্থাটির দেওয়া প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে বাংলাদেশের এই গণহত্যার চিত্র। এও উঠে এসেছে, গণঅভ্যুত্থান চলাকালীন নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানোর সরাসরি নির্দেশ দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। দায়িত্বে থেকে সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেন তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। বৃষ্টি মতো চলে গুলি, সারাদেশের সড়কে লাশ পড়তে তাকে শয়ে শয়ে।
ওই সময়ের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছিল। যেখানে ঢাকার একজন পুলিশ কর্মকর্তা মোবাইলে একটি ভিডিও দেখিয়ে তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালকে বলছিলেন, ‘স্যার, গুলি করি, পড়ে একটা যায় একটা, বাকিডি যায় না। এইডাই স্যার বড় আতঙ্কের বিষয়।’
এই ঘটনা গোটা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। তারই মাঝে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ইন্টারনেট সেবা। গোটা দেশকে অন্ধকারে রেখে চালানো হয়েছিল গণহত্যা। খালি হয়েছে বহু মা-বাবার বুক। বাবা হারিয়েছে অনেক শিশু। বিধবা হয়েছে শতশত নারী।
অবশেষে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন স্বৈরাচারি শাসক শেখ হাসিনা। গত ১৫ মাস দিল্লিতে রয়েছেন তিনি। এদিকে দেশে তার বিরুদ্ধে হয়ে গেল ফাঁসির রায়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা জন্য ১৭ নভেম্বর দিন ধার্য করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
মামলার আসামিদের মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এখনো পলাতক। অন্য আসামি কারাগারে আটক সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী হয়েছেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় প্রথম মামলাটি (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। গত বছরের ১৭ অক্টোবর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম বিচারকাজ অনুষ্ঠিত হয়। সেদিনই এ মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
প্রথম দিকে এ মামলায় শেখ হাসিনাই একমাত্র আসামি ছিলেন। চলতি বছরের ১৬ মার্চ মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করার আবেদন করে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) এবং ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন।
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মোট পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। গত ১২ মে প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি ৪ হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার রয়েছে।
এর ভিত্তিতে গত ১ জুন ট্রাইব্যুনালে হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান ও আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। ওই দিনই ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নেন। এরপর ১০ জুলাই তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
একপর্যায়ে এই মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে (অ্যাপ্রুভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের করা আবেদন মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল। পরবর্তীতে এই মামলার রাজসাক্ষী হয়ে সাক্ষ্য দেন তিনি।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়






































































































































































































