মাদক কারবারে বাধা দেওয়ায় রুবেলকে হত্যা, ২৬ বছর পর আসামি গ্রেফতার

- Update Time : ০৫:৩৪:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ২২২ Time View
১৯৯৬ সালের রাজধানীর আর, কে, মিশন রোডের আলোচিত কলেজ ছাত্র রুবেল হত্যাকাণ্ডের যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আরশাদ ওরফে আসাদকে (৪৫) গ্রেফতার করেছে র্যাব।
দীর্ঘ ২৬ বছর পর সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর কোতয়ালি থানা সংলগ্ন এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব-২ এর একটি দল।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) র্যাব-২ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) সিনিয়র এএসপি শিহাব করিম জানান, ১৯৯৬ সালের জানুয়ারি মাসে ডিএমপির ডেমরা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়।
তৎকালীন সময়ে রাজধানীর গোলাপবাগ ও গোপিবাগ এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপ ‘তিন ভাই গ্রুপ’ নামে পরিচিত ছিল।
তিনি বলেন, এই গ্রুপের প্রধান মামুন ও তার সহযোগিরা অবাধে গোপিবাগ ও গোলাপবাগ এলাকায় মদ, গাঁজা, হেরোইন ও ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্য বিক্রি করতো। এলাকার উঠতি কিশোররা তাদের কাছ থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ে সেবন করে বিভিন্ন অসামাজিক কাজে লিপ্ত হতো।
ভুক্তভোগী এনামুল ইসলাম রুবেল (২০) গোলাপবাগ ও গোপিবাগ এলাকায় সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূল করে শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ‘সন্ত্রাস নির্মূল প্রতিরোধ কমিটি’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে।
এরপর রুবেল ও তার বন্ধুরা গোপিবাগ ও গোলাপবাগ এলাকায় ‘তিন ভাই গ্রুপ’র সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদেরকে তাদের অবৈধ কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে চাপ সৃষ্টি করে।
শিহাব করিম আরও বলেন, ভুক্তভোগী রুবেলের প্রতিষ্ঠিত ‘সন্ত্রাস নির্মূল প্রতিরোধ কমিটি’র চাপে মাদক ব্যবসায়ীরা এলাকায় টিকতে না পেরে পার্শ্ববর্তী এলাকায় চলে যায় এবং সেখানে একইভাবে মাদক বিক্রি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে শুরু করে।
পার্শ্ববর্তী এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও মাদক বিক্রির কথা শুনে রুবেল ও তার বন্ধুরা সেখানে গিয়ে মাদক ব্যবসা বন্ধের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।
ফলে এলাকার সন্ত্রাসী এবং মাদক কারবারিদের গ্রুপ ‘তিন ভাই গ্রুপ’ এর সদস্যরা ক্ষুব্ধ হয়ে ‘সন্ত্রাস নির্মূল প্রতিরোধ কমিটি’ এর প্রধান এনামুল ইসলাম রুবেলকে চিরতরে শেষ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালের ৫ জানুয়ারি ডেমরা থানাধীন হোটেল সী-কুইনের সামনে রুবেলকে ছুরি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে রাস্তায় ফেলে যায়। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে রুবেল মারা যায়।
পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর মা নিজে বাদি হয়ে হত্যায় জড়িত থাকা ‘তিন ভাই গ্রুপ’র লিডার মামুনসহ আরও কয়েক জনের নামে ডেমরা থানায় মামলা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দীর্ঘ তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এএসপি শিহাব করিম আরও বলেন, মামলার অন্যতম গ্রেফতার আরশাদ ওরফে আসাদ ১৮ মাস কারাবাস ভোগ করার পর নিয়মিত হাজিরা দেওয়ার শর্তে মুচলেকা নিয়ে আদালত তাকে জামিন দেন। কিন্তু পরে তিনি আর আদালতে হাজিরা দেননি।
পলাতক থাকাবস্থায় আদালত মামলার দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে চলতি বছরের ৭ সেপ্টেম্বর আরশাদের বিরুদ্ধে অপরাধের সত্যতা পাওয়ায় ৩০২/৩৪ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদানসহ গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করেন।
রায়ের পর থেকে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার অন্যতম পলাতক আসামি আরশাদ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ছদ্মবেশে আত্মগোপন করে। আত্মগোপনে থাকাকালীন আসাদ পরিচয় লুকিয়ে বাস কাউন্টারের টিকিট বিক্রির কাজ করতেন।
তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।