ঢাকা ০৬:৫১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
টঙ্গী ফ্লাইওভারে বাস-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ১ কাউন্সিলরের বাড়ি থেকে মাদক উদ্ধারের ঘটনায় বিপাকে ৪ কর্মকর্তা  নোয়াখালীতে ট্রাকের ধাক্কায় দুই মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু নিস্পত্তির মাধ্যমে মামলা জট কমিয়ে বিচার কাজ এগিয়ে নিতে হবে আদালত থেকে হাতকড়াসহ লাফ দিয়ে হত্যা মামলার আসামির পালানোর চেষ্টা নয় বছর পর ফিরছে ‘ব্রিকলেন কারি ফ্যাস্টিভ্যাল’ ফিলিস্তিনের প্রধান বিচারপতির সম্মানে প্রধান বিচারপতির নৈশভোজ চাইলেই দেড় বছরে সংস্কার সম্ভব নয়: উপদেষ্টা রিজওয়ানা টিভি দেখতে দেখতেই ব্রেন স্ট্রোক করলেন অভিনেত্রী সায়ন্তনী যেদিন রাস্তায় নামব, বন্দুকও কিছু করতে পারবে না : কাদের সিদ্দিকী

মহানবীকে (সা.) কটূক্তির অভিযোগে কিশোর গ্রেপ্তার, ১৩ বাড়িতে ভাঙচুর

রংপুর ব্যুরো
  • Update Time : ১২:২৪:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫
  • / ১৯১ Time View

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে রঞ্জন কুমার রায় নামের এক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এ ঘটনার জেরে রোববার (২৭ জুলাই) বিকেলে গঙ্গাচড়ার বেতগাড়ি ইউনিয়নের আলদাদপুর গ্রামে হিন্দু পাড়ায় হামলা চালিয়ে ১৩ বাড়িতে ভাঙচুর করেছে উত্তেজিত জনতা।

এ সময় তাদের হামলায় একজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ প্রতিবেদন লেখার সময় পার্শ্ববর্তী এলাকায় অভিযুক্তের ফাঁসির দাবিতে মাইকে বিভিন্ন স্লোগান শোনা যাচ্ছিল।

এর আগে গতকাল শনিবার বিকেলে ধর্মীয় কটূক্তি করার অভিযোগ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যার দিকে উপজেলার বেতগাড়ি ইউনিয়নের আলদাদপুর গ্রাম থেকে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়।

রঞ্জন ওই গ্রামের সুজন কুমারের ছেলে। তিনি রংপুরের একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের তৃতীয় পর্বের শিক্ষার্থী।

এ ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গঙ্গাচড়াসহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো জানায়, রোববার (২৭ জুলাই) গঙ্গাচড়া এবং পার্শ্ববর্তী কিশোরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। এই গ্রামের পার্শ্ববর্তী নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাংলা বাজার হাটে মাইকিং করে ঘোষণা দেওয়া হয় আল্দাদপুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী খিলালগঞ্জ বাজারে তারা একটি মানববন্ধন করবেন। মাইকিংয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়— বিক্ষোভকারীরা শুধু গঙ্গাচড়া উপজেলা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ মিছিল করবে, কোনো হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা করবে না।

কিন্তু বিকেলের দিকে স্থানীয় খিলালগঞ্জ বাজারে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয় এবং সেখান থেকে একটি মিছিল আলদাদপুর গ্রামের দিকে আসে। গ্রামে প্রবেশ করে মিছিলটি হঠাৎই স্লোগান দিতে থাকে। উত্তেজিত জনতা ১৩টি বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায়।

ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, হামলাকারীরা বাড়িঘরের জানালা-দরজা, আসবাবপত্র ও ঘরের চালসহ বিভিন্ন মালামাল ভাঙচুর করেছে। লুট করে নিয়ে গেছে কাপড়চোপড়, নগদ টাকা-পয়সা এবং গৃহপালিত ছাগলসহ অন্যান্য সম্পদ।

ঘটনার পর থেকেই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে, পাশাপাশি সেনাবাহিনীও ঘটনাস্থলে অবস্থান করছে।

জানা গেছে, রঞ্জন কুমার নামের ওই শিক্ষার্থী ‘রঞ্জন এলআরএম’ নামে একটি ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে মহানবী (সা.) কে নিয়ে একাধিক অবমাননাকর পোস্ট করেন। গতকাল বিকেলে সেই পোস্টের স্ক্রিন শর্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে পুলিশ তাকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। ঘটনার পর থেকে ওই পাড়ায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন ছিল।

গংগাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল এমরান কালবেলাকে বলেন, গত রাত ১২টা-১টা পর্যন্ত আমরা ছিলাম। পরিস্থিতির শান্ত করার পর আমরা চলে যাই। আজকে আমাদের কাছে আবার ম্যাসেজ আসে তারা হাজার হাজার লোক বের হবেন জোহরের নামাজের পর। এই তথ্যের ভিত্তিতে আমরা পুলিশের ফোর্স মোতায়েন করি ও সেনাবাহিনীর সাহায্য চাই। আমরা দুপুর একটা থেকে এখানে অবস্থান করছি।

তিনি আরও বলেন, পরে বিকেলের দিকে উত্তেজিত জনতা বাড়ি ঘরে হামলা করলে আমরা রক্ষা করার চেষ্টা করি। কয়েকটা বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে। আমাদের পুলিশ সদস্যদের অনেককে তারা লাঠি দিয়ে মেরেছে। এ সময় পুলিশ কনস্টেবল আলী হোসেন গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

মহানবীকে (সা.) কটূক্তির অভিযোগে কিশোর গ্রেপ্তার, ১৩ বাড়িতে ভাঙচুর

রংপুর ব্যুরো
Update Time : ১২:২৪:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে রঞ্জন কুমার রায় নামের এক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এ ঘটনার জেরে রোববার (২৭ জুলাই) বিকেলে গঙ্গাচড়ার বেতগাড়ি ইউনিয়নের আলদাদপুর গ্রামে হিন্দু পাড়ায় হামলা চালিয়ে ১৩ বাড়িতে ভাঙচুর করেছে উত্তেজিত জনতা।

এ সময় তাদের হামলায় একজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ প্রতিবেদন লেখার সময় পার্শ্ববর্তী এলাকায় অভিযুক্তের ফাঁসির দাবিতে মাইকে বিভিন্ন স্লোগান শোনা যাচ্ছিল।

এর আগে গতকাল শনিবার বিকেলে ধর্মীয় কটূক্তি করার অভিযোগ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যার দিকে উপজেলার বেতগাড়ি ইউনিয়নের আলদাদপুর গ্রাম থেকে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়।

রঞ্জন ওই গ্রামের সুজন কুমারের ছেলে। তিনি রংপুরের একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের তৃতীয় পর্বের শিক্ষার্থী।

এ ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গঙ্গাচড়াসহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো জানায়, রোববার (২৭ জুলাই) গঙ্গাচড়া এবং পার্শ্ববর্তী কিশোরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাইকিং করে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। এই গ্রামের পার্শ্ববর্তী নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাংলা বাজার হাটে মাইকিং করে ঘোষণা দেওয়া হয় আল্দাদপুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী খিলালগঞ্জ বাজারে তারা একটি মানববন্ধন করবেন। মাইকিংয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়— বিক্ষোভকারীরা শুধু গঙ্গাচড়া উপজেলা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ মিছিল করবে, কোনো হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা করবে না।

কিন্তু বিকেলের দিকে স্থানীয় খিলালগঞ্জ বাজারে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয় এবং সেখান থেকে একটি মিছিল আলদাদপুর গ্রামের দিকে আসে। গ্রামে প্রবেশ করে মিছিলটি হঠাৎই স্লোগান দিতে থাকে। উত্তেজিত জনতা ১৩টি বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায়।

ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, হামলাকারীরা বাড়িঘরের জানালা-দরজা, আসবাবপত্র ও ঘরের চালসহ বিভিন্ন মালামাল ভাঙচুর করেছে। লুট করে নিয়ে গেছে কাপড়চোপড়, নগদ টাকা-পয়সা এবং গৃহপালিত ছাগলসহ অন্যান্য সম্পদ।

ঘটনার পর থেকেই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে, পাশাপাশি সেনাবাহিনীও ঘটনাস্থলে অবস্থান করছে।

জানা গেছে, রঞ্জন কুমার নামের ওই শিক্ষার্থী ‘রঞ্জন এলআরএম’ নামে একটি ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে মহানবী (সা.) কে নিয়ে একাধিক অবমাননাকর পোস্ট করেন। গতকাল বিকেলে সেই পোস্টের স্ক্রিন শর্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে পুলিশ তাকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। ঘটনার পর থেকে ওই পাড়ায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন ছিল।

গংগাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল এমরান কালবেলাকে বলেন, গত রাত ১২টা-১টা পর্যন্ত আমরা ছিলাম। পরিস্থিতির শান্ত করার পর আমরা চলে যাই। আজকে আমাদের কাছে আবার ম্যাসেজ আসে তারা হাজার হাজার লোক বের হবেন জোহরের নামাজের পর। এই তথ্যের ভিত্তিতে আমরা পুলিশের ফোর্স মোতায়েন করি ও সেনাবাহিনীর সাহায্য চাই। আমরা দুপুর একটা থেকে এখানে অবস্থান করছি।

তিনি আরও বলেন, পরে বিকেলের দিকে উত্তেজিত জনতা বাড়ি ঘরে হামলা করলে আমরা রক্ষা করার চেষ্টা করি। কয়েকটা বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে। আমাদের পুলিশ সদস্যদের অনেককে তারা লাঠি দিয়ে মেরেছে। এ সময় পুলিশ কনস্টেবল আলী হোসেন গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।