ঢাকা ০২:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫, ১১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মহাদেবপুরে ধর্ষককে ছেড়ে দিয়ে নির্যাতিতাকে তালাক দেওয়ালেন মাতব্বররা

কিউ এম সাঈদ টিটো, নওগাঁ
  • Update Time : ০৮:২১:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৬৮৫ Time View

নওগাঁর মহাদেবপুরে গৃহবধূকে জোর করে ধর্ষণের পর শালিসে জরিমানা নিয়ে ধর্ষককে ছেড়ে দিয়ে নির্যাতিতা গৃহবধূকে তালাক দেওয়ালেন গ্রাম্য মাতব্বররা। সম্ভম আর সংসার হারানো ওই অসহায় বুদ্ধি প্রতিবন্ধী গৃহবধূকে পাঠিয়ে দেয়া হয় তার দরিদ্র বাবার বাড়িতে।

প্রকাশ্য দিবালোকে গ্রামের শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত শালিসে নির্যাতিতা গৃহবধূ ‘‘সে আমার জীবন নষ্ট করেছে, আমি তাকে ছাড়বো না’’ এমন কথা বললেও মাতব্বররা ধর্ষককে আইনের হাতে তুলে না দিয়ে উল্টো ওই গৃহবধূকেই শাস্তি দিয়েছেন। এনিয়ে এলাকায় চলছে তোলপাড়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, উপজেলার সফাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে গ্রাম্য পশু চিকিৎসক শামীম হোসেন তার প্রতিবেসী যুবকের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে প্রায়ই তার বাড়িতে যাতায়াত করতো।

গত রোববার (১৭ আগস্ট) সকালে শামীম ওই যুবকের বাড়িতে গিয়ে তার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্ত্রীকে বাড়িতে একা পেয়ে ফুসলিয়ে ধর্ষণ করে। বাড়ির লোকজন জানতে পেরে শামীমকে মারপিট করে।

দুপুরে এনিয়ে গ্রামে শালিসের আয়োজন করা হয়। খবর দেয়া হয় নিয়ামতপুর উপজেলায় গৃহবধূর বাবার বাড়িতে। শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে শামীম ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করেছে বলে প্রমাণ হয়। নির্যাতিতা গৃহবধূ শামীমের শাস্তি দাবি করেন।

শালিসে মাতব্বরি করেন ওই এলাকার নেতা বলে পরিচিত ডাক্তার মোয়াজ্জেম হোসেন ও মাজেদ আলী। দীর্ঘ বৈঠক শেষে মাতব্বররা রায় দেন ধর্ষক শামীম এক লক্ষ ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিবে, আর নির্যাতিতা গৃহবধূকে তার স্বামী তালাক দিবে। শামীম জরিমানার টাকা নগদ প্রদান করে খালাস পান ধর্ষণের শাস্তি থেকে, আর দেনমোহর পরিশোধ না করেই গৃহবধূকে তালাক দেন তার স্বামী।

বিষয়টি জানতে ওই গ্রামে গেলে আবালবৃদ্ধবনিতা সকলেই স্বীকার করেন বিষয়টি। তারা ধর্ষকের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন। ধর্ষণের মত এক স্পর্শকাতর বিষয়ে কিভাবে শালিস হয় তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা।

অনেকে বলেন, নব্য নেতারা নিজেদের চরম ক্ষমতাধর ভাবে, যেন তারা সকল আইনের উর্ধে। ধর্ষণের মত ফৌজদারি অপরাধ অজামিনযোগ্য এবং অআপসযোগ্য হলেও তারা কিভাবে শালিস করলেন তা নিয়ে চলছে গুঞ্জন।

ধর্ষক শামীম হোসেনের বাড়িতে গেলে তিনি নিজে স্বীকার করেন এক লক্ষ ১০ হাজার টাকা জরিমানা দেবার কথা।

জানতে চাইলে মোবাইল ফোনে মাতব্বর মোয়াজ্জেম হোসেন বিষয়টি মিমাংসার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ছেলের পরিবার আর মেয়ের পরিবার উভয়েই তালাক চাওয়ায় তালাকের রায় দেয়া হয়েছে। জরিমানার টাকা মেয়েকে দেয়া হয়েছে।

মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহীন রেজা বলেন, বিষয়টি তাকে কেউ জানাননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিবেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সম্প্রতি এলাকায় এধরণের ঘটনা বেড়ে চলেছে। দোষীদের আইনের আওতায় না আনায় বাড়ছে অপরাধ প্রবনতা।

Please Share This Post in Your Social Media

মহাদেবপুরে ধর্ষককে ছেড়ে দিয়ে নির্যাতিতাকে তালাক দেওয়ালেন মাতব্বররা

কিউ এম সাঈদ টিটো, নওগাঁ
Update Time : ০৮:২১:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫

নওগাঁর মহাদেবপুরে গৃহবধূকে জোর করে ধর্ষণের পর শালিসে জরিমানা নিয়ে ধর্ষককে ছেড়ে দিয়ে নির্যাতিতা গৃহবধূকে তালাক দেওয়ালেন গ্রাম্য মাতব্বররা। সম্ভম আর সংসার হারানো ওই অসহায় বুদ্ধি প্রতিবন্ধী গৃহবধূকে পাঠিয়ে দেয়া হয় তার দরিদ্র বাবার বাড়িতে।

প্রকাশ্য দিবালোকে গ্রামের শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত শালিসে নির্যাতিতা গৃহবধূ ‘‘সে আমার জীবন নষ্ট করেছে, আমি তাকে ছাড়বো না’’ এমন কথা বললেও মাতব্বররা ধর্ষককে আইনের হাতে তুলে না দিয়ে উল্টো ওই গৃহবধূকেই শাস্তি দিয়েছেন। এনিয়ে এলাকায় চলছে তোলপাড়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, উপজেলার সফাপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে গ্রাম্য পশু চিকিৎসক শামীম হোসেন তার প্রতিবেসী যুবকের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে প্রায়ই তার বাড়িতে যাতায়াত করতো।

গত রোববার (১৭ আগস্ট) সকালে শামীম ওই যুবকের বাড়িতে গিয়ে তার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্ত্রীকে বাড়িতে একা পেয়ে ফুসলিয়ে ধর্ষণ করে। বাড়ির লোকজন জানতে পেরে শামীমকে মারপিট করে।

দুপুরে এনিয়ে গ্রামে শালিসের আয়োজন করা হয়। খবর দেয়া হয় নিয়ামতপুর উপজেলায় গৃহবধূর বাবার বাড়িতে। শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে শামীম ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করেছে বলে প্রমাণ হয়। নির্যাতিতা গৃহবধূ শামীমের শাস্তি দাবি করেন।

শালিসে মাতব্বরি করেন ওই এলাকার নেতা বলে পরিচিত ডাক্তার মোয়াজ্জেম হোসেন ও মাজেদ আলী। দীর্ঘ বৈঠক শেষে মাতব্বররা রায় দেন ধর্ষক শামীম এক লক্ষ ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিবে, আর নির্যাতিতা গৃহবধূকে তার স্বামী তালাক দিবে। শামীম জরিমানার টাকা নগদ প্রদান করে খালাস পান ধর্ষণের শাস্তি থেকে, আর দেনমোহর পরিশোধ না করেই গৃহবধূকে তালাক দেন তার স্বামী।

বিষয়টি জানতে ওই গ্রামে গেলে আবালবৃদ্ধবনিতা সকলেই স্বীকার করেন বিষয়টি। তারা ধর্ষকের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন। ধর্ষণের মত এক স্পর্শকাতর বিষয়ে কিভাবে শালিস হয় তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা।

অনেকে বলেন, নব্য নেতারা নিজেদের চরম ক্ষমতাধর ভাবে, যেন তারা সকল আইনের উর্ধে। ধর্ষণের মত ফৌজদারি অপরাধ অজামিনযোগ্য এবং অআপসযোগ্য হলেও তারা কিভাবে শালিস করলেন তা নিয়ে চলছে গুঞ্জন।

ধর্ষক শামীম হোসেনের বাড়িতে গেলে তিনি নিজে স্বীকার করেন এক লক্ষ ১০ হাজার টাকা জরিমানা দেবার কথা।

জানতে চাইলে মোবাইল ফোনে মাতব্বর মোয়াজ্জেম হোসেন বিষয়টি মিমাংসার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ছেলের পরিবার আর মেয়ের পরিবার উভয়েই তালাক চাওয়ায় তালাকের রায় দেয়া হয়েছে। জরিমানার টাকা মেয়েকে দেয়া হয়েছে।

মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহীন রেজা বলেন, বিষয়টি তাকে কেউ জানাননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিবেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সম্প্রতি এলাকায় এধরণের ঘটনা বেড়ে চলেছে। দোষীদের আইনের আওতায় না আনায় বাড়ছে অপরাধ প্রবনতা।