মহাদেবপুরে টিসিবিতে দু’হাজার মানুষের কাছে খাবার অনুপযোগী চাল বিক্রি

- Update Time : ০১:১৭:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫
- / ৬৩ Time View
নওগাঁর মহাদেবপুরে সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে সরররাহ করা চাল বদলে টিসিবির পয়েন্টে মানুষের খাবার অনুপযোগী মোটা দানার নিম্নমানের লাল তামরি চাল বিক্রি করা হচ্ছে। কম দামে পাওয়ায় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ এই খারাপ চালই টিসিবি থেকে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। বিষয়টি জানার পরও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন টিসিবির ডিলারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিমাসে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির জন্য বরাদ্দকরা চাল সরকারের নিয়োগ করা ওএমএস (ওপেন মারকেট সেল) ডিলার সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে উত্তোলন করে বিভিন্ন ইউনিয়নে টিসিবির ডিলারদের কাছে সরবরাহ করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাতাজী রোডে টিসিবির পয়েন্টে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। সেখানে টিসিবির কার্ডধারীরা লাইনে দাঁড়িয়ে মালামাল কিনছিলেন। পয়েন্টের একজন কর্মচারি জানালেন, প্রত্যেক কার্ডধারীর কাছে সরকার নির্ধারিত ভর্তুকিমূল্যে ৫ কেজি করে চাল, এক কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি ও দুই লিটার করে ব্রান অয়েল বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু যে চাল বিক্রি করা হচ্ছে তা লালটি রঙের এবং মাঝে মাঝে কালো আখির ও মরা চাল। কম দামের মোটা চাল নষ্ট হয়ে খাবার অনুপযোগী হয়ে পড়লে স্থানীয়রা এটাকে তামরি চাল বলেন। সবাই বলছেন, এ চালের ভাত খাওয়া যায়না। বাজারে এরকম চাল মাছের খাবার হিসেবে বিক্রি হয়। কার্ডধারীরা এখান থেকে চাল কিনে পাশের দোকানেই বিক্রি করে দিচ্ছেন। টিসিবির এই পয়েন্টে দুবছর আগে বন্ধ হওয়া মহাদেবপুরের আখেড়া ওসমান এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের বস্তায় প্যাক করা চাল পাওয়া যায়। এছাড়া বস্তাগুলোতে ফ্যাসিবাদ আমলের ‘‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ” শ্লোগান ছাপা আছে। ছাত্রজনতার আন্দোলনের এক বছর পার হলেও এখনও এই ডিলার বিতর্কীত শ্লোগান সম্বলিত চালের বস্তা কিভাবে প্রদর্শন করছেন তা নিয়ে জনমনে ক্ষেভের সঞ্চার হয়েছে। তারা বলছেন, ভাল চাল বদল করে খারাপ চাল বিতরণ করে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে। এসব চাল মানুষের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
টিসিবির এই ডিলারের নাম বাবুল চন্দ্র বাবু ঘোষ। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সাবেক এমপি ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিমের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে এই ডিলারশীপ পান। ৫ আগস্টের পর তাঁকে জনসম্মুখে দেখা যায়নি। কিন্তু তার ডিলারশীপ ঠিকই আছে। তার কর্মচারিরা এই টিসিবির কাজ চালান। জানতে চাইলে মোবাইলফোনে বাবু ঘোষ জানান, ওএমএস ডিলারের কাছ থেকে যে চাল পেয়েছেন, তিনি সেগুলোই বিক্রি করছেন। গত ১৬ আগস্ট উপজেলা ওএমএস এর ডিলার তার কাছে আগস্ট মাসের জন্য দুই হাজার ২৫৯ জনের টিসিবির কার্ডের চাল সরবরাহ করেন। চাল বুঝে নেয়ার সময় খারাপ চাল দেখে, তিনি তা ফেরৎ না দিয়ে কেন গ্রহণ করেছেন তার কোন সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।
জানতে চাইলে উপজেলা ওএমএস ডিলার মহাদেবপুর শিবগঞ্জ মোড়ের রাজিয়া অটোমেটিক রাইস মিলের মালিক জাহাঙ্গীর আলম শাহীন জানান, তিনি গত ১৫ আগস্ট মহাদেবপুর সদর খাদ্যগুদাম থেকে ২৬ মেট্রিক টন চাল উত্তোলন করেন। এগুলো সদর, সফাপুর ও ভীমপুর ইউনিয়নের টিসিবির ডিলারের কাছে পৌঁছে দেন। তিনি কোন খারাপ চাল সরবরাহ করেননি। মহাদেবপুর সদর ছাড়া অন্য কোথাও খারাপ চাল বের হয়নি।
এখান থেকে সফাপুর গিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে টিসিবির পণ্য বিক্রি করতে দেখা যায়। সেখানে ভাল চালই বিক্রি করা হচ্ছিল।
বিষয়টি জানতে মহাদেবপুর সদর সরকারি খাদ্যগুদামে গেলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম একটি সিলগালা করা চালের প্যাকেট দেখিয়ে বলেন, ওএমএস ডিলারের কাছে এইরকম ভাল চাল সরবরাহ করা হয়েছে। টিসিবির ডিলার খারাপ চাল বিক্রি করলে তা সরকারি গুদাম থেকে সরবরাহ করা নয়। দুবছর আগে বন্ধ হওয়া ওসমান এগ্রোর বস্তাও তাদের সরবরাহ করা নয় এবং আগের শ্লোগান লেখা কোন বস্তা তারা সরবরাহ করেননি বলেও জানান।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আশরাফুল আরেফিন বলেন, চাল বিক্রি হবার পর তাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। একারণে তিনি টিসিবি ডিলারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেননি।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়