মনোনয়ন পেতে সোনা মিয়াকে হত্যা, লেনদেন ৫ লাখ টাকা

- Update Time : ১১:৫৫:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই ২০২৩
- / ১৫৫ Time View
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছে আলোচিত সোনা মিয়া হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা জড়িত বলে দাবি করেছেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক।
তার দাবি, রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে বিতর্কিত করে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। এর জন্য মনোনয়ন প্রত্যাশী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম মায়া ও বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিবুল হাসান পলাশ ভাড়াটে খুনিদের ৫ লক্ষ টাকা প্রদান করে।
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুর রাজ্জাক।
সোনা মিয়া আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন না দাবি করে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সোনা মিয়া আওয়ামী লীগের কর্মী না হলেও আমার এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত প্রকৃত আসামিদের সুষ্ঠু বিচার চাই। এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত পূর্বক প্রকৃত হত্যাকারীদের চিন্থিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সেই সাথে আমাদের নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। কাউনিয়া উপজেলার ৭৬ জনকে আসামি করার উদ্দেশ্য ছিল সংগঠনকে দুর্বল করে বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা। কারণ বর্তমান সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম মায়া এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও আগে তিনি অন্যদলের সঙ্গে ছিলেন। একারণে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি তার টান নেই।
মামলার ভুক্তভোগী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্যকে বিতর্কিত করে মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে পরিকল্পিতভাবে সোনা মিয়াকে হত্যা করা হয়েছে। রাজনৈতিক ও ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য কাউনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম মায়া নিজ দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিতে সহায়তা করেন।
তিনি আরও বলেন, বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের দুর্দিনে আমরা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হয়ে যারা নেতৃত্ব দিয়ে দলকে সুসংগঠিত করে এসেছি। আজ ক্ষমতার মোহে সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেতেই উপজেলার সভাপতি তাদেরকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ফাঁসিয়েছে। এই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম মায়া উপজেলার এক বিএনপি নেতার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার জন্য পাঁচ লাখ টাকা প্রদান করেন।
এরআগে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, কাউনিয়ার বঞ্চিত, অবহেলিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পক্ষে ৯০ দশকের ছাত্রলীগ নেতা আশরাফুল আলম। এসময় তিনি অবিলম্বে ষড়যন্ত্রমূলক সোনা মিয়া হত্যাকাণ্ডে দায়ের করা মামলা থেকে নিরাপরাধ আসামিদের অব্যাহতি দেয়ার দাবি জানান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, কাউনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম সেলিম, ৩ নং কুর্শা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ, ২ নং হারাগাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজু আহমেদ, ৬ নং টেপামধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম, উপজেলার আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক আবু ফেরদৌস হীরা প্রমুখ
এদিকে সোনা মিয়া হত্যাকাণ্ড নিয়ে তোলা অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কাউনিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মায়ার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। একটি সূত্র জানিয়েছে, আনোয়ারুল ইসলাম মায়া বর্তমানে বাংলাদেশের বাহিরে অবস্থান করছেন।
উল্লেখ্য, উল্লেখ্য, গত ২৪ এপ্রিল বিকেলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম মায়ার নামে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা স্লোগান দেয়। এ সময় অনুষ্ঠানে স্লোগান দেওয়া নেতা-কর্মীদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ও তার সমর্থকরা মারপিট করেন বলে অভিযোগ উঠে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওইদিন রাত আটটার দিকে আওয়ামী লীগ কর্মী সোনা মিয়া হত্যার ঘটনা ঘটে। নিহত সোনা মিয়া উপজেলার হারাগাছের নাজিরদহ এলাকার মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে। তিনি হারাগাছ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য বলে তার বড় ভাই দাবি করেন।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত ২৬ এপ্রিল দুপুরে সোনা মিয়ার ছেলে আখতারুজ্জামান বাদী হয়ে ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুর রাজ্জাক ও তার ভাই হারাগাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজু আহমেদসহ ৭৪ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫-২০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সম্প্রতি ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকসহ অন্য আসামিরা জামিনে মুক্ত হন।