মননের মহোৎসব : বিশ্ব মেডিটেশন দিবসে হাজার কণ্ঠের নীরব প্রার্থনা
- Update Time : ১১:২৯:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
- / ৩৩ Time View
মানুষের অন্তর্জগতের প্রশান্তি আর মানবিক সুস্বাস্থ্যের সার্বজনীন অধিকারকে স্মরণ করিয়ে দিতে জাতিসংঘ ঘোষিত ‘বিশ্ব মেডিটেশন দিবস’ পালিত হলো ২১ ডিসেম্বর রবিবার। এ উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশজুড়ে অনুষ্ঠিত হলো ব্যতিক্রমী এক মানসিক অনুশীলনের মহাযজ্ঞ যেখানে শব্দের চেয়ে নীরবতাই হয়ে ওঠে শক্তিশালী ভাষা।
মেডিটেশন চর্চাকারী সঙ্গে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে আয়োজিত বিশেষ মেডিটেশন কর্মসূচিতে অংশ নেন হাজারো ধ্যানী। একই সময়ে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে একযোগে অনুষ্ঠিত হয় এই সম্মিলিত ধ্যানানুশীলন। আয়োজনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘মন ভালো তো সব ভালো’।
অনুষ্ঠানে মেডিটেশন চর্চার অনুভূতি বর্ণনা করেন বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব ও এনবিআর-এর সাবেক চেয়ারম্যান সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এসডিএফ-এর চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের কার্যকরী কমিটির সদস্য কাজী রওনাক হোসেন, ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার বিজেসি-র সভাপতি ও মাছরাঙা টেলিভিশনের হেড অব নিউজ রেজওয়ানুল হক রাজা, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম মহসীন এবং স্কলাস্টিকা স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ড. শাহিদা রহমান।

মেডিটেশন চর্চায় জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতিসংঘ ২০২৪ সালে ২১ ডিসেম্বরকে ঘোষণা করে বিশ্ব মেডিটেশন দিবস হিসেবে। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিশ্ববাসীর কাছে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা কোনো বিলাসিতা নয়, বরং মানবিক অধিকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও বৈজ্ঞানিক গবেষণার আলোকে মেডিটেশনকে স্বীকৃতি দিয়েছে ‘নিজের যত্ন নিজে নেওয়ার কার্যকর পদ্ধতি’ হিসেবে, বিশেষত স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টে।
মেডিটেশন কোনো আধুনিক ধারণা নয়। এটি হাজার বছরের পুরোনো এক মননচর্চা; যা মনকে স্থির করে, চেতনাকে প্রশান্ত করে এবং দেহকে রাখে সুস্থ। নিয়মিত মেডিটেশন অনুশীলনে স্নায়বিক উত্তেজনা কমে, মানসিক চাপ হ্রাস পায়, বাড়ে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। ফলে কমে যায় মনোদৈহিক নানা রোগের ঝুঁকি। মনের সুস্থতার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে জীবনের প্রতিটি স্তরে। শিক্ষার্থীদের বাড়ে মনোযোগ ও আত্মবিশ্বাস, কমে পরীক্ষাভীতি।
চাকরিজীবীদের বৃদ্ধি পায় পেশাগত নিষ্ঠা ও কর্মদক্ষতা। ব্যবসায়ীরা অর্জন করেন সংকট মোকাবিলার মানসিক দৃঢ়তা। গৃহিণীদের মধ্যে বিকশিত হয় ধৈর্য ও মমতা যা সুস্থ পরিবার ও সঠিক প্যারেন্টিংয়ের মূল ভিত্তি। এ কারণেই আধুনিক কাউন্সেলিংয়ে মেডিটেশন এখন এক অপরিহার্য অনুশীলন।
বাংলাদেশে গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে মেডিটেশন চর্চাকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। সংগঠনটির হাজারো সদস্য ও শুভানুধ্যায়ী নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেদের জীবনকে যেমন করেছে ইতিবাচক, তেমনি যুক্ত হয়েছে নানা সামাজিক ও মানবিক কার্যক্রমে।
বিশ্ব মেডিটেশন দিবসকে কেন্দ্র করে আজকের এই সম্মিলিত ধ্যানানুশীলন কেবল একটি অনুষ্ঠান নয় এ যেন মননের এক নীরব আন্দোলন। প্রত্যাশা, এই উপলক্ষ্যে আরও মানুষ যুক্ত হবেন আত্মপ্রশান্তির অভিযাত্রায়, গড়ে উঠবে সহমর্মিতা ও মানবিকতায় পূর্ণ এক সুস্থ সমাজ।




























































































































































































