ভ্যাট কমিশনার জাকিরের খুঁটির জোড় কোথায়

- Update Time : ১২:২৬:২৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫
- / ২০ Time View
ঢাকার কাস্টমস কমিশনার মুহম্মদ জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে অভিযোগ ঢাকতে ঘুষ দিয়ে আরেকটি অন্যায়ের পথ বেছে নিয়েছেন এই কাস্টমস কমিশনার। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতার রাজত্ব কায়েম করেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই কানাঘুষা চলছে জাকিরের খুটির জোড় কোথায়!
জানা গেছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ২১ ব্যাচের এই কর্মকর্তা আওয়ামী লীগ সরকারের আস্থাভাজন সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তার আশীর্বাদে দায়িত্ব পেয়েছিলেন ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের। ওই প্রকল্পে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তা ধামাচাপা দেয়া হয়। তাছাড়া ওই প্রকল্পে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ব্যয় নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ওই প্রকল্পে কাজের মধ্য দিয়ে তিনি ‘ভ্যাট জাকির’ হিসেবে পরিচিত পান।
সম্প্রতি ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠান নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে দুদক। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজ পাইয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক মুহম্মদ জাকির হোসেনের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখছে তদন্তকারী সংস্থা।
অভিযোগ রয়েছে, ওই প্রকল্পের জন্য শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) কার্যাদেশ প্রদান করা হয় মুহম্মদ জাকির হোসেনের শ্যালকের নামে। তার শ্যালক ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দামের মিডিয়া ব্র্যান্ডের এসি সরবরাহ করে; যার প্রকৃত বাজারমূল্য এর অর্ধেকের কম।
তাছাড়া ঢাকার মহাখালী ডিওএইচএসে অবস্থিত ধ্রুপদী টেকনো কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের দায়িত্ব দেয়া হয়। এ প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দেয়ার ক্ষেত্রে জাকির হোসেন প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি এ ধরনের একটি লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে। গত ৮ জানুয়ারি দুদকে জমা দেয়া ওই অভিযোগে বলা হয়, মুহাম্মদ জাকির হোসেন বিদেশ ট্যুরের নামে সিনিয়রদের প্রমোদ ভ্রমণে সরকারী লোনের টাকা খরচ করে অনিয়ম ও ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করেছেন। অবৈধ টাকা সাদা করার জন্য লেখক হিসেবে নাম লিখিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাকির হোসেনের লেখা ‘বাংলাদেশের নতুন ভ্যাট’ শিরোনামের একটি বই রয়েছে। যার মূল্য ১ হাজার ৭৫০ টাকা। রকমারিতে বইটি ১ হাজার ৫০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব¡াধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৩১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট থেকে বদলি হয়ে ঢাকায় আসেন মুহম্মদ জাকির হোসেন।
অভিযোগে বলা হয়, বেনাপোল কাস্টম হাউসে ফেব্রিক্স চালানের জালিয়াতি হতে শুরু করে চট্টগ্রাম ভ্যাটে অডিট প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্তিতে ভয় দেখানো সবই করেছেন এই কাস্টমস কমিশনার। মুহাম্মদ জাকির হোসেনের স্ত্রীর নামে একাধিক বন্ড প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। যশোর ভ্যাট কমিশনার থাকাকালে তার স্ত্রীর স্বর্ণবারসহ চোরাচালানে গোয়েন্দা সংস্থার হাতে ঢাকা বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ আগমন হলে আটক হন বলেও জানা যায়।
তাছাড়া মুহাম্মদ জাকির হোসেন বনানী ক্লাবের মতো অভিজাত ক্লাবে ক্ষমতা প্রয়োগ করে ২০২২ সালে সদস্য হয়েছেন। পারটেক্স গ্রুপের ভ্যাট নথিতে সুবিধার বিনিময়ে সদস্য পদ দিতে বাধ্য হয় বনানী ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগ রয়েছে, ২০২২ সালে বনানী ক্লাবের সদস্যপদ নেয়ার ৩০ লাখ টাকা ২০২৩-২৪ করবর্ষে প্রদর্শন করেননি মুহাম্মদ জাকির হোসেন। বনানী ক্লাবের স্থায়ী সদস্য হিসেবে তিনি প্রতি মাসে নিয়মিত চাঁদা দেন।
এ ধরনের অভিযোগ পাওয়ায় সম্প্রতি দুদকে তলব করা হয় জাকির হোসেনকে। গত ২২ মে তিনি দুদকে যান। তবে এর পর আর তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে জাকির হোসেনের মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। পরবর্তী সময়ে হোয়াটস অ্যাপে বার্তা পাঠিয়েও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।