ঢাকা ০৪:০৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০১ জানুয়ারী ২০২৬, ১৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রয়টার্সকে জামায়াত আমির

ভারতীয় ওই কর্মকর্তা বৈঠক গোপন রাখতে বলেছিলেন, কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০২:৩২:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ জানুয়ারী ২০২৬
  • / ১০ Time View

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান গত বছরের শুরুর দিকে ভারতীয় কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। গতকাল বাসভবনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জামায়াত আমির ওই বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বৈঠকটি হয়েছিল তাঁর বাইপাস সার্জারির পর।

জামায়াতের আমির রয়টার্সকে বলেন, অন্যান্য দেশের কূটনীতিকেরা যেমন প্রকাশ্যে আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন, ভারতীয় কূটনীতিক তেমনটি করেননি। ভারতীয় ওই কর্মকর্তা বৈঠকটি গোপন রাখতে বলেছিলেন। ‘কেন? অনেক কূটনীতিক আমার কাছে এসেছিলেন এবং তা প্রকাশ করা হয়েছিল। সমস্যা কোথায়?,’ বলেন শফিকুর রহমান। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সবার কাছে এবং একে অন্যের কাছে উন্মুক্ত হতে হবে। আমাদের সম্পর্কোন্নয়ন ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।’

জামায়াত আমিরের এই বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চেয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাৎক্ষণিক সাড়া পায়নি রয়টার্স। তবে ভারত সরকারের একটি সূত্র বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

শফিকুর রহমানের কাছে পাকিস্তানের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর ঐতিহাসিক ঘনিষ্ঠতা নিয়ে জানতে চেয়েছিল রয়টার্স। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সবার সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখি। আমরা কোনো একটি দেশের দিকে ঝুঁকে পড়ার বিষয়ে আগ্রহী নই।’

জামায়াতের আমির রয়টার্সকে আরও বলেন, ঢাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান উদ্বেগের বিষয়। এরপর দুই দেশের সম্পর্ক কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামী আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে শক্তি দেখাতে যাচ্ছে। দলটি ঐক্যের সরকারে যোগ দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহী। এ বিষয়ে কয়েকটি দলের সঙ্গে কথা বলেছে বলে দলটির প্রধান জানিয়েছেন।

জনমত জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ১৭ বছর পর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) পর দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে। সেখানে ব্যবধান থাকবে কম। জামায়াত সর্বশেষ ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল মেয়াদে বিএনপির জোটসঙ্গী হিসেবে ক্ষমতার অংশীদার ছিল।

জাতীয় নাগারিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে নির্বাচনী জোট করার কয়েক দিন পর দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে ঐক্যের সরকার বিষয়ে জামায়াত আমির রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা অন্তত পাঁচ বছর দেশকে স্থিতিশীল দেখতে চাই। দলগুলো যদি এক জায়গায় আসে, তাহলে আমরা একসঙ্গে সরকার পরিচালনা করব।’

রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জামায়াতের আমির বলেন, ঐক্যের সরকারের জন্য দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান অভিন্ন এজেন্ডা হবে। তিনি আরও বলেন, যে দল সবচেয়ে বেশি আসন পাবে, সেই দল থেকে প্রধানমন্ত্রী হবেন। যদি জামায়াত সবচেয়ে বেশি আসন পায়, তাহলে তিনি প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেবে দল। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামীর এই উত্থান হয়েছে ২০২৪ সালের আগস্টে অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর। আওয়ামী লীগ এবার নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না।

সাক্ষাৎকারে জামায়াতের আমির বলেন, জামায়াতকে নিয়ে গঠিত সরকার রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে ‘স্বস্তি বোধ’ করবে না। ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগের সমর্থনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। চলতি মাসের শুরুর দিকে মোঃ সাহাবুদ্দিন রয়টার্সকে বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর মেয়াদের মধ্যভাগে তিনি পদত্যাগ করতে চান।
অবশ্য বুধবার রয়টার্সের সঙ্গে টেলিফোন কথোপকথনে জামায়াতের আমিরের অবস্থানের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টিকে আর জটিল’ করতে চান না।

Please Share This Post in Your Social Media

রয়টার্সকে জামায়াত আমির

ভারতীয় ওই কর্মকর্তা বৈঠক গোপন রাখতে বলেছিলেন, কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update Time : ০২:৩২:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ জানুয়ারী ২০২৬

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান গত বছরের শুরুর দিকে ভারতীয় কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। গতকাল বাসভবনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জামায়াত আমির ওই বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বৈঠকটি হয়েছিল তাঁর বাইপাস সার্জারির পর।

জামায়াতের আমির রয়টার্সকে বলেন, অন্যান্য দেশের কূটনীতিকেরা যেমন প্রকাশ্যে আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন, ভারতীয় কূটনীতিক তেমনটি করেননি। ভারতীয় ওই কর্মকর্তা বৈঠকটি গোপন রাখতে বলেছিলেন। ‘কেন? অনেক কূটনীতিক আমার কাছে এসেছিলেন এবং তা প্রকাশ করা হয়েছিল। সমস্যা কোথায়?,’ বলেন শফিকুর রহমান। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সবার কাছে এবং একে অন্যের কাছে উন্মুক্ত হতে হবে। আমাদের সম্পর্কোন্নয়ন ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।’

জামায়াত আমিরের এই বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চেয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাৎক্ষণিক সাড়া পায়নি রয়টার্স। তবে ভারত সরকারের একটি সূত্র বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

শফিকুর রহমানের কাছে পাকিস্তানের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর ঐতিহাসিক ঘনিষ্ঠতা নিয়ে জানতে চেয়েছিল রয়টার্স। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সবার সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখি। আমরা কোনো একটি দেশের দিকে ঝুঁকে পড়ার বিষয়ে আগ্রহী নই।’

জামায়াতের আমির রয়টার্সকে আরও বলেন, ঢাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান উদ্বেগের বিষয়। এরপর দুই দেশের সম্পর্ক কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামী আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে শক্তি দেখাতে যাচ্ছে। দলটি ঐক্যের সরকারে যোগ দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহী। এ বিষয়ে কয়েকটি দলের সঙ্গে কথা বলেছে বলে দলটির প্রধান জানিয়েছেন।

জনমত জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ১৭ বছর পর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) পর দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে। সেখানে ব্যবধান থাকবে কম। জামায়াত সর্বশেষ ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল মেয়াদে বিএনপির জোটসঙ্গী হিসেবে ক্ষমতার অংশীদার ছিল।

জাতীয় নাগারিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে নির্বাচনী জোট করার কয়েক দিন পর দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে ঐক্যের সরকার বিষয়ে জামায়াত আমির রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা অন্তত পাঁচ বছর দেশকে স্থিতিশীল দেখতে চাই। দলগুলো যদি এক জায়গায় আসে, তাহলে আমরা একসঙ্গে সরকার পরিচালনা করব।’

রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জামায়াতের আমির বলেন, ঐক্যের সরকারের জন্য দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান অভিন্ন এজেন্ডা হবে। তিনি আরও বলেন, যে দল সবচেয়ে বেশি আসন পাবে, সেই দল থেকে প্রধানমন্ত্রী হবেন। যদি জামায়াত সবচেয়ে বেশি আসন পায়, তাহলে তিনি প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেবে দল। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামীর এই উত্থান হয়েছে ২০২৪ সালের আগস্টে অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর। আওয়ামী লীগ এবার নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না।

সাক্ষাৎকারে জামায়াতের আমির বলেন, জামায়াতকে নিয়ে গঠিত সরকার রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে ‘স্বস্তি বোধ’ করবে না। ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগের সমর্থনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। চলতি মাসের শুরুর দিকে মোঃ সাহাবুদ্দিন রয়টার্সকে বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর মেয়াদের মধ্যভাগে তিনি পদত্যাগ করতে চান।
অবশ্য বুধবার রয়টার্সের সঙ্গে টেলিফোন কথোপকথনে জামায়াতের আমিরের অবস্থানের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টিকে আর জটিল’ করতে চান না।