ঢাকা ০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
“ভাই, সুমাইয়াকে মাইরা ফালাইছি” পথশিশুকে ধর্ষণচেষ্টায় অভিযুক্ত গ্রেফতার কুবি ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র ডাউনলোড প্রক্রিয়া শুরু হত্যা চেষ্টা মামলায় আওয়ামী লীগ নেত্রীর নাম কাটতে এসে গ্রেফতার ব্যবসায়ী বাজেট বরাদ্দে জবি পূর্বের তুলনায় অগ্রাধিকার পাবে – ইউজিসি চেয়ারম্যান রোহিঙ্গাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব করবে জাতিসংঘ জাতীয় পরিচয় পত্রের কার্যক্রম সিভিল রেজিস্ট্রেশন কমিশনে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবীতে মানববন্ধন রমেকের ডাক্তার মাহাবুবকে চান ‘না’ সহকর্মীরা, অন্যত্র বদলির দাবি  চায়ের দোকানের আঁড়ালে মদের ব্যবসা, গ্রেফতার ২ কুবির সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে উত্তরসহ প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ

“ভাই, সুমাইয়াকে মাইরা ফালাইছি”

ইকবাল হোসাইন, উখিয়া প্রতিনিধি
  • Update Time : ১০:৩৯:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
  • / ১১ Time View

‘ভাই, আমি সুমাইয়াকে মাইরা ফালাইছি, আমি আর বাঁচমু না, আমি আত্মহত্যা করুম’— ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিল রমজান আলী।

ও-পাশ থেকে প্রবাসী সম্বন্ধী হতভম্ব হয়ে শুনছেন, কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। তবে শনিবার সকালেই এ ঘটনার সত্যতা মিলেছে।

শনিবার সকালে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের পূর্ব জামালপাড়ার নিজ ঘর থেকে মরদেহটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই স্বামী পলাতক ছিল, তবে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মহেশখালী থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতারও করেছে।

নিহত পানিরছড়া এলাকার হারুন রশিদের মেয়ে সুমাইয়া। যার সঙ্গে পূর্ব জামালপাড়ার রাজমিস্ত্রি শ্রমিক রমজান আলীর বিয়ে হয় কয়েক বছর আগেই। তাদের সংসারে রয়েছে দুই সন্তান।

মহেশখালী থানার ওসি কাইছার হামিদ জানিয়েছেন, সবকিছুই স্বাভাবিক ছিল। ঘরের বাইরে উঠোনে খেলছিল তার দুই বছরের শিশুকন্যা। পাশের নূরানী মাদ্রাসা থেকে ফিরে এসেছিল সাত বছরের ছোট  সন্তান সাইফুল ইসলাম। ঘরে ফিরে ভাত চাইতে গিয়ে কোনো সাড়া না পেয়ে ঘরে ঢুকতেই তার চিৎকারে এগিয়ে আসেন প্রতিবেশিরা। দেখেন সুমাইয়ার নিথর দেহ পড়ে আছে থাটে।

নিহত সুমাইয়ার দাদা মোহাম্মদ ছৈয়দ কবির জানান, তিন বছর আগে পানিরছড়া এলাকার হারুন রশিদের মেয়ে সুমাইয়ার সঙ্গে পূর্ব জামালপাড়ার রাজমিস্ত্রি শ্রমিক রমজান আলীর বিয়ে হয়। তবে বিয়ের পর থেকেই তাদের সংসারে অশান্তি লেগেই ছিল। স্বামী রমজান মেজাজি ও সন্দেহপ্রবণ ছিল। সামান্য কারণেই সুমাইয়াকে মারধর করত। পারিবারিক কলহ দিন দিন বাড়তে থাকে। কয়েকবার সালিশ বৈঠকও হয়, কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। শুক্রবার ভোররাতে সেই দীর্ঘ নির্যাতনের চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে।

স্ত্রীকে হত্যার পর রমজান আলী ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। ফোনও বন্ধ করে দেয়। খবর পেয়ে মহেশখালী থানার ওসি মোহাম্মদ কাইছার হামিদের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। লাশের গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হয়, এটি পরিকল্পিত হত্যা। এরপরই শুরু হয় পুলিশি অভিযান। বিভিন্ন স্থানে খোঁজ চালিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্বামীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

রমজান পালানোর সময় তার প্রবাসী সম্বন্ধীকে ফোন করে হত্যার দায় স্বীকার করে। প্রতিবেদকের হাতে থাকা সেই রেকর্ডে শোনা যায়, রমজান বলছে— ‘ও খালি ঝগড়া করত, আমারে শান্তি দিত না। আমি মাথা গরম কইরা মাইরা ফালাইছি… এখন আমি কী করমু?’ এক পর্যায়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিজের আত্মহত্যার কথাও জানায় সে।

ওসি কাইছার হামিদ বলেন, হোয়ানকে চাঞ্চল্যকর গৃহবধু হত্যার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। লাশের গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর আসল কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। গ্রেফতার রমজান আলীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

“ভাই, সুমাইয়াকে মাইরা ফালাইছি”

ইকবাল হোসাইন, উখিয়া প্রতিনিধি
Update Time : ১০:৩৯:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

‘ভাই, আমি সুমাইয়াকে মাইরা ফালাইছি, আমি আর বাঁচমু না, আমি আত্মহত্যা করুম’— ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিল রমজান আলী।

ও-পাশ থেকে প্রবাসী সম্বন্ধী হতভম্ব হয়ে শুনছেন, কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। তবে শনিবার সকালেই এ ঘটনার সত্যতা মিলেছে।

শনিবার সকালে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের পূর্ব জামালপাড়ার নিজ ঘর থেকে মরদেহটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই স্বামী পলাতক ছিল, তবে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মহেশখালী থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতারও করেছে।

নিহত পানিরছড়া এলাকার হারুন রশিদের মেয়ে সুমাইয়া। যার সঙ্গে পূর্ব জামালপাড়ার রাজমিস্ত্রি শ্রমিক রমজান আলীর বিয়ে হয় কয়েক বছর আগেই। তাদের সংসারে রয়েছে দুই সন্তান।

মহেশখালী থানার ওসি কাইছার হামিদ জানিয়েছেন, সবকিছুই স্বাভাবিক ছিল। ঘরের বাইরে উঠোনে খেলছিল তার দুই বছরের শিশুকন্যা। পাশের নূরানী মাদ্রাসা থেকে ফিরে এসেছিল সাত বছরের ছোট  সন্তান সাইফুল ইসলাম। ঘরে ফিরে ভাত চাইতে গিয়ে কোনো সাড়া না পেয়ে ঘরে ঢুকতেই তার চিৎকারে এগিয়ে আসেন প্রতিবেশিরা। দেখেন সুমাইয়ার নিথর দেহ পড়ে আছে থাটে।

নিহত সুমাইয়ার দাদা মোহাম্মদ ছৈয়দ কবির জানান, তিন বছর আগে পানিরছড়া এলাকার হারুন রশিদের মেয়ে সুমাইয়ার সঙ্গে পূর্ব জামালপাড়ার রাজমিস্ত্রি শ্রমিক রমজান আলীর বিয়ে হয়। তবে বিয়ের পর থেকেই তাদের সংসারে অশান্তি লেগেই ছিল। স্বামী রমজান মেজাজি ও সন্দেহপ্রবণ ছিল। সামান্য কারণেই সুমাইয়াকে মারধর করত। পারিবারিক কলহ দিন দিন বাড়তে থাকে। কয়েকবার সালিশ বৈঠকও হয়, কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। শুক্রবার ভোররাতে সেই দীর্ঘ নির্যাতনের চূড়ান্ত পরিণতি ঘটে।

স্ত্রীকে হত্যার পর রমজান আলী ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। ফোনও বন্ধ করে দেয়। খবর পেয়ে মহেশখালী থানার ওসি মোহাম্মদ কাইছার হামিদের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। লাশের গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হয়, এটি পরিকল্পিত হত্যা। এরপরই শুরু হয় পুলিশি অভিযান। বিভিন্ন স্থানে খোঁজ চালিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্বামীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

রমজান পালানোর সময় তার প্রবাসী সম্বন্ধীকে ফোন করে হত্যার দায় স্বীকার করে। প্রতিবেদকের হাতে থাকা সেই রেকর্ডে শোনা যায়, রমজান বলছে— ‘ও খালি ঝগড়া করত, আমারে শান্তি দিত না। আমি মাথা গরম কইরা মাইরা ফালাইছি… এখন আমি কী করমু?’ এক পর্যায়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিজের আত্মহত্যার কথাও জানায় সে।

ওসি কাইছার হামিদ বলেন, হোয়ানকে চাঞ্চল্যকর গৃহবধু হত্যার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। লাশের গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর আসল কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। গ্রেফতার রমজান আলীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।