ঢাকা ০৭:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ২০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পিতা হত্যার দায় স্বীকার করে ছেলের জবানবন্দী

আঃ হান্নান, ব্রাহ্মণবড়িয়া প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৮:৫৩:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ৫০৭৮ Time View

ব্রাহ্মণবড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক গ্রামের মুন্সীপাড়ার আলোচিত হাজী আলম মিয়া-(৬০) হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

গত বুধবার রাতে নিহতের পুত্র ও মামলার বাদি মোঃ মাহমুদুল হাসানকে-(২১) গ্রেপ্তারের পর হত্যাকান্ডের রহস্য উম্মোচন হয়।

পিবিআই এর সদস্যরা গ্রেপ্তারকৃত মাহমুদুল হাসানের দেয়া তথ্য মতে আজ বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ির সামনের পুকুর থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত লোহার পাইপটি উদ্ধার করে। দুপুরে গ্রেপ্তারকৃত মাহমুদুল হাসানকে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জহিরুল আলমের আদালতে হাজির করা হলে মাহমুদুল হাসান তার পিতা আলম মিয়াকে হত্যার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলেক জবানবন্দি প্রদান করেন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে পিবিআই, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কার্যালয় থেকে পাঠানো এই তথ্য  থেকে জানা গেছে।

এতে বলা হয়, গত ৩ সেপ্টেম্বর উপজেলার ফান্দাউক ইউনিয়নের মুন্সি পাড়ার নিজ ঘর থেকে আলম মিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত আলম মিয়া মুন্সি পাড়ার ওয়াহেদ আলীর ছেলে ও ফান্দাউক বাজারের ব্যবসায়ী।

এ ঘটনায় নিহতের ছেলে মাহমুদুল হাসান বাদি হয়ে নাসিরনগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলা নং-০৫, তারিখঃ ০৬/০৯/২০২৫।

মামলার এজাহারে বাদী মাহমুদুল হাসান দাবি করেন, অজ্ঞাতনামা আসামীরা তার বাড়ির টিনের চালা কেটে এবং পেছনের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। তারা তার বাবা হাজী আলম মিয়াকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে। পরে হত্যাকারীরা ঘর থেকে প্রায় আড়াই লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার চুরি করে নিয়ে যায়। এজাহারে তিনি তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী আমেনা এবং তার পূর্বের স্বামী মমিনকে হত্যাকাণ্ডের জন্য সন্দেহ করেন।

এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন যে, ঘটনার সময় তিনি সিলেটে ছিলেন এবং তার বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরে আসেন।

মামলাটির গুরুত্ব বিবেচনা করে পিবিআই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার শচীন চাকমার তত্ত্বাবধানে পুলিশ পরিদর্শক মোঃ বেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে ছায়া তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। সরেজমিনে প্রাপ্ত হত্যাকাণ্ডের সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতীয়মান হয় যে, এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

এজাহারে উল্লিখিত আমেনা ও মমিনকে সন্দেহভাজন হিসেবে উল্লেখ করা হলেও, সমস্ত তথ্য, যেমন-সম্পত্তির লোভ, হত্যাকাণ্ডের আগের দিন মাহমুদুল হাসানের অস্বাভাবিক গতিবিধি, মোবাইল চুরির ঘটনা গোপন করা এবং সাজানো চুরির গল্প এই সবকিছুই আসামী মাহমুদুল হাসানের দিকে সন্দেহ ঘণীভূত করে। পরে পিবিআই গত বুধবার রাত সাড়ে ৭টায় মাহমুদুল হাসানকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে তার পিতাকে হত্যার দায় স্বীকার করে। পুলিশের কাছে মাহমুদুল হাসানের দেয়া জবানবন্দি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর তার মা মারা যান। তার বাবা তার মায়ের সুচিকিৎসা করে নাই এবং  তার মা জীবিত থাকাবস্থায় তার বাবা পুনরায় বিয়ে করতে চেয়েছিল। তার মা মারা যাওয়ার পর তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তার বাবা তার সৎ মাকে সম্পত্তি দেয়ার চিন্তা করায় সে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তার বাবাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী মাহমুদুল হাসান সিলেট যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয় এবং বাড়ির পেছনের দরজা খোলা রাখেন। পরে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করে রাত আনুমানিক ৮টার দিকে খোলা পিছনের দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করেন এবং মাচার ওপর লুকিয়ে থাকে। পরে তিনি সুকৌশলে তার বাবাকে ফোন করে দ্রুত বাসায় আসার জন্য চাপ দেন। আলম মিয়া বাসায় ফিরে ঘুমিয়ে পড়লে, রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে মাহমুদ লোহার পাইপ দিয়ে তার বাবার মাথায় আঘাত করে তাকে হত্যা করেন। হত্যার পরে লোহার পাইপটি বাড়ির সামনের পুকুরে ফেলে দেয়।

বৃহস্পতিবার সকালে আসামি মোঃ মাহমুদুল হাসানের দেখানো স্থান থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত  লোহার পাইপটি উদ্ধার করা হয়। পরে গ্রেপ্তারকৃত আসামি মোঃ মাহমুদুল হাসানকে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জহিরুল আলমের আদালতে হাজির করা হলে সে তার পিতাকে হত্যার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারা মতে স্বীকারোক্তি মূলেক জবানবন্দি প্রদান করেন।

এ ব্যাপারে পিবিআই, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার শচীন চাকমা বলেন,  নিহতের ছেলে মাহমুদুল হাসান আদালতে ১৬৪ ধারা মতে স্বীকারোক্তিমূলেক জবানবন্দি প্রদান করেন। পরে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এ ঘটনায় তদন্ত অব্যাহত আছে।

Please Share This Post in Your Social Media

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পিতা হত্যার দায় স্বীকার করে ছেলের জবানবন্দী

আঃ হান্নান, ব্রাহ্মণবড়িয়া প্রতিনিধি
Update Time : ০৮:৫৩:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ব্রাহ্মণবড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক গ্রামের মুন্সীপাড়ার আলোচিত হাজী আলম মিয়া-(৬০) হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

গত বুধবার রাতে নিহতের পুত্র ও মামলার বাদি মোঃ মাহমুদুল হাসানকে-(২১) গ্রেপ্তারের পর হত্যাকান্ডের রহস্য উম্মোচন হয়।

পিবিআই এর সদস্যরা গ্রেপ্তারকৃত মাহমুদুল হাসানের দেয়া তথ্য মতে আজ বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ির সামনের পুকুর থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত লোহার পাইপটি উদ্ধার করে। দুপুরে গ্রেপ্তারকৃত মাহমুদুল হাসানকে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জহিরুল আলমের আদালতে হাজির করা হলে মাহমুদুল হাসান তার পিতা আলম মিয়াকে হত্যার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলেক জবানবন্দি প্রদান করেন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে পিবিআই, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কার্যালয় থেকে পাঠানো এই তথ্য  থেকে জানা গেছে।

এতে বলা হয়, গত ৩ সেপ্টেম্বর উপজেলার ফান্দাউক ইউনিয়নের মুন্সি পাড়ার নিজ ঘর থেকে আলম মিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত আলম মিয়া মুন্সি পাড়ার ওয়াহেদ আলীর ছেলে ও ফান্দাউক বাজারের ব্যবসায়ী।

এ ঘটনায় নিহতের ছেলে মাহমুদুল হাসান বাদি হয়ে নাসিরনগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলা নং-০৫, তারিখঃ ০৬/০৯/২০২৫।

মামলার এজাহারে বাদী মাহমুদুল হাসান দাবি করেন, অজ্ঞাতনামা আসামীরা তার বাড়ির টিনের চালা কেটে এবং পেছনের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। তারা তার বাবা হাজী আলম মিয়াকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে। পরে হত্যাকারীরা ঘর থেকে প্রায় আড়াই লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার চুরি করে নিয়ে যায়। এজাহারে তিনি তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী আমেনা এবং তার পূর্বের স্বামী মমিনকে হত্যাকাণ্ডের জন্য সন্দেহ করেন।

এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন যে, ঘটনার সময় তিনি সিলেটে ছিলেন এবং তার বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরে আসেন।

মামলাটির গুরুত্ব বিবেচনা করে পিবিআই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার শচীন চাকমার তত্ত্বাবধানে পুলিশ পরিদর্শক মোঃ বেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে ছায়া তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। সরেজমিনে প্রাপ্ত হত্যাকাণ্ডের সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতীয়মান হয় যে, এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

এজাহারে উল্লিখিত আমেনা ও মমিনকে সন্দেহভাজন হিসেবে উল্লেখ করা হলেও, সমস্ত তথ্য, যেমন-সম্পত্তির লোভ, হত্যাকাণ্ডের আগের দিন মাহমুদুল হাসানের অস্বাভাবিক গতিবিধি, মোবাইল চুরির ঘটনা গোপন করা এবং সাজানো চুরির গল্প এই সবকিছুই আসামী মাহমুদুল হাসানের দিকে সন্দেহ ঘণীভূত করে। পরে পিবিআই গত বুধবার রাত সাড়ে ৭টায় মাহমুদুল হাসানকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে তার পিতাকে হত্যার দায় স্বীকার করে। পুলিশের কাছে মাহমুদুল হাসানের দেয়া জবানবন্দি অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর তার মা মারা যান। তার বাবা তার মায়ের সুচিকিৎসা করে নাই এবং  তার মা জীবিত থাকাবস্থায় তার বাবা পুনরায় বিয়ে করতে চেয়েছিল। তার মা মারা যাওয়ার পর তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তার বাবা তার সৎ মাকে সম্পত্তি দেয়ার চিন্তা করায় সে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তার বাবাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী মাহমুদুল হাসান সিলেট যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয় এবং বাড়ির পেছনের দরজা খোলা রাখেন। পরে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করে রাত আনুমানিক ৮টার দিকে খোলা পিছনের দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করেন এবং মাচার ওপর লুকিয়ে থাকে। পরে তিনি সুকৌশলে তার বাবাকে ফোন করে দ্রুত বাসায় আসার জন্য চাপ দেন। আলম মিয়া বাসায় ফিরে ঘুমিয়ে পড়লে, রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে মাহমুদ লোহার পাইপ দিয়ে তার বাবার মাথায় আঘাত করে তাকে হত্যা করেন। হত্যার পরে লোহার পাইপটি বাড়ির সামনের পুকুরে ফেলে দেয়।

বৃহস্পতিবার সকালে আসামি মোঃ মাহমুদুল হাসানের দেখানো স্থান থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত  লোহার পাইপটি উদ্ধার করা হয়। পরে গ্রেপ্তারকৃত আসামি মোঃ মাহমুদুল হাসানকে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জহিরুল আলমের আদালতে হাজির করা হলে সে তার পিতাকে হত্যার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারা মতে স্বীকারোক্তি মূলেক জবানবন্দি প্রদান করেন।

এ ব্যাপারে পিবিআই, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার শচীন চাকমা বলেন,  নিহতের ছেলে মাহমুদুল হাসান আদালতে ১৬৪ ধারা মতে স্বীকারোক্তিমূলেক জবানবন্দি প্রদান করেন। পরে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এ ঘটনায় তদন্ত অব্যাহত আছে।