ব্যাডমিন্টনে ‘হেক্সা মিশন’ সম্পন্ন করেছে পরিসংখ্যান বিভাগ

- Update Time : ০৭:৩৩:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ৬৫ Time View
এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ, ছয়…
সংখ্যা নয়, এটা ছিল গোনা— টানা ছয় বারের ব্যাডমিন্টন শিরোপা। প্রতিবারই চ্যাম্পিয়ন, প্রতিবারই ইতিহাস! শেষ বারের জয়ে সম্পন্ন হয়েছে হেক্সা মিশন।
অবিশ্বাস্য লাগছে? শুনতে হয়তো রূপকথার মতো মনে হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবেই এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) পরিসংখ্যান বিভাগের সোনিয়া সুলতানা ও সায়কা আমান সুহীদের জুটি।
জানা যায়, গতকাল বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত কুবির আন্তঃবিভাগ ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় ফাইনালে সিএসই বিভাগকে ২-০ সেটে হারিয়ে ষষ্ঠবারের মত শিরোপা জয়ী হয় পরিসংখ্যান বিভাগ। আর এতেই সৃষ্টি হলো নতুন এক কীর্তি— ‘হেক্সা মিশন’ সম্পন্নের রেকর্ড।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাডমিন্টন কোর্টের অপরাজিত দুই তারকা সোনিয়া ও সুহী। এই দুজনই কুবির ব্যাডমিন্টনের কোর্টে অপ্রতিরোধ্য।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট যখন প্রতিযোগিতার তুঙ্গে, তখন একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খায় সবার মনে—’এবারও কি সোনিয়া-সুহীর রাজত্ব চলবে?’ আর প্রতিবারই সেই প্রশ্নের উত্তর মেলে তাদের দাপুটে পারফরম্যান্সের মাধ্যমে।
কীভাবে সম্ভব হলো এই ধারাবাহিক সাফল্য? কীভাবে একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠেছেন তারা? চলুন, জানা যাক তাদের জয়ের পেছনের গল্প।
টানা ছয়বার ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন হয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়াঙ্গনে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিয়েছেন সোনিয়া সুলতানা। এই অর্জনের পেছনে ছিল কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং একাগ্রতা।
‘ছোটবেলা থেকেই ব্যাডমিন্টন খেলার প্রতি আমার ভালোবাসা ছিল,’ বলেন সোনিয়া।
সোনিয়া বলেন, ‘আমরা অনেক ভাই-বোন ছিলাম, তাই পারিবারিক পরিবেশেই খেলাধুলার প্রতি ঝোঁক তৈরি হয়। ভাইবোনদের সঙ্গে খেলতে খেলতেই শৈশব কেটেছে। এরপর স্কুল ও কলেজের বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাই। কলেজ জীবনে জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় রানারআপ হয়েছিলাম, যা আমাকে আরও অনুপ্রাণিত করে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর তার ব্যাডমিন্টন জার্নির একটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়। বিশেষভাবে উল্লেখ করেন ঊর্মি আপুর কথা, যিনি তাকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। ঊর্মি আপুর অবদান কখনো ভুলতে পারব না।’
তার কৃতিত্ব ভোলার নয় বলে অকপটে স্বীকার করেন সোনিয়া। এরপর গত চারটি টুর্নামেন্টে তার সঙ্গী ছিলেন সুহী, যিনি শক্ত হাতে দলের হাল ধরেছিলেন।
সাফল্যের রহস্য প্রসঙ্গে সোনিয়া বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি—পরিশ্রম ছাড়া সাফল্য সম্ভব নয়। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য যে পরিমাণ পরিশ্রম দরকার, আমরা সেটুকুই করেছি। তার ফলস্বরূপ, বারবার সাফল্য আমাদের হাতে এসেছে। আলহামদুলিল্লাহ!’
তবে এবারের টুর্নামেন্ট তার জন্য ছিল বিশেষভাবে চ্যালেঞ্জিং। ‘মানসিকভাবে আমাদের অনেক যুদ্ধ করতে হয়েছে। অনেকেই আমাদের বিপক্ষে ছিল। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য ছিল অটল। টানা ছয়বার চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা সহজ ছিল না, তবে কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের কারণেই এই অর্জন ধরে রাখতে পেরেছি,’ বলেন তিনি।
সোনিয়া চান, তার এই সাফল্য নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করুক।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তার চাওয়া, ‘পরিসংখ্যান বিভাগ যেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় মনে রাখে। কেউ পারবে কি না জানি না, তবে টানা ছয়বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার এই রেকর্ডটি যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকে।’
সবশেষে আগামীতে যারা আসবে, তাদের জন্য শুভকামনা জানান তিনি।
এই অসাধারণ সাফল্যের অংশ হয়েছেন সায়কা আমান সুহীও। যিনি চারবার টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন। তবে তার ব্যাডমিন্টন যাত্রা সহজ ছিল না।
সুহী বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ব্যাডমিন্টন ভালো লাগতো। তবে নিয়মকানুন বুঝতাম না, খেলার সুযোগও হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পরই আমার ব্যাডমিন্টনে আসা। আমাকে আজকের এই সুহী বানানোর কারিগর যদি কাউকে বলতে হয়, তবে তা নিঃসন্দেহে সোনিয়া আপু। তার হাত ধরেই আমি এই খেলাটা আয়ত্ত করেছি।’
টানা ছয়বার চ্যাম্পিয়ন হওয়া সহজ নয়, এর পেছনে অক্লান্ত পরিশ্রমের গল্প আছে। সুহী আরও বলেন, ‘খেলায় জয়-পরাজয় থাকবেই। কিন্তু আমি সবসময় নিজের সর্বোচ্চটা দিয়েছি এবং বিশ্বাস রেখেছি—যারা কঠোর পরিশ্রম করবে, তারাই জয়ী হবে। অনেকেই ভাবে, আমরা এমনি এমনি জিতে যাই। কিন্তু কেউ আমাদের পরিশ্রমের গল্পগুলো দেখে না। দিনের পর দিন কঠোর পরিশ্রম আর একাগ্রতার ফলেই আমরা এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পেরেছি।’
সুহীর এই গল্প শুধু একজন খেলোয়াড়ের নয়, এটি অধ্যবসায়ের গল্প, পরিশ্রমের গল্প এবং বিশ্বাসের গল্প। তার মতো আরও অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে এই সফলতার যাত্রা। সোনিয়ার এই অসাধারণ সাফল্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হয়দার আলী।
তিনি বলেন, ‘সোনিয়া টানা ষষ্ঠবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। তার এই অর্জন শুধু তার ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, এটি পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক খুশির মুহূর্ত।’
শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করে উপাচার্য আরও বলেন, ‘আমি আশা করি, আমাদের শিক্ষার্থীরা একদিন জাতীয় পর্যায়ে খেলবে এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আরও উজ্জ্বল করবে। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আমরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারব।’
বিশ্ব ব্যাডমিন্টনের আকাশে স্পেনের ক্যারোলিনা মারিন ও ভারতের পি. ভি. সিন্ধু যেমন উজ্জ্বল নক্ষত্র। তেমনি বাংলাদেশে নারী ব্যাডমিন্টনের শীর্ষস্থানীয় নাম উর্মি আক্তার ও জাহানারা আলম। আর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্টে এক নতুন ইতিহাসের জন্ম দিয়েছেন সোনিয়া ও সুহি জুটি। যারা দেখিয়ে দিয়েছেন প্রতিভা ও পরিশ্রম মিললে সাফল্য অবশ্যম্ভাবী! যাদের নাম স্বরণীয় হয়ে থাকবে কুবি ক্যাম্পাসে।