ঢাকা ০৫:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ জুন ২০২৪, ৪ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্যাংকের লকার থেকে স্বর্ণ গায়েব: ‘মিথ্যা অভিযোগ’ দাবি ম্যানেজারের

আবুল হাসেম, চট্টগ্রাম থেকে
  • Update Time : ০৯:৪১:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ জুন ২০২৪
  • / ১৭ Time View

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড চট্টগ্রামের চকবাজার শাখার লকার থেকে প্রায় ১৫০ ভরি সোনা গায়েব হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত ২৯ মে এ ঘটনা ঘটলেও তা জানাজানি হয় ১ জুন। এ ঘটনায় আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্বর্ণালংকারের মালিক রোকেয়া বারী।

চট্টেশ্বরী সড়কের বিটিআই বেভারলী হিলসের বাসিন্দা রোকেয়া বারী ২৯ মে লকার খুলে দেখতে পান, সেখানে সংরক্ষিত ১৪৯ ভরি স্বর্ণালংকার নেই। পরে তিনি চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে চাইলে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

জানা গেছে, গায়েব হওয়া স্বর্ণালংকারের মধ্যে রয়েছে- ৪০ পিস হাতের চুরি (বড় সাইজ), যার ওজন ৬০ ভরি। গলা ও কানের অলঙ্কার, যার ওজন ২৫ ভরি। ১০ ভরি ওজনের একটি গলার সেট, ২৮ ভরি ওজনের ৭টি গলার চেইন। ১৫ ভরি ওজনের ৪টি আংটি। ৩০ জোড়া কানের দুল যার ওজন ১১ ভরি।

রোকেয়া বারী নামে ভুক্তভোগী ওই নারী অভিযোগ করেন, লকারের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার কাছে ডুপ্লিকেট চাবি আছে। সেটি দিয়েই স্বর্ণ চুরি করা হয়েছে।

রোকেয়া বারীর ছেলে ডা. রিয়াদ মো. মারজিক বলেন, ইসলামী ব্যাংকের লকারে প্রায় ১৬১ ভরি স্বর্ণ ছিল। তার মধ্যে ১৪৯ ভরি স্বর্ণালংকার গায়েব হয়েছে। ১৬-১৭ বছর ধরে চকবাজারের ইসলামী ব্যাংকের একটি লকার ব্যবহার করে আসছেন মা। পাশাপাশি তার নামে একটি অ্যাকাউন্টও রয়েছে। গত বুধবার দুপুরে তিনি কিছু স্বর্ণালংকার লকার থেকে আনতে যান। এ সময় লকারের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে লকার খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানান।

চাবি দিয়ে লকার রুমের দরজা খোলার পর তার জন্য বরাদ্দ রাখা লকার খোলা পান। পরে তিনি বিষয়টি চকবাজার থানার ওসিকে অবহিত করেন। ওসি ব্যাংকে গিয়ে দেখতে পান লকারে মাত্র ১০-১১ ভরি স্বর্ণালংকার আছে। এসব স্বর্ণ ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাই সরিয়ে ফেলেছে। আমরা আদালতে মামলা করবো।

এদিকে, লকার থেকে স্বর্ণালঙ্কার চুরির ঘটনাকে ‘মিথ্যা অভিযোগ’ বলে দাবি করেছেন ব্যাংকটির ম্যানেজার শফিকুল মওলা।

রোববার (২ জুন) দুপুরে চকবাজারের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ দাবি করেন।

শফিকুল মওলা জানান, গত ২৯ মে এক গ্রাহক অভিযোগ করেন তার লকার থেকে ১৫০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার মিসিং। এরপর আমরা তাৎক্ষণিক ভাবে গ্রাহককে বলেছি এক্ষেত্রে আমাদের কোনো কিছু করার নেই। উনি কী রেখেছেন উনি জানেন। আমাদের মনে হচ্ছে উনি মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছেন। আমরা লকার সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সব সার্কুলার মেনেই আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা মৌখিক ভাবে অভিযোগ হিসেবে নিয়েছি এটি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছি। আমরা তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। অভ্যন্তরীণ তদন্ত করে এক সপ্তাহের মধ্যে গ্রাহককে জানানোর আশ্বাস দিয়েছি।

তিনি আরো জানান, লকার ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা গ্রাহকের কাছ থেকে শুধু ডিক্লারেশন গ্রহন করি যে, দাহ্য পদার্থ কিংবা আগ্নেয়াস্ত্র রাখা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী বাকি কোনো পণ্যের ডিক্লারেশন নেওয়ার নিয়ম নেই। আমাদের জানারও সুযোগ নেই যে গ্রাহক কী পণ্য এবং কী পরিমাণ পন্য লকারে রেখেছেন। ব্যাংক ম্যানেজার বলেন, ওই গ্রাহক সবশেষ গত ৮ এপ্রিল লকারটি যাচাই করেছেন।

এ প্রসঙ্গে ব্যাংক ম্যানেজার শফিকুল মওলা বলেন, আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার সব দালিলিক কার্যক্রম সম্পাদন করেন। সব চেম্বারের একটা মাস্টার কি থাকে, সেটি হোলে (চাবি প্রবেশের স্থান) দিলেই আমাদের দিকে থেকে লকার আনলক হয়। এরপর গ্রাহক তার চাবি দিয়ে লকার খোলেন। আমাদের অফিসারও সেখানে থাকেন না। গ্রাহক যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন করে লকারটি তার কাছে থাকা চাবি দিয়ে বন্ধ করে বেরিয়ে যান। ওই চাবির কোনো ডুপ্লিকেট নেই। এরপর আমাদের অফিসারকে ইনফর্ম করলে অফিসার গিয়ে বাইরের দরজা বন্ধ করেন।

তিনি বলেন, লকারের পর্যাপ্ত সিকিউরিটি আমরা নিয়ে থাকি। যেন চুরি, ছিনতাই বা ডাকাতির মতো ঘটনা না ঘটে। এখানে চুরি-ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। তারপরও আমাদের দীর্ঘদিনের গ্রাহক যেহেতু অভিযোগ করেছেন, আমরা বিষয়টি সিরিয়াসলি নিয়ে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি, আসলে কী ঘটেছে।

এব্যাপারে চকবাজার থানার ওসি ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, অভিযোগকারীকে মামলা দায়ের করতে বলেছি। যদি মামলা দায়ের করেন, আমরা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

Please Share This Post in Your Social Media

ব্যাংকের লকার থেকে স্বর্ণ গায়েব: ‘মিথ্যা অভিযোগ’ দাবি ম্যানেজারের

Update Time : ০৯:৪১:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ জুন ২০২৪

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড চট্টগ্রামের চকবাজার শাখার লকার থেকে প্রায় ১৫০ ভরি সোনা গায়েব হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত ২৯ মে এ ঘটনা ঘটলেও তা জানাজানি হয় ১ জুন। এ ঘটনায় আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্বর্ণালংকারের মালিক রোকেয়া বারী।

চট্টেশ্বরী সড়কের বিটিআই বেভারলী হিলসের বাসিন্দা রোকেয়া বারী ২৯ মে লকার খুলে দেখতে পান, সেখানে সংরক্ষিত ১৪৯ ভরি স্বর্ণালংকার নেই। পরে তিনি চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে চাইলে মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

জানা গেছে, গায়েব হওয়া স্বর্ণালংকারের মধ্যে রয়েছে- ৪০ পিস হাতের চুরি (বড় সাইজ), যার ওজন ৬০ ভরি। গলা ও কানের অলঙ্কার, যার ওজন ২৫ ভরি। ১০ ভরি ওজনের একটি গলার সেট, ২৮ ভরি ওজনের ৭টি গলার চেইন। ১৫ ভরি ওজনের ৪টি আংটি। ৩০ জোড়া কানের দুল যার ওজন ১১ ভরি।

রোকেয়া বারী নামে ভুক্তভোগী ওই নারী অভিযোগ করেন, লকারের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার কাছে ডুপ্লিকেট চাবি আছে। সেটি দিয়েই স্বর্ণ চুরি করা হয়েছে।

রোকেয়া বারীর ছেলে ডা. রিয়াদ মো. মারজিক বলেন, ইসলামী ব্যাংকের লকারে প্রায় ১৬১ ভরি স্বর্ণ ছিল। তার মধ্যে ১৪৯ ভরি স্বর্ণালংকার গায়েব হয়েছে। ১৬-১৭ বছর ধরে চকবাজারের ইসলামী ব্যাংকের একটি লকার ব্যবহার করে আসছেন মা। পাশাপাশি তার নামে একটি অ্যাকাউন্টও রয়েছে। গত বুধবার দুপুরে তিনি কিছু স্বর্ণালংকার লকার থেকে আনতে যান। এ সময় লকারের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে লকার খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানান।

চাবি দিয়ে লকার রুমের দরজা খোলার পর তার জন্য বরাদ্দ রাখা লকার খোলা পান। পরে তিনি বিষয়টি চকবাজার থানার ওসিকে অবহিত করেন। ওসি ব্যাংকে গিয়ে দেখতে পান লকারে মাত্র ১০-১১ ভরি স্বর্ণালংকার আছে। এসব স্বর্ণ ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাই সরিয়ে ফেলেছে। আমরা আদালতে মামলা করবো।

এদিকে, লকার থেকে স্বর্ণালঙ্কার চুরির ঘটনাকে ‘মিথ্যা অভিযোগ’ বলে দাবি করেছেন ব্যাংকটির ম্যানেজার শফিকুল মওলা।

রোববার (২ জুন) দুপুরে চকবাজারের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ দাবি করেন।

শফিকুল মওলা জানান, গত ২৯ মে এক গ্রাহক অভিযোগ করেন তার লকার থেকে ১৫০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার মিসিং। এরপর আমরা তাৎক্ষণিক ভাবে গ্রাহককে বলেছি এক্ষেত্রে আমাদের কোনো কিছু করার নেই। উনি কী রেখেছেন উনি জানেন। আমাদের মনে হচ্ছে উনি মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছেন। আমরা লকার সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সব সার্কুলার মেনেই আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা মৌখিক ভাবে অভিযোগ হিসেবে নিয়েছি এটি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছি। আমরা তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। অভ্যন্তরীণ তদন্ত করে এক সপ্তাহের মধ্যে গ্রাহককে জানানোর আশ্বাস দিয়েছি।

তিনি আরো জানান, লকার ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা গ্রাহকের কাছ থেকে শুধু ডিক্লারেশন গ্রহন করি যে, দাহ্য পদার্থ কিংবা আগ্নেয়াস্ত্র রাখা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী বাকি কোনো পণ্যের ডিক্লারেশন নেওয়ার নিয়ম নেই। আমাদের জানারও সুযোগ নেই যে গ্রাহক কী পণ্য এবং কী পরিমাণ পন্য লকারে রেখেছেন। ব্যাংক ম্যানেজার বলেন, ওই গ্রাহক সবশেষ গত ৮ এপ্রিল লকারটি যাচাই করেছেন।

এ প্রসঙ্গে ব্যাংক ম্যানেজার শফিকুল মওলা বলেন, আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার সব দালিলিক কার্যক্রম সম্পাদন করেন। সব চেম্বারের একটা মাস্টার কি থাকে, সেটি হোলে (চাবি প্রবেশের স্থান) দিলেই আমাদের দিকে থেকে লকার আনলক হয়। এরপর গ্রাহক তার চাবি দিয়ে লকার খোলেন। আমাদের অফিসারও সেখানে থাকেন না। গ্রাহক যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন করে লকারটি তার কাছে থাকা চাবি দিয়ে বন্ধ করে বেরিয়ে যান। ওই চাবির কোনো ডুপ্লিকেট নেই। এরপর আমাদের অফিসারকে ইনফর্ম করলে অফিসার গিয়ে বাইরের দরজা বন্ধ করেন।

তিনি বলেন, লকারের পর্যাপ্ত সিকিউরিটি আমরা নিয়ে থাকি। যেন চুরি, ছিনতাই বা ডাকাতির মতো ঘটনা না ঘটে। এখানে চুরি-ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। তারপরও আমাদের দীর্ঘদিনের গ্রাহক যেহেতু অভিযোগ করেছেন, আমরা বিষয়টি সিরিয়াসলি নিয়ে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি, আসলে কী ঘটেছে।

এব্যাপারে চকবাজার থানার ওসি ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, অভিযোগকারীকে মামলা দায়ের করতে বলেছি। যদি মামলা দায়ের করেন, আমরা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।