ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোর করে ট্যাক্স নেওয়া যাবে না : এনবিআর চেয়ারম্যান

- Update Time : ১১:৫৪:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫
- / ৫৭ Time View
ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোর করে ট্যাক্স আদায় করা যাবে না বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
তিনি বলেছেন, ভবিষ্যতে কর ছাড় বা অব্যাহতির সিদ্ধান্ত জাতীয় সংসদের মাধ্যমে নেওয়া হবে।
বুধবার (৮ অক্টোবর) আগারগাঁওয়ে এনবিআরের নিয়মিত আয়োজন ‘মিট দ্যা বিজনেস’ অনুষ্ঠানে ফরেন চেম্বারের সঙ্গে আলোচনায় এই কথা জানান তিনি।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোর করে ট্যাক্স আদায় করা যাবে না। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনেই কর আদায় করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসার পরিবেশ সুষ্ঠু আছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা কর ফাঁকি দিচ্ছে কি না তাও দেখা এনবিআরের কাজ।’
কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে আবদুর রহমান বলেন, ‘যে কারো সঙ্গে অন্যায় করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিভিন্ন অনিয়মকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
শুধু রিওয়ার্ড পাওয়ার জন্য কাজ না করে কর্মীদের সেবার মানসিকতা তৈরির আহ্বানও জানান এনবিআর চেয়ারম্যান।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়, মাঠ পর্যায়ে কাস্টম হাউজ, ভ্যাট কমিশনারেট ও কর অঞ্চলের অনেক কর্মকর্তারা তা ‘মানেন না’ বলে অনুযোগ করন এ সংস্থার চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
তিনি বলেন, “আমাদের কাছে অনেক সময় অভিযোগ আসে যে আমরা নির্দেশ দিই, মাঠ পর্যায়ে মানে না।”
আর সেজন্য ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীদেরও ‘দায়’ আছে মন্তব্য করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আপনারা ব্যবসায়ীরা আছেন, প্রফেশনালরা আছেন, আপনাদেরও দোষ আছে।
আপনি এগুলো সহ্য করেন কেন? মানে আপনার টাকায় তাদের বেতন হয়, আর তারা সরকারের নির্দেশ মানবে না, আর আপনারা এগুলো সহ্য করবেন খালি?
“আপনারা যত সহ্য করবেন তারা এগুলো তত বেশি অনিয়ম করবে। সুতরাং আপনাদের সহ্য ইয়েটা একটু চেঞ্জ করতে হবে। এই জায়গাটা থেকে আপনাদের সহ্য না করে আপনাদেরকে কমপ্লেইন করতে হবে।”
এখন অনলাইনে সহজেই অভিযোগ জানানো যায়, সে কথা তুলে ধরে ব্যবসায়ীদের তিনি ‘হুইসেল ব্লোয়ারের’ ভূমিকা নিতে বলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “কমপ্লেইন আপনারা অনলাইনে করতে পারেন। কী ঘটনা ঘটেছে, কী করতে চান…। আমরা কিন্তু আবার এটা ইনকোয়ারি করব। ইনকোয়ারি করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব। এখন তো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হচ্ছে, আপনারা দেখতে পাচ্ছেন।
“এবং আমরাও অনেক ইনফরমেশন হুইসেল ব্লোয়ারদের মাধ্যমে পাচ্ছি। আপনারা হুইসেল ব্লো না করলে তো সিচুয়েশন উন্নতি হবে না।”
তিনি বলেন, কাস্টম হাউজগুলোতে পণ্যের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ‘ট্রাঞ্জেকশন প্রাইস’ আমলে নেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা না মেনে পুরনো রেকর্ড দেখে মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে।
অতিরিক্ত কর আদায়ের জন্য এমন করা হয় জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, “আইনের বাইরে জোর করে জুলুম করে অতিরিক্ত ট্যাক্স নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই এবং আপনারা শুনলে খুশি হবেন আমি আমার ট্যাক্স কমিশনারদেরকে বলেছি, কাস্টম হাউসগুলোকে বলেছি, আমি তোমরা কত টাকা কালেকশন করো এই জিনিস জিজ্ঞেস করব না। শুনতেও চাই না। এবং আমরা এখন রেভিনিউ মিটিংয়ে কিন্তু এগুলা জিজ্ঞেস করি না।
“আমি বলেছি তোমাদেরকে আইনে-কানুনে, বিধি-বিধানে এনবিআর থেকে যে সকল ইন্সট্রাকশন দেওয়া হয়েছে সেই কাজগুলো করছ কিনা এটার হিসাব আমাকে দাও। তাইলে আমার রেভিনিউ চলে আসবে। অটোমেটিক্যালি চলে আসবে। তো এই কারণে বলছি এখন মাইন্ডসেটটা বদলাতে হবে। আমার রেভিনিউ কালেকশন অনেক বেশি করে ফেললাম, আমি বাঘা অফিসার, আমি খালি রিওয়ার্ড পাব–এই কনসেপ্ট থেকে বের হতে হবে।”
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এক-দুই দিনের মধ্যে শুল্ক ষ্টেশন থেকে পণ্য ছাড়তে হবে, সময় ক্ষেপণের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের ‘ক্ষতি করার সংস্কৃতি’ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
এফআইসিসিআইয়ের প্রতিনিধি হিসেবে অনুষ্ঠানে আসা এইচএসবিসি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, “কর ফাঁকির সংস্কৃতি থেকে কাস্টম অফিসাররা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এমনটি করে থাকেন। তবে এখানে বৈশ্বিক বাজারে কী মূল্য রয়েছে, দাম যেহেতু ওঠানামা করে- সেখানে তথ্য দিয়ে আমরা সহযোগিতা করতে পারি।”
এনবিআরের তরফে বলা হয়, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে এসেসমেন্ট কমিটি আছে, বৈদেশিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করায় এফআইসিসিআইয়ের একজন প্রতিনিধি সে কমিটিতে থাকবে।
বিভিন্ন কোম্পানির সমস্যা তুলে ধরে মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমরা সাধারণত সে সমস্যা ‘থ্রেড’ মোকাবেলা করি তা হচ্ছে বিদেশে টাকা পাঠানোর সময়। এখানে যত বিদেশি কোম্পানি আছে, স্বাভাবিকভাবেই এর একটি মূল অফিস আছে বাইরে। তখন স্বাভাবিকভাবেই আমাদের বিদেশে টাকা পাঠাতে হয় ডিভিডেন্ড আকারে, রয়ালটি পেমেন্ট এবং মূল অফিসের খরচের পারপাসে।
“এখানে কী পরিমাণ ভ্যাট ও উৎসে কর এবং এখানে সর্বোচ্চ কর বহির্ভূত খরচ পাঠানোর (মেধাস্বত্ত্বসহ) বিধান থাকা উচিৎ তা আবারও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।”
এছাড়া ‘ডাবল ট্যাক্সেশন’ নিয়েও কোম্পানিগুলোকে বিপাকে পড়তে হয় বলে জানান মাহবুবুর রহমান।
পণ্য রপ্তানির মত বিবেচনায় না নিয়ে সেবা রপ্তানিতেও কর বসানোর সমালোচনা করেন ব্যবসায়ীরা।
এসময় দারাজের এক প্রতিনিধি অভিযোগ করেন, ই-কমার্স খাতে পণ্য বিক্রির উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য। কিন্তু একই পণ্য অফলাইনে বিক্রি করলে ভ্যাট দিতে হয় সাড়ে ৭ শতাংশ । “যেমন-মোবাইলের ক্ষেত্রে দোকানে বিক্রির ওপর ভ্যাট ৭.৫ শতাংশ কিন্তু অনলাইনে ১৫ শতাংশ। এটা সমন্বয় করতে হবে। ব্যবসা খাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকা উচিত।”
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়