বোরকা পরে এসে মা-মেয়েকে হত্যা করে গৃহকর্মী, বেরিয়ে যায় স্কুল ড্রেসে
- Update Time : ১০:৩১:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫
- / ২৪ Time View
বোরকা পরে এসে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে মা ও মেয়েকে হত্যার পর স্কুল ড্রেস ও মুখে মাস্ক পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় গৃহকর্মী। সোমবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলেন- মা লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫)।
পুলিশ বলছে, চার দিন আগে নিহতের বাসায় কাজ নেয় ওই গৃহকর্মী। নিজেকে আয়েশা নামে পরিচয় দেন। মা ও মেয়েকে হত্যার পর নিহত নাফিসার স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। নিহত লায়লা আফরোজ ছিলেন গৃহিণী, আর মেয়ে নাফিসা বিনতে আজিজ মোহাম্মদপুরের প্রিপারেটরি স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নাফিসার বাবা এম জেড আজিজুল ইসলাম উত্তরায় সানবীমস স্কুলের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক। তারা মোহাম্মদপুরের শাজাহান রোডের ৩২/২/এ নম্বর বাসার সাততলায় থাকতেন।
ভবনের একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নাফিসার বাবা স্কুলের উদ্দেশ্যে সকাল ৭টার দিকে বের হয়ে যান। এর ঘণ্টাখানেক পর ৭টা ৫১ মিনিটে বোরকা পরে ওই বাসায় প্রবেশ করেন গৃহকর্মী আয়েশা। দেড় ঘণ্টা পর ৯টা ৩৬ মিনিটে স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যান তিনি। ওই স্কুল ড্রেস নাফিসার। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নাফিসার বাবা বাসায় ফিরে স্ত্রী ও মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, মাকে হত্যার বিষয়টি বুঝতে পেরে মেয়ে নাফিসা ডাইনিং রুমে রাখা ইন্টারকম থেকে কাউকে ফোন দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হলে সেখানেই তাকে ছুরিকাঘাত করা হয়। ওই সময় ধস্তাধস্তিতে ইন্টারকমের লাইন খুলে যায়। বাসায় তল্লাশি করে বাথরুমে একটি সুইচ গিয়ার চাকু ও একটি ফল কাটা ছুরি পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, ওই ছুরি দুটি দিয়েই মা-মেয়েকে হত্যা করে গৃহকর্মী আয়েশা। এই ঘটনায় ওই বাসার দারোয়ান মালেককে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
শিক্ষক আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বাসায় কাজের মহিলা দরকার ছিল। সাধারণত গেটে অনেকে কাজের সন্ধানে আসে। চার দিন আগে একটি মেয়ে আসে। বোরকা পরা মেয়েটি দারোয়ান খালেকের কাছে কাজের সন্ধান করলে, সে বাসায় পাঠিয়ে দেয়। এরপর স্ত্রী ও মেয়ে তার সঙ্গে কথা বলে কাজে রেখে দেয়। পরে স্ত্রীর মুখে শুনেছি, মেয়েটার নাম আয়েশা। বয়স আনুমানিক ২০ বছর। তার গ্রামের বাড়ি রংপুর। জেনেভা ক্যাম্পে চাচা-চাচির সঙ্গে থাকে। বাবা মা আগুনে পুড়ে মারা গেছে। তার শরীরেও আগুনে পোড়ার ক্ষত রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেয়েটা কাজ শুরুর পর প্রথম দুদিন সময় মতো এসেছে। রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আসে। আজ (সোমবার) কি হয়েছে, এটা তো আর বলার অবস্থা নেই।’
শাজাহান রোডে বহুতল ওই ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ফ্ল্যাটের দরজা থেকে শুরু করে ভেতরে বিভিন্ন স্থানে রক্তের দাগ, বাসার আলমারিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তছনছ অবস্থায়। বাসায় ধস্তাধস্তির আলামত, মেঝেতে ও দেয়ালেও রক্তের দাগ। আলমারি ও ভ্যানিটি ব্যাগ তছনছ, আফরোজের মোবাইল ফোন পাওয়া যাচ্ছে না। অন্য আর কি খোয়া গেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ–কমিশনার (ডিসি) ইবনে মিজান বলেন, ‘খবর পেয়ে সাড়ে সকাল ১১টার দিকে বাসায় গিয়ে আফরোজের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নাফিসাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, নেওয়ার পর সেখানে তার মৃত্যু হয়। পরে লাশ দুটি সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে পাঠানো হয়। দুজনের শরীরে একাধিক স্থানে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে কিছু তথ্য পেয়েছি, সেসব যাচাই করে তদন্ত চলছে।’
গৃহকর্মীর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি বলেন, ‘তার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে কাজ করছি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করছি, হত্যার আগে পরে তার উপিস্থিতি ও কাজকর্ম বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। বাসায় ধস্তাধস্তির আলামত রয়েছে, মেঝেতে ও দেয়ালে রক্তের দাগ রয়েছে। ঘটনাস্থল দুটি ধারালো ছুরি পাওয়া গেছে। হত্যাকারী বাসার বাথরুমে ফ্রেস হয়েছে, এমন আলামতও রয়েছে।’
ডিসি ইবনে মিজান বলেন, ‘সিসি ক্যামেরা ফুটেজে একজনই দেখেছি, পরে দেখব আশেপাশে আরও কেউ ছিল কিনা। সিসি ক্যামেরায় দেখা গেছে, সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে একজন স্কুল ড্রেস ও মুখে মাস্ক পরে ভবন থেকে বের হয়ে যায়। পরে রিকশায় উঠে।’
















































































































































































