জিএম কাদেরের বাসভবনে হামলা
বৈছাআ ও বিএনপি নেতাদের সেনাবাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদ, রংপুরে ছুটে এলেন সারজিস

- Update Time : ০৭:২৮:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫
- / ৪০ Time View
‘মবের নামে নাশকতা আগুন-ভাঙচুরের সুযোগ নেই এখন’- সারজিসকে সেনা কর্মকর্তা
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (বৈছাআ) ও বিএনপির নেতাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সেনাবাহিনী।
খবর পেয়ে ওই সময় সেখানে ছুটে যান জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের সঙ্গে কথা বলেন।
এ সময় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম সারজিস আলমকে বলেন, ‘শরীরে যতক্ষণ রক্ত আছে, উই আর নট গোয়িং টু প্রমোট এনিওয়ান যে দেশের বিরুদ্ধে করে। আপাতত স্ট্যান্ডিং হলো, যে জনগণের অসুবিধা করে, ভ্যান্ডালিজম (নাশকতা) করে, মবের নামে যে আগুন লাগায়, ঘরদোর ভাঙচুর করে, এই পার্টিটাকে বার্তা দেওয়া যে, না, এইটা করার সুযোগ নেই এখন।’
জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের রংপুর সেনপাড়া ‘দ্য স্কাই ভিউ’ বাসভবনে গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৯টার দিকে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরপরই পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। ঘটনার সময় জিএম কাদের বাড়িতেই ছিলেন।
এ ঘটনায় শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর পায়রা চত্বর মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা ও মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ ও ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওই দুই নেতা সেদিনের ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর জাতীয় পার্টির হামলার অভিযোগ তুলে মহানগর কোতোয়ালি থানায় মামলার অভিযোগপত্র দিয়ে ফিরছিলেন। তাদের ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে ডাকা হয় মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, সদস্য সচিব মাহফুজ উন নবী ডন ও জেলা সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকুকে। তাদের কাছেও জানতে চাওয়া হয়, এ হামলার সঙ্গে তাদের দলের কোনো নেতাকর্মীরা জড়িত কি না।
ঘটনাস্থলে মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি সাংবাদিকদের বলেন, হামলার ঘটনায় জড়িতদের পরিচয় শনাক্তে তাদেরকে ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে জানতে চাওয়া হয় কারা জড়িত আছে। হামলাকারীদের শনাক্তে তাদের সহযোগিতা চেয়েছেন সেনাবাহিনী।
এসময় বিএনপির মহানগর কমিটির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু বলেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আমাদেরকে এখানে ডাকা হয়েছে। তারা আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন সেদিনের হামলার ঘটনায় কেউ জড়িত কি না এবং বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ দেখিয়েছেন। এখান থেকে আমরা একজনকে শনাক্ত করেছি। এ ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপে দলের কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এমন সংবাদ জানতে পেরে রাত ১টার দিকে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
তিনি ওই স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘রংপুরে ফ্যাসিস্টদের দোসরদের গ্রেপ্তার না করে অভ্যুত্থানের সহযোদ্ধাদের বিব্রত করলে আগামীকাল রংপুরের রাজপথে আবার দেখা হবে। আর আমরা সেখানে সামনের সারিতে থাকব।’
এর কিছুক্ষণ পর বৃষ্টির মধ্যেই ঘটনাস্থল পায়রা চত্বরে এসে উপস্থিত হন সারজিস আলম। সেখানে সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের সঙ্গে কথা বলেন। পরে রাত ২টার দিকে তাঁরা সেখানে থেকে চলে যান।
সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলাপ শেষে সারজিস আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘তদন্তের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হোক, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপির যে কাউকে হোক জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে। অবশ্যই প্রয়োজন। আমরা মনে করি রাত ১টা, ২টা, ওই সময়টাই দৃষ্টিকটু দেখায়। আমরা প্রত্যাশা করি, তাঁদের যেকোনো টাইমে দিনের বেলা অফিস আওয়ারে ডেকে নেওয়া হয়। সবাই প্রস্তুত থাকবে এ বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য।’
এরআগে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের আলাপচারিতায় সারজিস আলম বলেন, ‘অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যতটা ভালো আছে, এটার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটা গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। রংপুরে এতদিন তো এতকিছু দেখা যায়নি। বর্তমান বাংলাদেশে সক্রিয় যেসব রাজনৈতিক দল রয়েছে তাদের মতামত নিয়ে দেখবেন, জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের একটা বি টিম। আওয়ামী লীগের মতো তাদেরও নিষিদ্ধ হবার কথা ছিল। কেন হয়নি এটা সরকারকে আমরা জিজ্ঞেস করব, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও জিজ্ঞেস করব। আমরা মনে করি, কেন এসব ঘটনা ঘটছে তার কারণ আগে খুঁজতে হবে।’
পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘রংপুরে জিএম কাদেরের আসা, মিটিং করা এবং তাদের জাতীয় পার্টির যে সাবেক মেয়র মোস্তফা ওনাকে মেয়র পদে পুনর্বহাল করা নিয়ে বিক্ষোভ করা এসব সামগ্রিক বিষয়ে এখানে একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। যেটা রংপুরে আমরা এর আগে দেখিনি, আগামীতেও প্রত্যাশা করিনা। ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপির বর্তমান নেতৃবৃন্দ ফ্যাসিস বিরোধী লড়াই করেছে। আমরা দেখেছি বিএনপি এবং জামায়াতের ভাইদের সাথে যখন মিথ্যা মামলা, গুম-খুন, হয়রানি হয়েছে, তখন জাতীয় পার্টি ক্ষমতার সাথে নেগোসিয়েশন করে ডামি বিরোধী দল সেজে আওয়ামী লীগকে সরকারি দলের বৈধতা দিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে যেকাজ করেছে, একই কাজ বি টিম হিসেবে জাতীয় পার্টিও করেছে। আওয়ামী লীগের যে কনসিকিউয়েন্স হয়েছে এবং আগামীতে আরো হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি। একই কনসিকিউয়েন্স জাতীয় পার্টির হওয়া উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলো, জাতীয় পার্টি এখনো নিষিদ্ধ না কেন? জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগ মিলে কিভাবে তারা এতবড় মিছিল করতে পারে? জাতীয় পার্টির এই অপতৎপরতার বিরুদ্ধে যারা মিছিল করেছে, সেখানে কারা হামলা করেছে তা আগে তদন্ত বা অনুসন্ধান করতে হবে। মামলা হলে আগে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে হবে। গ্রেপ্তার করলে প্রথম তাদেরকে (জাতীয় পার্টি) গ্রেপ্তার করতে হবে। এর পরে কেউ যদি তাদের জায়গা থেকে সার্বিক দিক থেকে যত রকমের প্রভাবক, অনুঘটক দিয়ে একটা ঘটনা উসকে দেয়ার চেষ্টা করে এরকম দুই একটা বাইক পুড়ে যায় সেটার দায় কখনো এদেরকে (বৈছাআ ও এনসিপি) করা যেতে পারে না।’
এর আগে রাত সাড়ে ১১টার দিকে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানায় গিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাসহ জাতীয় পার্টি ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের ১৮ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে মেট্রোপলিটন কোতয়ালি থানায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির রংপুর জেলা সংগঠক আলমগীর রহমান নয়ন।
প্রসঙ্গত, রংপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের স্কাইভিউ বাসভবনে গত বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এদিন বাড়িতে ঢিল ছুড়ে জানালার কাচ ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এ ঘটনার পরপরই পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে কয়েক দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে।
এ ঘটনায় একটি অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছে মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানা পুলিশ। এতে মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়কসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
শুক্রবার (৩০ মে) দিবাগত রাতে জাতীয় ছাত্র সমাজের নেতা আরিফ আলী বাদী হয়ে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পুলিশ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়