ঢাকা ১২:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বেলাবে স্কুল ফিডিং কর্মসূচিতে বেড়েছে শিক্ষার্থী উপস্থিতি, ঝরেপড়ার হারও কমেছে

সফিকুল ইসলাম রিপন ,নরসিংদী প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৯:২৭:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
  • / ৭৫ Time View

সারা দেশের ন্যায় নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিয়মিতভাবে স্কুল ফিডিং কর্মসূচির খাদ্য বিতরণ চলছে। এই মহতী উদ্যোগের ফলে উপজেলার ৮৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১৪ হাজার ৮৬০ জন ছাত্র-ছাত্রী পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে।

জানা গেছে, সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করার জন্যে সরকার এই কর্মসূচি গ্রহন করে এতে উচ্ছাসিত শিক্ষার্থীরা। এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে একযোগে সারাদেশে, নিয়মিত খাদ্য বিতরণ নিশ্চিত হওয়ায় বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। একইসঙ্গে ঝরে পড়ার হার কমেছে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মানসম্পন্ন ও স্বাস্থ্যকর খাবার বিতরণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোনিবেশ বাড়াতে এবং পুষ্টির চাহিদা পূরণে এই প্রকল্পটি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখছে। এই কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিবিড়ভাবে কাজ করছেন।

বেলাবো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল করিম জানিয়েছেন, “স্কুল ফিডিং কর্মসূচি বেলাবো উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। প্রতিটি শিশু যাতে পুষ্টিকর খাদ্য পায় এবং নিয়মিত স্কুলে আসে, তা নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। এটি শিক্ষার মানোন্নয়নে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।” তিনি সরকারের এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানান।

শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকরা এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, খাদ্য সহায়তার কারণে দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া পরিবারের শিশুরা বিদ্যালয়ে আসতে উৎসাহিত হচ্ছে, যা দেশের সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থার জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা।

বেলাব মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক, বেলাব উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি নাসির উদ্দিন জানান, এই কর্মসূচি চালুর ফলে ঝরে পড়া শতভাগ রোধ হয়েছে। যারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে অনিহা প্রকাশ করত তারাও বিদ্যালয়ে ভর্তি করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এতে করে ভর্তির হারে বেড়ে যাবে। বেলাব উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জানান, কর্মসূচি চালুর প্রথম দিক দিয়ে সরবরাহকৃত খাদ্য একটু নিম্নমানের ছিল। এখন তা মানসম্মত হয়েছে। অনেক স্কুলে উপস্থিতির হার বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা খাদ্যের ঘাটতি হয়। খাদ্য সরবরাহ শতভাগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা রিপোর্ট পাঠিয়েছি।

এই কর্মসূচিকে সফলভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সহযোগিতা এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত থাকলে বেলাব উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা আরও সমৃদ্ধ হবে বলে আশা করা যায়।

এটি শুধু শিশুদের পুষ্টিই নিশ্চিত করছে না, বরং স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে শিক্ষাদান এবং খাদ্যের অপচয় রোধেও সচেতনতা সৃষ্টি করছে।

অভিভাবকরা বলছেন, প্রতিদিন একটি শিশুর নাস্তার খরচ বহন করা দরিদ্র পরিবারের জন্য বেশ কঠিন। এই কর্মসূচি সেই আর্থিক চাপ লাঘব করেছে। এই টাকা তারা এখন সন্তানের শিক্ষার অন্যান্য খাতে বা পরিবারের অন্য প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারছেন।

খাদ্যের নিশ্চয়তা পাওয়ায় তাদের সন্তানেরা এখন বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য নিজেরাই আগ্রহী হয়ে ওঠে। অনুপস্থিতির হার প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।

এ কর্মসূচি নিয়মিত বাস্তবায়নের ফলে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতির হার এতটাই বেড়েছে যে, প্রকল্পের নিয়মে শতকরা ৯০ ভাগ খাদ্য নিশ্চিত করায় কোন কোন বিদ্যালয় খাদ্যের ঘাটতি দেখা দেয়। এজন্য শিক্ষক ও অভিভাবকগণ মোট ছাত্র-ছাত্রীর খাদ্য সরবরাহ শতভাগ নিশ্চিত করার দাবী জানান,
কিছু কিছু বিদ্যালয়ে খাদ্য সরবরাহে দেরি হয়, এছাড়া, কর্মসূচির দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্ব এবং অর্থায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা অনেক সময় শিক্ষকদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে।

বেলাবতে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ হলেও উপরোক্ত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে এর কার্যক্রমকে আরও উন্নত করা গেলে শিক্ষার্থীরা আরও বেশি উপকৃত হবে এবং প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য অর্জন আরও সহজ হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

বেলাবে স্কুল ফিডিং কর্মসূচিতে বেড়েছে শিক্ষার্থী উপস্থিতি, ঝরেপড়ার হারও কমেছে

সফিকুল ইসলাম রিপন ,নরসিংদী প্রতিনিধি
Update Time : ০৯:২৭:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫

সারা দেশের ন্যায় নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিয়মিতভাবে স্কুল ফিডিং কর্মসূচির খাদ্য বিতরণ চলছে। এই মহতী উদ্যোগের ফলে উপজেলার ৮৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১৪ হাজার ৮৬০ জন ছাত্র-ছাত্রী পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে।

জানা গেছে, সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করার জন্যে সরকার এই কর্মসূচি গ্রহন করে এতে উচ্ছাসিত শিক্ষার্থীরা। এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে একযোগে সারাদেশে, নিয়মিত খাদ্য বিতরণ নিশ্চিত হওয়ায় বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। একইসঙ্গে ঝরে পড়ার হার কমেছে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মানসম্পন্ন ও স্বাস্থ্যকর খাবার বিতরণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোনিবেশ বাড়াতে এবং পুষ্টির চাহিদা পূরণে এই প্রকল্পটি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখছে। এই কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিবিড়ভাবে কাজ করছেন।

বেলাবো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল করিম জানিয়েছেন, “স্কুল ফিডিং কর্মসূচি বেলাবো উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। প্রতিটি শিশু যাতে পুষ্টিকর খাদ্য পায় এবং নিয়মিত স্কুলে আসে, তা নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। এটি শিক্ষার মানোন্নয়নে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।” তিনি সরকারের এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানান।

শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকরা এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, খাদ্য সহায়তার কারণে দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া পরিবারের শিশুরা বিদ্যালয়ে আসতে উৎসাহিত হচ্ছে, যা দেশের সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থার জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা।

বেলাব মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক, বেলাব উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি নাসির উদ্দিন জানান, এই কর্মসূচি চালুর ফলে ঝরে পড়া শতভাগ রোধ হয়েছে। যারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে অনিহা প্রকাশ করত তারাও বিদ্যালয়ে ভর্তি করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এতে করে ভর্তির হারে বেড়ে যাবে। বেলাব উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জানান, কর্মসূচি চালুর প্রথম দিক দিয়ে সরবরাহকৃত খাদ্য একটু নিম্নমানের ছিল। এখন তা মানসম্মত হয়েছে। অনেক স্কুলে উপস্থিতির হার বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা খাদ্যের ঘাটতি হয়। খাদ্য সরবরাহ শতভাগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা রিপোর্ট পাঠিয়েছি।

এই কর্মসূচিকে সফলভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সহযোগিতা এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত থাকলে বেলাব উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা আরও সমৃদ্ধ হবে বলে আশা করা যায়।

এটি শুধু শিশুদের পুষ্টিই নিশ্চিত করছে না, বরং স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে শিক্ষাদান এবং খাদ্যের অপচয় রোধেও সচেতনতা সৃষ্টি করছে।

অভিভাবকরা বলছেন, প্রতিদিন একটি শিশুর নাস্তার খরচ বহন করা দরিদ্র পরিবারের জন্য বেশ কঠিন। এই কর্মসূচি সেই আর্থিক চাপ লাঘব করেছে। এই টাকা তারা এখন সন্তানের শিক্ষার অন্যান্য খাতে বা পরিবারের অন্য প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারছেন।

খাদ্যের নিশ্চয়তা পাওয়ায় তাদের সন্তানেরা এখন বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য নিজেরাই আগ্রহী হয়ে ওঠে। অনুপস্থিতির হার প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।

এ কর্মসূচি নিয়মিত বাস্তবায়নের ফলে ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতির হার এতটাই বেড়েছে যে, প্রকল্পের নিয়মে শতকরা ৯০ ভাগ খাদ্য নিশ্চিত করায় কোন কোন বিদ্যালয় খাদ্যের ঘাটতি দেখা দেয়। এজন্য শিক্ষক ও অভিভাবকগণ মোট ছাত্র-ছাত্রীর খাদ্য সরবরাহ শতভাগ নিশ্চিত করার দাবী জানান,
কিছু কিছু বিদ্যালয়ে খাদ্য সরবরাহে দেরি হয়, এছাড়া, কর্মসূচির দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্ব এবং অর্থায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা অনেক সময় শিক্ষকদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে।

বেলাবতে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ হলেও উপরোক্ত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে এর কার্যক্রমকে আরও উন্নত করা গেলে শিক্ষার্থীরা আরও বেশি উপকৃত হবে এবং প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য অর্জন আরও সহজ হবে।