ঢাকা ০১:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
অর্থপাচার ঠেকাতে বৈশ্বিক পদক্ষেপের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার জাহাজভাঙা শিল্প উপকূলের জন্য মারাত্মক: পরিবেশ উপদেষ্টা চরফ্যাশনে স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার দায়ে স্বামী ও দেবরের আমৃত্যু কারাদণ্ড ঘরে আটকে রেখে কিশোরীকে ধর্ষণ, নারী গ্রেফতার টঙ্গীতে ম্যানহোলে পড়ে জ্যোতির মৃত্যু: ৯০ দিনের মধ্যে তদন্তের নির্দেশ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না আওয়ামী লীগ: ইসি সানাউল্লাহ জাতীয় পার্টির কার্যক্রম নিষিদ্ধ চেয়ে ইসিতে আবেদন রাষ্ট্রপতির সাথে নব নিয়োগপ্রাপ্ত ২৫ বিচারপতির সৌজন্য সাক্ষাৎ রায়হান হত্যা মামলার শুনানী পেছালো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত মানতে ফের বিজ্ঞপ্তি

বৃক্ষরোপণের আড়ালে শরতের কাশফুল নিধন

সাজিদুর রহমান, কুবি
  • Update Time : ১০:০৪:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ৩৫ Time View

বাংলার আবহমান প্রকৃতিতে শরৎ মানেই নীল আকাশে ভেসে থাকা তুলোর মতো খণ্ড খণ্ড সাদা মেঘ আর মাঠের ধারে হাওয়ায় দোল খাওয়া শুভ্র কাশফুল। কাশফুল যেন নিয়ে আসে প্রকৃতিতে শরৎকালের আগমনি বার্তা। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) ক্যাম্পাসও প্রতিবছর এই সৌন্দর্যে মুখর হয়ে উঠতো।

কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পাশের পাহাড়ি জায়গাগুলোতে ঝাঁক বেঁধে ফুটে উঠত কাশফুল, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বাইরের অনেক দর্শনার্থীকেও টেনে আনত। কাশফুলের ফাঁকে ছবি তোলা, আড্ডা কিংবা প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা হয়ে উঠত ক্যাম্পাসজুড়ে এক অনন্য আয়োজন।

কিন্তু এবার চোখে পড়ছে ভিন্ন এক দৃশ্য। প্রকৃতিতে শরতের আগমনি হাওয়া বইছে বটে, তবে কাশফুলের দেখা মিলছে না আগের মতো। ক্যাম্পাসে ফলজ গাছ রোপণ করতে গিয়ে পাহাড়ি জায়গাগুলোতে যত্রতত্র কাটাছেঁড়ায় উজাড় হয়ে গেছে কাশবন। তাই শরতের সেই সাদা-শুভ্র রূপকথার দৃশ্য এ বছর আর তেমনভাবে ধরা দিচ্ছে না। ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়া থেকে শুরু করে প্রকৃতির নিজস্ব ক্যানভাসে ফুটে ওঠা আবহমান চিরাচরিত প্রাকৃতিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, কাশফুল শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্যই বাড়াত না, বরং শরতের আগমনি আনন্দকেও দ্বিগুণ করতো। ক্যাম্পাসে আসা পর্যটক ও শিক্ষার্থীদের কাছে এটি ছিল এক ধরনের বিশেষ আকর্ষণ। কিন্তু গত বছরের মতো এবার কাশফুল না থাকায় ক্যাম্পাসের নৈসর্গিক সৌন্দর্যে যেন এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছে।

গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা শান্তা বলেন, ‘প্রতিবছর শরৎ এলেই কাশফুলে ভরে উঠত আমাদের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এটি শুধু সৌন্দর্য বাড়াত না, শিক্ষার্থী ও বাইরের মানুষকেও আকৃষ্ট করত। কিন্তু ফলগাছ লাগানোর নামে পাহাড় কেটে ঝোপঝাড় পরিষ্কার করতে গিয়ে কাশফুল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও আনন্দময় পরিবেশ বিলীন হয়ে পড়ছে। উন্নয়ন ও বৃক্ষরোপণ অবশ্যই জরুরি, তবে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য নষ্ট করে নয়। আমরা চাই, শরৎকালে আবারও কাশফুলে ভরে উঠুক আমাদের প্রিয় ক্যাম্পাস।’

পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী তাসনিয়া পারভেজ সুহিতা বলেন, ‘শরৎ এলে কাশফুলে ভরে উঠত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, যা আমাদের ক্যাম্পাসকে প্রাণবন্ত করত। কিন্তু পাহাড় উজাড় ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে এখন আর কাশফুল আগের মতো ফোটে না। আমরা চাই কর্তৃপক্ষ প্রকৃতি সংরক্ষণে এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষায় সচেতন হোক। পাহাড় ও প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করা গেলে আবারও কাশফুলে ভরে উঠবে আমাদের ক্যাম্পাস।’

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের সংগঠন অভয়ারণ্য কুবি’র সাধারণ সম্পাদক মোঃ আরমান হোসেন বলেন, ‘পাহাড় পরিষ্কারের কারণে কাশফুল আর আগের মতো দেখা যাচ্ছে না, যা আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বড় ক্ষতি। যদিও সেখানে ফলজ গাছ রোপণ একটি ইতিবাচক উদ্যোগ, তবে কাশফুলও আমাদের সৌন্দর্য ও সংস্কৃতির অংশ। তাই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে মিলে একটি ‘সাস্টেইনেবল প্ল্যান’ নিতে চাই, যেখানে পরিবেশ সংরক্ষণ, ফলজ বৃক্ষ রোপণ এবং কাশফুল সংরক্ষণ সবই সমন্বিত থাকবে।’

এ বিষয়ে এস্টেট শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ময়নাল হোসেন বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের নির্দেশনা মেনেই পাহাড়ের টিলা পরিষ্কার করে সেখানে ফলগাছ রোপণ করেছি।’

গাছ রোপণের উদ্যোক্তা ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দিন বলেন, ‘অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আমাদের ক্যাম্পাসে তেমন ফলগাছ নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে ফল খাওয়ার সুযোগ পায় না। এই কারণে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি কোথায় কোথায় ফলগাছ লাগানো যায়। এবার আমরা ১০০ মাল্টা গাছসহ মোট ৪০০ ফলগাছ রোপণ করেছি। এগুলো আসলে শিক্ষার্থীদের জন্যই। ফলের মৌসুমে তারা এসব ফল খেতে পারবে এবং একই সঙ্গে পরিবেশেরও ভারসাম্য বজায় থাকবে।’

কাশফুলের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আসলে এমনভাবে জায়গা পরিষ্কার করতে বলেছি, যাতে কাশফুলের মূল উপড়ে না যায়। যেহেতু সেখানে ফলগাছ লাগানো হয়েছে, তাই জায়গাগুলো পরিষ্কার না করলে গাছগুলো টিকবে না। তবে কাশফুল একেবারে তুলে ফেলা হয়নি। সাময়িক সময়ের জন্য কাশফুল কম দেখা যাচ্ছে, কিন্তু এক বছর পর গাছগুলো বড় হয়ে গেলে ফলগাছও থাকবে, কাশফুলও থাকবে।’

Please Share This Post in Your Social Media

বৃক্ষরোপণের আড়ালে শরতের কাশফুল নিধন

সাজিদুর রহমান, কুবি
Update Time : ১০:০৪:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাংলার আবহমান প্রকৃতিতে শরৎ মানেই নীল আকাশে ভেসে থাকা তুলোর মতো খণ্ড খণ্ড সাদা মেঘ আর মাঠের ধারে হাওয়ায় দোল খাওয়া শুভ্র কাশফুল। কাশফুল যেন নিয়ে আসে প্রকৃতিতে শরৎকালের আগমনি বার্তা। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) ক্যাম্পাসও প্রতিবছর এই সৌন্দর্যে মুখর হয়ে উঠতো।

কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পাশের পাহাড়ি জায়গাগুলোতে ঝাঁক বেঁধে ফুটে উঠত কাশফুল, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বাইরের অনেক দর্শনার্থীকেও টেনে আনত। কাশফুলের ফাঁকে ছবি তোলা, আড্ডা কিংবা প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা হয়ে উঠত ক্যাম্পাসজুড়ে এক অনন্য আয়োজন।

কিন্তু এবার চোখে পড়ছে ভিন্ন এক দৃশ্য। প্রকৃতিতে শরতের আগমনি হাওয়া বইছে বটে, তবে কাশফুলের দেখা মিলছে না আগের মতো। ক্যাম্পাসে ফলজ গাছ রোপণ করতে গিয়ে পাহাড়ি জায়গাগুলোতে যত্রতত্র কাটাছেঁড়ায় উজাড় হয়ে গেছে কাশবন। তাই শরতের সেই সাদা-শুভ্র রূপকথার দৃশ্য এ বছর আর তেমনভাবে ধরা দিচ্ছে না। ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়া থেকে শুরু করে প্রকৃতির নিজস্ব ক্যানভাসে ফুটে ওঠা আবহমান চিরাচরিত প্রাকৃতিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, কাশফুল শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্যই বাড়াত না, বরং শরতের আগমনি আনন্দকেও দ্বিগুণ করতো। ক্যাম্পাসে আসা পর্যটক ও শিক্ষার্থীদের কাছে এটি ছিল এক ধরনের বিশেষ আকর্ষণ। কিন্তু গত বছরের মতো এবার কাশফুল না থাকায় ক্যাম্পাসের নৈসর্গিক সৌন্দর্যে যেন এক ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছে।

গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা শান্তা বলেন, ‘প্রতিবছর শরৎ এলেই কাশফুলে ভরে উঠত আমাদের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এটি শুধু সৌন্দর্য বাড়াত না, শিক্ষার্থী ও বাইরের মানুষকেও আকৃষ্ট করত। কিন্তু ফলগাছ লাগানোর নামে পাহাড় কেটে ঝোপঝাড় পরিষ্কার করতে গিয়ে কাশফুল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও আনন্দময় পরিবেশ বিলীন হয়ে পড়ছে। উন্নয়ন ও বৃক্ষরোপণ অবশ্যই জরুরি, তবে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য নষ্ট করে নয়। আমরা চাই, শরৎকালে আবারও কাশফুলে ভরে উঠুক আমাদের প্রিয় ক্যাম্পাস।’

পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী তাসনিয়া পারভেজ সুহিতা বলেন, ‘শরৎ এলে কাশফুলে ভরে উঠত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, যা আমাদের ক্যাম্পাসকে প্রাণবন্ত করত। কিন্তু পাহাড় উজাড় ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে এখন আর কাশফুল আগের মতো ফোটে না। আমরা চাই কর্তৃপক্ষ প্রকৃতি সংরক্ষণে এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষায় সচেতন হোক। পাহাড় ও প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করা গেলে আবারও কাশফুলে ভরে উঠবে আমাদের ক্যাম্পাস।’

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের সংগঠন অভয়ারণ্য কুবি’র সাধারণ সম্পাদক মোঃ আরমান হোসেন বলেন, ‘পাহাড় পরিষ্কারের কারণে কাশফুল আর আগের মতো দেখা যাচ্ছে না, যা আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বড় ক্ষতি। যদিও সেখানে ফলজ গাছ রোপণ একটি ইতিবাচক উদ্যোগ, তবে কাশফুলও আমাদের সৌন্দর্য ও সংস্কৃতির অংশ। তাই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে মিলে একটি ‘সাস্টেইনেবল প্ল্যান’ নিতে চাই, যেখানে পরিবেশ সংরক্ষণ, ফলজ বৃক্ষ রোপণ এবং কাশফুল সংরক্ষণ সবই সমন্বিত থাকবে।’

এ বিষয়ে এস্টেট শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ময়নাল হোসেন বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের নির্দেশনা মেনেই পাহাড়ের টিলা পরিষ্কার করে সেখানে ফলগাছ রোপণ করেছি।’

গাছ রোপণের উদ্যোক্তা ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দিন বলেন, ‘অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আমাদের ক্যাম্পাসে তেমন ফলগাছ নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে ফল খাওয়ার সুযোগ পায় না। এই কারণে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি কোথায় কোথায় ফলগাছ লাগানো যায়। এবার আমরা ১০০ মাল্টা গাছসহ মোট ৪০০ ফলগাছ রোপণ করেছি। এগুলো আসলে শিক্ষার্থীদের জন্যই। ফলের মৌসুমে তারা এসব ফল খেতে পারবে এবং একই সঙ্গে পরিবেশেরও ভারসাম্য বজায় থাকবে।’

কাশফুলের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আসলে এমনভাবে জায়গা পরিষ্কার করতে বলেছি, যাতে কাশফুলের মূল উপড়ে না যায়। যেহেতু সেখানে ফলগাছ লাগানো হয়েছে, তাই জায়গাগুলো পরিষ্কার না করলে গাছগুলো টিকবে না। তবে কাশফুল একেবারে তুলে ফেলা হয়নি। সাময়িক সময়ের জন্য কাশফুল কম দেখা যাচ্ছে, কিন্তু এক বছর পর গাছগুলো বড় হয়ে গেলে ফলগাছও থাকবে, কাশফুলও থাকবে।’