ঢাকা ১২:১৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন: শিক্ষা, ঐতিহ্য ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের মিলনমেলা।

নিয়ামুল ইসলাম তামিম, বুটেক্স প্রতিনিধি
  • Update Time : ১০:৩৬:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ২০ Time View

প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পর প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স)-এর ঐতিহাসিক প্রথম সমাবর্তন। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত এ সমাবর্তনে অংশ নেন ৪ হাজার ১২৬ জন গ্র্যাজুয়েট। সমাবর্তনকে ঘিরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অভিভাবকদের মাঝে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্যে বুটেক্সের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জুলহাস উদ্দিন বলেন,

“আজকের এই সমাবর্তন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এক স্মরণীয় অধ্যায়। এটি শুধু ডিগ্রি প্রদান নয়, বরং শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ অধ্যবসায়, নিষ্ঠা ও যোগ্যতার স্বীকৃতি।” তিনি দেশের অর্থনীতি ও বস্ত্রশিল্পে বুটেক্সের ক্রমবর্ধমান অবদান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রার দিকনির্দেশনা তুলে ধরেন।

সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, অল্প সময়ের মধ্যেই বুটেক্স প্রমাণ করেছে যে বিশেষায়িত শিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান কীভাবে জাতীয় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তিতে পরিণত হতে পারে। বুটেক্স আজ বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের জন্য দক্ষ, সৎ ও নেতৃত্বগুণসম্পন্ন মানবসম্পদ তৈরির একটি নির্ভরযোগ্য কেন্দ্র।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, ১৫ বছরের যাত্রায় বুটেক্স আজ একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নিয়েছে। দেশের বৈদেশিক আয়ে গুরুত্বপূর্ণ বস্ত্রখাতের জন্য বিশ্বমানের নাগরিক তৈরিতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা প্রশংসনীয়। তিনি নবীন গ্র্যাজুয়েটদের আত্মপরিবর্তন, দায়িত্ববোধ ও চ্যালেঞ্জকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণের আহ্বান জানান।

সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন হংকং পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটির ফাইবার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চেয়ার প্রফেসর অধ্যাপক ড. জুঙ্গাই ওয়াং। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বস্ত্র ও পোশাক খাতে বুটেক্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত। তিনি ‘CQ’ বা ছয়টি গুণ—দক্ষতা, কৌতূহল, যোগাযোগ, সহযোগিতা, অবদান ও সহমর্মিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও টেকসই শিল্পচর্চার পক্ষে কাজ করার আহ্বান জানান নবীন গ্র্যাজুয়েটদের।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বুটেক্স সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ।

সমাবর্তনে অনুষদভিত্তিক অংশগ্রহণের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ। এ অনুষদের ৮৮৭ জন গ্র্যাজুয়েট সমাবর্তনে অংশ নেন। এছাড়া ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ৬৪২ জন, টেক্সটাইল কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ৫৫৭ জন, টেক্সটাইল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ৪৭২ জন এবং সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ৬৪ জন গ্র্যাজুয়েট সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করেন। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অতিথিসহ প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের জন্য প্রস্তুত করা হয় বিশাল সমাবর্তন প্যান্ডেল।

সমাবর্তনে অংশ নেওয়া এক গ্র্যাজুয়েট বলেন,

“দীর্ঘ ১৫ বছর পর বুটেক্সে সমাবর্তন হতে দেখে খুবই আনন্দিত। সিনিয়র-জুনিয়রদের সঙ্গে একসঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ হয়েছে। আগের তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন চোখে পড়েছে। আজকের আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয়।”

সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে গ্র্যাজুয়েটদের পরিবার ও স্বজনদের জন্য ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে পুরো আয়োজন এক আনন্দঘন মিলনমেলায় পরিণত হয়। অনেক সাবেক শিক্ষার্থীকে স্ত্রী-সন্তান ও পিতা-মাতার সঙ্গে সমাবর্তনের স্মরণীয় মুহূর্ত উদযাপন করতে দেখা যায়।

Please Share This Post in Your Social Media

বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন: শিক্ষা, ঐতিহ্য ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের মিলনমেলা।

নিয়ামুল ইসলাম তামিম, বুটেক্স প্রতিনিধি
Update Time : ১০:৩৬:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পর প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স)-এর ঐতিহাসিক প্রথম সমাবর্তন। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত এ সমাবর্তনে অংশ নেন ৪ হাজার ১২৬ জন গ্র্যাজুয়েট। সমাবর্তনকে ঘিরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অভিভাবকদের মাঝে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্যে বুটেক্সের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জুলহাস উদ্দিন বলেন,

“আজকের এই সমাবর্তন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এক স্মরণীয় অধ্যায়। এটি শুধু ডিগ্রি প্রদান নয়, বরং শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ অধ্যবসায়, নিষ্ঠা ও যোগ্যতার স্বীকৃতি।” তিনি দেশের অর্থনীতি ও বস্ত্রশিল্পে বুটেক্সের ক্রমবর্ধমান অবদান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রার দিকনির্দেশনা তুলে ধরেন।

সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, অল্প সময়ের মধ্যেই বুটেক্স প্রমাণ করেছে যে বিশেষায়িত শিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান কীভাবে জাতীয় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তিতে পরিণত হতে পারে। বুটেক্স আজ বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের জন্য দক্ষ, সৎ ও নেতৃত্বগুণসম্পন্ন মানবসম্পদ তৈরির একটি নির্ভরযোগ্য কেন্দ্র।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, ১৫ বছরের যাত্রায় বুটেক্স আজ একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নিয়েছে। দেশের বৈদেশিক আয়ে গুরুত্বপূর্ণ বস্ত্রখাতের জন্য বিশ্বমানের নাগরিক তৈরিতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা প্রশংসনীয়। তিনি নবীন গ্র্যাজুয়েটদের আত্মপরিবর্তন, দায়িত্ববোধ ও চ্যালেঞ্জকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণের আহ্বান জানান।

সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন হংকং পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটির ফাইবার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চেয়ার প্রফেসর অধ্যাপক ড. জুঙ্গাই ওয়াং। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বস্ত্র ও পোশাক খাতে বুটেক্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত। তিনি ‘CQ’ বা ছয়টি গুণ—দক্ষতা, কৌতূহল, যোগাযোগ, সহযোগিতা, অবদান ও সহমর্মিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও টেকসই শিল্পচর্চার পক্ষে কাজ করার আহ্বান জানান নবীন গ্র্যাজুয়েটদের।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বুটেক্স সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ।

সমাবর্তনে অনুষদভিত্তিক অংশগ্রহণের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ। এ অনুষদের ৮৮৭ জন গ্র্যাজুয়েট সমাবর্তনে অংশ নেন। এছাড়া ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ৬৪২ জন, টেক্সটাইল কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ৫৫৭ জন, টেক্সটাইল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ৪৭২ জন এবং সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ৬৪ জন গ্র্যাজুয়েট সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করেন। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অতিথিসহ প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের জন্য প্রস্তুত করা হয় বিশাল সমাবর্তন প্যান্ডেল।

সমাবর্তনে অংশ নেওয়া এক গ্র্যাজুয়েট বলেন,

“দীর্ঘ ১৫ বছর পর বুটেক্সে সমাবর্তন হতে দেখে খুবই আনন্দিত। সিনিয়র-জুনিয়রদের সঙ্গে একসঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ হয়েছে। আগের তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন চোখে পড়েছে। আজকের আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয়।”

সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে গ্র্যাজুয়েটদের পরিবার ও স্বজনদের জন্য ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে পুরো আয়োজন এক আনন্দঘন মিলনমেলায় পরিণত হয়। অনেক সাবেক শিক্ষার্থীকে স্ত্রী-সন্তান ও পিতা-মাতার সঙ্গে সমাবর্তনের স্মরণীয় মুহূর্ত উদযাপন করতে দেখা যায়।