বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম ‘মিয়াজাকি’

- Update Time : ১০:১৪:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫
- / ২১ Time View
‘মিয়াজাকি’ বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম। এ এক অবাক করা বিষয়! ২০১৬ সালে জাপানের ফুকুয়ামায় এক জোড়া আম (এক কেজি) বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা! ২০১৯ সালে এই এক জোড়া আমের দাম ওঠে ৪ লাখ টাকার বেশি। ২০২৩ সালে এক কেজি আম বিক্রি হয় সাড়ে ৪ লক্ষাধিক টাকায়।
এই আম এখন ফলের জগতের ‘তারকা’, বলা হয়ে থাকে বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম। এই মিয়াজাকিকে জাপানি ভাষায় বলা হয় ‘তাইয়ো নো তামাগো’, ইংরেজিতে ‘এগ অব দ্য সান’ অর্থাৎ সূর্যডিম। আমের রঙ সকালের সূর্যের মতো টকটকে লাল। আকৃতি ডিমের মতো। এ জন্যই এমন খেতাব।
এসব না হয় বুঝলাম, কিন্তু এর উচ্চমূল্যের কারণ কী? কী এমন আছে এই আমে? এমন প্রশ্ন মনে ঘুরপাক খাওয়ারই কথা। সব কৌতুহলের অবসান ঘটবে আমটি সম্পর্কে জানার পরই। মূলত বাজারদর নির্ধারণে কোনো জিনিস উচ্চমূল্য হওয়ার জন্য যেসব বিষয় বিবেচিত হয়, মিয়াজাকির ক্ষেত্রে তা বেশ ভালোভাবেই আছে। তাই প্রথমেই বলা যেতে পারে এর বাহ্যিক সৌন্দর্যের কথা। ফলে মিয়াজাকি দেখাও যেন ‘চোখের সুখ’। এরপর অবশ্যই বলতে হবে এর অতুলনীয় স্বাদের কথা। এই আমে ১৫ শতাংশ বা তার বেশি পরিমাণে সুগার থাকে। ফলে খেতে বেশ মিষ্টি ও রসালো। সেই সাথে আঁশবিহীন বলে জিভে বা দাঁতের ফাঁকে আঁশ আটকায় না। আমের ভেতরের অংশ, অর্থাৎ পাল্প অত্যন্ত নরম ও মোলায়েম। মুখে দিলেই গলে যায়। চিবোতে কষ্ট হয় না। মিয়াজাকির গন্ধ? মিষ্টি ফুলের মতো। তবে মোটেই তীব্র নয়, হালকা। পাল্পে থাকে হালকা মধুর সুঘ্রাণ। আর প্রাকৃতিকভাবে পাকানো হয় বলে এর ঘ্রাণ হয় বিশুদ্ধ ও সতেজ।
মিয়াজাকির পুরো চাষপদ্ধতি অত্যন্ত সুনিয়ন্ত্রিত। জাপানের দক্ষিণের অঞ্চল মিয়াজাকি প্রদেশ এই আম চাষের জন্য সর্বাধিক উপযোগী। এই প্রদেশের উষ্ণ জলবায়ু, উর্বর মাটি ও পর্যাপ্ত সূর্যালোকের পাশাপাশি বিশেষ চাষ কৌশলের দরুন একমাত্র এখানেই উৎপাদিত হয় সর্বোচ্চ মানের মিয়াজাকি আম।
এই আমের নামকরণ হয়েছে মিয়াজাকি প্রদেশের নামানুসারেই। মিয়াজাকি প্রদেশের আম চাষিরা সাধারণত গ্রিনহাউজের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে এটি চাষ করেন। গ্রিনহাউজের ভেতর উচ্চ পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ মাটিতে এর চারা লাগানো হয়। নিয়মিত সার ও পানি দেয়ার পাশাপাশি ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা খুব কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে চাষিরা একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা এবং পর্যাপ্ত বায়ুপ্রবাহ নিশ্চিত করেন। ভেতরের বাতাস যেন বেশি আর্দ্র না হয়, সূক্ষ্মভাবে সেটিও লক্ষ রাখেন। এমনকি একটি গাছে একটি আম রাখা কিংবা আমের গায়ে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে সার্বক্ষণিক নিবিড় পরিচর্যার রীতিও আছে সেখানে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে গাছ থেকে বিকাশের সময় প্রায় ৮০ শতাংশ কুঁড়ি কেটে ফেলা হয়, যাতে বাকি ফলগুলো সম্পূর্ণ পুষ্টি পায়। সমান রঙ ও ভর তৈরির জন্য প্রতিটি আমকে তার ওজন ও আকৃতি অনুযায়ী ঝুলিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। পরিপক্ব হয়ে গাছ থেকে প্রাকৃতিকভাবে নিজে নিজে ছিঁড়ে না পড়লে আম পাড়া হয় না।
মিয়াজাকি আম মাত্রই যে লাখ টাকা মূল্যের হবে, তা কিন্তু নয়। এমন দাম হওয়ার জন্য এই আমকে পেতে হয় ‘তাইয়ো নো তামাগো’ তথা ‘সূর্যডিম’ টাইটেল। কিছু নির্দিষ্ট মানদণ্ড উত্তীর্ণ হওয়া সাপেক্ষে এই খেতাব বা ‘ছাড়পত্র’ দেয় মিয়াজাকি অ্যাগ্রিকালচারাল ইকোনমিক ফেডারেশন।
এবার জেনে নেই এর পুষ্টিগুণের কথা। আপনি যদি কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম বা পেটসংক্রান্ত অন্য সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে আপনার এই আম খাওয়া উচিত। এটি হজমের উন্নতি করে এই জাতীয় ব্যাধিগুলো এড়াতে সাহায্য করে। এই আম খেলে আপনার ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ে কখনো চিন্তা করতে হবে না। গরমে এই আম খেলে রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম মিয়াজাকিতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক বৈশিষ্ট্য। এই আমের মধ্যে যে ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে তা ত্বকের জন্য উপকারী। মুখের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। কোলেস্টেরল একটি গুরুতর সমস্যা, যা হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপনি যদি মিয়াজাকি আম খান তাহলে কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করবে। উন্নত চাষ পদ্ধতি, দেখতে অতুলনীয় ও বহুবিধ পুষ্টিগুণের কারণেই এই আম বিশ্বের সবচেয়ে দামি আমের স্বীকৃতি পেয়েছে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়