ঢাকা ০৪:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ

বিশ্বের ‘দরিদ্রতম প্রেসিডেন্ট’ হোসে মুজিকা মারা গেছেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • Update Time : ১১:০৩:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
  • / ৮ Time View

উরুগুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বামপন্থীদের আদর্শিক নেতা হোসে ‘পেপে’ মুজিকা ৮৯ বছর বয়সে মারা গেছেন। খাদ্যনালির ক্যানসারের সঙ্গে এক বছর লড়াইয়ের পর মে মাসের শুরুতে তাকে প্যালিয়েটিভ কেয়ারে রাখা হয়। মাত্র ৩৪ লাখ বাসিন্দার দেশ উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার বৈশ্বিক জনপ্রিয়তা ছিল কল্পনাতীত।

উরুগুয়ের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইয়ামান্দু ওরসি, বলিভিয়ার ইভো মোরালেস, ব্রাজিল সরকার, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ও গুয়াতেমালার প্রেসিডেন্টসহ বহু নেতা মুজিকার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।

উরুগুয়ের বর্তমান রাষ্ট্রপতি ইয়ামান্দু ওরসি এক শোকবার্তায় বলেন, ‘গভীর দুঃখের সঙ্গে আমরা আমাদের কমরেড পেপে মুজিকার প্রয়াণের খবর জানাচ্ছি। প্রেসিডেন্ট, রাজনৈতিক কর্মী, পথপ্রদর্শক এবং নেতা। প্রিয় বন্ধু, আপনাকে আমরা খুব মিস করব।’

২০১০-১৫ সালে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে সাধারণ জীবনযাপনের জন্য মুজিকা পরিচিতি পান ‘বিশ্বের দরিদ্রতম প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে। তিনি বেতনের বেশিরভাগ দান করতেন, স্যান্ডেল পরে সরকারি অনুষ্ঠানে যেতেন এবং একটি ছোট খামারে পুরনো ভক্সওয়াগন গাড়ি নিয়ে বসবাস করতেন।

২০১৪ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও মুজিকা। ছবি: সংগৃহীত

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৬০-এর দশকে তিনি টুপামারোস ন্যাশনাল লিবারেশন মুভমেন্ট (এমএলএন-টি) প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন। এটি একটি বামপন্থী শহুরে গেরিলা গ্রুপ ছিল, যারা হামলা, অপহরণ ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করত। যদিও মুজিকা সবসময় বলতেন, তিনি কখনো কোনো হত্যা করেননি।

কিউবার বিপ্লব ও আন্তর্জাতিক সমাজতন্ত্রে প্রভাবিত হয়ে এমএলএন-টি উরুগুয়ের সরকারের বিরুদ্ধে গোপনে প্রতিরোধ প্রচারণা শুরু করে। যদিও তৎকালীন সরকার সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ছিল, তবুও বামপন্থীরা তাকে ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী বলে মনে করতেন।

এই সময় মুজিকাকে চারবার আটক করা হয়। এর মধ্যে একবার, ১৯৭০ সালে তাকে ছয়বার গুলি করা হয় এবং সেবার মৃত্যুর খুব কাছ থেকে বেঁচে ফেরেন।

তিনি দু’বার কারাগার থেকে পালান। একবার ১০৫ এমএলএন-টি বন্দীর সঙ্গে একটি টানেলের মধ্য দিয়ে পালান। এটি ছিল উরুগুয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পালানোর ঘটনা।

১৯৭৩ সালে উরুগুয়ের সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থান ঘটালে তাকে ‘নয়জন জিম্মি’র একটি দলে রাখা হয়। ১৯৭০ ও ১৯৮০ দশকে মুজিকা ১৪ বছরের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন। এ সময় তিনি নির্যাতনের শিকার হন। বেশির ভাগ সময় তাকে একা রাখা হতো।

১৯৮৫ সালে উরুগুয়ে আবার গণতন্ত্রে ফিরলে তিনি মুক্তি পান।

২০২০ সালে রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার পরেও তার সেই ‘চাকরা’ বা ক্ষুদ্র খামার বামপন্থী রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক এবং অনুরাগীদের তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছিল। মুজিকা ভোগবাদের সংস্কৃতি এবং এর ফলে পৃথিবীর পরিবেশের যে ক্ষতি হয়েছে, তার কঠোর সমালোচক ছিলেন। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘আমরা আত্মঘাতী সমাজ তৈরি করেছি। আপনার কাজ করার সময় আছে, কিন্তু বাঁচার সময় নেই।’

গণতন্ত্র ফিরে আসার পর রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হন। অবসরের পরও তার খামার ছিল বামপন্থীদের তীর্থস্থান। তিনি ভোগবাদ ও পরিবেশবিধ্বংসী সংস্কৃতির কঠোর সমালোচক ছিলেন।

মৃত্যুর আগে তিনি নিজ খামারে প্রিয় কুকুরের পাশে সমাহিত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। স্ত্রী লুসিয়া তোপোলানস্কি এখনও জীবিত আছেন, তবে তাদের কোনো সন্তান নেই।

Please Share This Post in Your Social Media

বিশ্বের ‘দরিদ্রতম প্রেসিডেন্ট’ হোসে মুজিকা মারা গেছেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
Update Time : ১১:০৩:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

উরুগুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বামপন্থীদের আদর্শিক নেতা হোসে ‘পেপে’ মুজিকা ৮৯ বছর বয়সে মারা গেছেন। খাদ্যনালির ক্যানসারের সঙ্গে এক বছর লড়াইয়ের পর মে মাসের শুরুতে তাকে প্যালিয়েটিভ কেয়ারে রাখা হয়। মাত্র ৩৪ লাখ বাসিন্দার দেশ উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার বৈশ্বিক জনপ্রিয়তা ছিল কল্পনাতীত।

উরুগুয়ের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইয়ামান্দু ওরসি, বলিভিয়ার ইভো মোরালেস, ব্রাজিল সরকার, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ও গুয়াতেমালার প্রেসিডেন্টসহ বহু নেতা মুজিকার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।

উরুগুয়ের বর্তমান রাষ্ট্রপতি ইয়ামান্দু ওরসি এক শোকবার্তায় বলেন, ‘গভীর দুঃখের সঙ্গে আমরা আমাদের কমরেড পেপে মুজিকার প্রয়াণের খবর জানাচ্ছি। প্রেসিডেন্ট, রাজনৈতিক কর্মী, পথপ্রদর্শক এবং নেতা। প্রিয় বন্ধু, আপনাকে আমরা খুব মিস করব।’

২০১০-১৫ সালে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে সাধারণ জীবনযাপনের জন্য মুজিকা পরিচিতি পান ‘বিশ্বের দরিদ্রতম প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে। তিনি বেতনের বেশিরভাগ দান করতেন, স্যান্ডেল পরে সরকারি অনুষ্ঠানে যেতেন এবং একটি ছোট খামারে পুরনো ভক্সওয়াগন গাড়ি নিয়ে বসবাস করতেন।

২০১৪ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও মুজিকা। ছবি: সংগৃহীত

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৬০-এর দশকে তিনি টুপামারোস ন্যাশনাল লিবারেশন মুভমেন্ট (এমএলএন-টি) প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন। এটি একটি বামপন্থী শহুরে গেরিলা গ্রুপ ছিল, যারা হামলা, অপহরণ ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করত। যদিও মুজিকা সবসময় বলতেন, তিনি কখনো কোনো হত্যা করেননি।

কিউবার বিপ্লব ও আন্তর্জাতিক সমাজতন্ত্রে প্রভাবিত হয়ে এমএলএন-টি উরুগুয়ের সরকারের বিরুদ্ধে গোপনে প্রতিরোধ প্রচারণা শুরু করে। যদিও তৎকালীন সরকার সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ছিল, তবুও বামপন্থীরা তাকে ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী বলে মনে করতেন।

এই সময় মুজিকাকে চারবার আটক করা হয়। এর মধ্যে একবার, ১৯৭০ সালে তাকে ছয়বার গুলি করা হয় এবং সেবার মৃত্যুর খুব কাছ থেকে বেঁচে ফেরেন।

তিনি দু’বার কারাগার থেকে পালান। একবার ১০৫ এমএলএন-টি বন্দীর সঙ্গে একটি টানেলের মধ্য দিয়ে পালান। এটি ছিল উরুগুয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পালানোর ঘটনা।

১৯৭৩ সালে উরুগুয়ের সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থান ঘটালে তাকে ‘নয়জন জিম্মি’র একটি দলে রাখা হয়। ১৯৭০ ও ১৯৮০ দশকে মুজিকা ১৪ বছরের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন। এ সময় তিনি নির্যাতনের শিকার হন। বেশির ভাগ সময় তাকে একা রাখা হতো।

১৯৮৫ সালে উরুগুয়ে আবার গণতন্ত্রে ফিরলে তিনি মুক্তি পান।

২০২০ সালে রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার পরেও তার সেই ‘চাকরা’ বা ক্ষুদ্র খামার বামপন্থী রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক এবং অনুরাগীদের তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছিল। মুজিকা ভোগবাদের সংস্কৃতি এবং এর ফলে পৃথিবীর পরিবেশের যে ক্ষতি হয়েছে, তার কঠোর সমালোচক ছিলেন। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘আমরা আত্মঘাতী সমাজ তৈরি করেছি। আপনার কাজ করার সময় আছে, কিন্তু বাঁচার সময় নেই।’

গণতন্ত্র ফিরে আসার পর রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হন। অবসরের পরও তার খামার ছিল বামপন্থীদের তীর্থস্থান। তিনি ভোগবাদ ও পরিবেশবিধ্বংসী সংস্কৃতির কঠোর সমালোচক ছিলেন।

মৃত্যুর আগে তিনি নিজ খামারে প্রিয় কুকুরের পাশে সমাহিত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। স্ত্রী লুসিয়া তোপোলানস্কি এখনও জীবিত আছেন, তবে তাদের কোনো সন্তান নেই।