বিদেশী ঋণে নির্মিত পয়োবর্জ্য শোধনাগারের সুফল নেই

- Update Time : ১২:২১:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ১০৩ Time View
বিপুল অংকের বিদেশী ঋণে নির্মিত পয়োবর্জ্য শোধনাগারের সুফল মিলছে না। চীনা এক্সিম ব্যাংকের ৩ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা ঋণ সহায়তায় বাস্তবায়িত হয়েছে দাশেরকান্দি পয়োবর্জ্য শোধনাগার। নির্মাণকাজ শেষে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে দাশেরকান্দি পয়োবর্জ্য শোধনাগার চালু করা হয়।
কিন্তু প্রকল্পটি থেকেও আশানুরূপ সুফল মিলছে না। মূলত সংযোগ লাইন নির্মাণ না হওয়ায় এর আওতাভুক্ত এলাকার সিংহভাগেরই পয়োবর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হচ্ছে না। পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগারটি আওতাভুক্ত এলাকার মাত্র ২৫ শতাংশের বর্জ্য পরিশোধন করতে পারছে। আর লক্ষ্যমাত্রার অধীন ৭৫ শতাংশ এলাকার পয়োবর্জ্য পরিশোধনে কোনো কাজেই আসছে না প্রকল্পটি। ঢাকা ওয়াসা সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রাজধানীর পয়োবর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নে ২০১৩ সালে ঢাকা ওয়াসা একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি করে। ওই মহাপরিকল্পনায় ঢাকার আশপাশের নদ-নদীগুলোর দূষণ রোধে পাঁচটি পয়োবর্জ্য পরিশোধনাগার নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। তারই অংশ হিসেবে হাতিরঝিল থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে আফতাবনগরের কাছে দাশেরকান্দিতে পরিশোধনাগার প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়।
প্রকল্পটিতে চীনা এক্সিম ব্যাংকের কাছ থেকে নেয়া ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকার সমপরিমাণ। আর সরকারের ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ১০৬ কোটি টাকা। তাছাড়া ঢাকা ওয়াসার ব্যয় ১০ কোটি। পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ প্রকল্পটির ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ২০ বছর ধরা হয়েছে। প্রকল্পের সুদহার ২ শতাংশ। ২০২৭ সালে ওই ঋণ পরিশোধ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
সূত্র জানায়, দাশেরকান্দি আধুনিক সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টটি (এসটিপি) আশপাশের মোট ৮০ বর্গকিলোমিটার এলাকার বর্জ্য পরিশোধনের সক্ষমতা রয়েছে। রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা ডিওএইচএস, বসুন্ধরা, বাড্ডা, ভাটারা, বনশ্রী, কুড়িল, সংসদ ভবন এলাকা, শুক্রাবাদ, ফার্মগেট, তেজগাঁও, আফতাবনগর, নিকেতন, সাঁতারকুল ও হাতিরঝিল এলাকার সৃষ্ট পয়োবর্জ্য পরিশোধন করে বালু নদে নিষ্কাশনের মাধ্যমে পানি ও পরিবেশ দূষণ রোধের লক্ষ্যে প্লান্টটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে প্লান্টটির মাধ্যমে ২০ বর্গকিলোমিটারেরও কম এলাকার বর্জ্য পরিশোধন হচ্ছে। আওতাভুক্ত এলাকাগুলোর পয়োবর্জ্য দাশেরকান্দি পর্যন্ত নেয়ার মতো সংযোগ লাইন নির্মাণ না করায় ৭৫ শতাংশেরও বেশি এলাকার বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে কেবল হাতিরঝিলের দুই পাশের এলাকাগুলো থেকে বর্জ্য দাশেরকান্দিতে যাচ্ছে। মগবাজার, ইস্কাটন, নয়াটোলা, মৌচাক, মহানগর হাউজিং, কলাবাগান, ধানমন্ডির একাংশ, তেঁজগাও ও নাখালপাড়া এলাকার পয়োবর্জ্য সেখানে পরিশোধন হচ্ছে। তবে বাস্তবে আরো কম এলাকার বর্জ্য দাশেরকান্দিতে যাচ্ছে।
মূলত দুই দশক আগে মগবাজার ও তেজগাঁওসংলগ্ন এলাকায় নির্মিত সুয়ারেজ লাইনের অল্প কিছু পয়োবর্জ্য সেখানে যাচ্ছে। আবার ওই লাইনগুলোও এখন নতুন করে স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। ৬২ দশমিক ২ একর জমির ওপর নির্মিত দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগারের প্রতিদিন ৫০ লাখ টন পয়োবর্জ্য পরিশোধনের সক্ষমতা রয়েছে।
এদিকে মগবাজার ও তেজগাঁওয়ের সংশ্লিষ্ট এলাকার পয়োবর্জ্য পরিশোধনের জন্য প্রতি বছর ব্যয় হচ্ছে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১৭২ কোটি টাকা, যেখানে ব্যয় হয়েছে ১৪০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে প্লান্টটি চালানোর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৯৬ কোটি টাকা। এতো বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়েও সক্ষমতার মাত্র ২৫ শতাংশ এলাকার বর্জ্য শোধন হচ্ছে। যদিও দাবি করা হচ্ছে সামনের বছর থেকে খরচের পরিমাণ ৫০ কোটি টাকার মতো কমে আসবে। পাশাপাশি ২০৩৫ সালে প্লান্টের সক্ষমতার পুরোটাই ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিপুল অর্থ ব্যয়ে ওয়াসা পয়ঃশোধনাগার করলেও পয়োবর্জ্য প্লান্ট পর্যন্ত যাওয়ার সংযোগ লাইন করা হয়নি। ফলে হাতিরঝিলের আশপাশের কয়েকটি এলাকার পয়োবর্জ্য পরিশোধন হচ্ছে। অথচ প্লান্টটিতে কেবল পয়োবর্জ্যই শোধন করার কথা। কিন্তু সেখানে এখন পয়োবর্জ্যের সঙ্গে ড্রেনের পানি, বৃষ্টির পানি, গৃহস্থালি ব্যবহার্য পানিও যাচ্ছে। তাতে দাশেরকান্দি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণের উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।
এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুর রহমান জানান, ‘দাশেরকান্দি প্লান্টের জন্য পৃথক কোনো সংযোগ লাইন নেই। সেটিকে পূর্ণমাত্রায় ব্যবহার করার জন্য সংযোগ লাইন নির্মাণের বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আর পয়ঃসংযোগ না করেই এতো বিপুল বিনিয়োগের প্লান্ট নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। পুরো প্রকল্পটিই রিভিউ করা হচ্ছে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়