ঢাকা ০৪:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিতর্কিত উপদেষ্টাদের পদত্যাগ চায় বিএনপি

রাজনীতি ডেস্ক
  • Update Time : ১০:৪৬:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫
  • / ৫৭ Time View

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে যমুনার সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপির নেতারা। ছবিঃ সংগৃহীত

সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

আজ শনিবার রাতে যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে লিখিতভাবে এই দাবি জানিয়েছে দলটি।

বৈঠক শেষে যমুনার সামনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘পদত্যাগের ব্যাপারে আমরা লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছি, আগেও জানিয়েছি।

নিরাপত্তা উপদেষ্টা (খলিলুর রহমান) এবং দুজন ছাত্র উপদেষ্টার (আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলম) কারণে এই সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তাঁদের বাদ দেওয়ার জন্য আজকেও লিখিত বক্তব্য দিয়েছি, মুখেও বলেছি।’

এ বিষয়ে কোনো আশ্বাস দেওয়া হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আশ্বাস তাঁরা দেখবেন। আমরা আমাদের বক্তব্য দিয়েছি।’

সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের (পথনকশা) আশ্বাস পেয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সুনির্দিষ্টভাবে এমন কোনো কথা হয়নি। তিনি সুনির্দিষ্টভাবে জানাননি। আমরা আমাদের দাবি জানিয়েছি। হয়তোবা তাঁরা তাঁদের প্রেস উইংয়ের মাধ্যমে জানাবেন। সে জন্য আমরা অপেক্ষা করব। এখন প্রতিক্রিয়া জানানোর দরকার নেই। তাঁর প্রেস উইং কী বলে, তারপর আমরা প্রতিক্রিয়া দেব।’

মূলত সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিন বিষয়ের ওপর বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি যমুনার সামনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংস্কারের বিষয়ে আমরা পরিষ্কার এবং তাঁরা একমত হয়েছেন। সংস্কার যেখানে ঐকমত্যের ভিত্তিতে হওয়ার কথা, তার ভিত্তিতে সংস্কারকাজ সম্পন্ন হবে এবং সেই কাজ অতি সহসা সম্পন্ন করা সম্ভব। এখানে কোনো দ্বিমত পোষণ করেননি। বিচারব্যবস্থা বিচার বিভাগ করবে এবং বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারে যে আলোচনা হয়েছে, এখানেও তাঁদের কোনো দ্বিমত নেই। সুতরাং ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন করা সম্ভব, এই আলোচনাও হয়েছে।’

সাংবাদিকদের সঙ্গে যমুনার সামনে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানও। তিনি বলেন, ‘যদি দ্রুত নির্বাচন দেওয়া হয়, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলেছি যে আজকে বাংলাদেশে যে নৈরাজ্য হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবনতি হচ্ছে, এক অ্যানাউন্সমেন্টের (ঘোষণা) ফলে বাংলাদেশে শান্তিশৃঙ্খলা এবং গণতন্ত্র ফিরে আসবে।’

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে যমুনার সামনে একটি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বিএনপির প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়া দলের স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘যেকোনো অসিলায় নির্বাচন যত বিলম্ব করা হবে, আমরা মনে করি, জাতির কাছে আবার স্বৈরাচার পুনরায় ফিরে আসার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। এর দায়দায়িত্ব বর্তমান সরকার এবং তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ওপরে বর্তাবে।’

খন্দকার মোশাররফ বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে, অন্তবর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা। বিএনপি প্রথম থেকেই একটি সুস্পষ্ট জাতীয় নির্বাচনী রোডম্যাপ (পথনকশা) দাবি করে আসছে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন করতে হবে। বিএনপির প্রতিটি নেতা-কর্মী পারিবারিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এ জন্য আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি সবচেয়ে বেশি বিএনপির। এই বিচারপ্রক্রিয়া কোনোভাবে অসম্পন্ন থেকে গেলে বিএনপি সরকারে গেলে তা বিচারের আওতায় এনে স্বাধীন বিচার বিভাগের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করবে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, তাঁরা কখনোই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চাননি, বরং প্রথম দিন থেকেই এই সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে বিএনপি।

আজ শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পর প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় যান বিএনপির ওই চার নেতা। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন তাঁরা। বৈঠকে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।

Please Share This Post in Your Social Media

বিতর্কিত উপদেষ্টাদের পদত্যাগ চায় বিএনপি

রাজনীতি ডেস্ক
Update Time : ১০:৪৬:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

আজ শনিবার রাতে যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে লিখিতভাবে এই দাবি জানিয়েছে দলটি।

বৈঠক শেষে যমুনার সামনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘পদত্যাগের ব্যাপারে আমরা লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছি, আগেও জানিয়েছি।

নিরাপত্তা উপদেষ্টা (খলিলুর রহমান) এবং দুজন ছাত্র উপদেষ্টার (আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলম) কারণে এই সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তাঁদের বাদ দেওয়ার জন্য আজকেও লিখিত বক্তব্য দিয়েছি, মুখেও বলেছি।’

এ বিষয়ে কোনো আশ্বাস দেওয়া হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আশ্বাস তাঁরা দেখবেন। আমরা আমাদের বক্তব্য দিয়েছি।’

সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের (পথনকশা) আশ্বাস পেয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সুনির্দিষ্টভাবে এমন কোনো কথা হয়নি। তিনি সুনির্দিষ্টভাবে জানাননি। আমরা আমাদের দাবি জানিয়েছি। হয়তোবা তাঁরা তাঁদের প্রেস উইংয়ের মাধ্যমে জানাবেন। সে জন্য আমরা অপেক্ষা করব। এখন প্রতিক্রিয়া জানানোর দরকার নেই। তাঁর প্রেস উইং কী বলে, তারপর আমরা প্রতিক্রিয়া দেব।’

মূলত সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিন বিষয়ের ওপর বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি যমুনার সামনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংস্কারের বিষয়ে আমরা পরিষ্কার এবং তাঁরা একমত হয়েছেন। সংস্কার যেখানে ঐকমত্যের ভিত্তিতে হওয়ার কথা, তার ভিত্তিতে সংস্কারকাজ সম্পন্ন হবে এবং সেই কাজ অতি সহসা সম্পন্ন করা সম্ভব। এখানে কোনো দ্বিমত পোষণ করেননি। বিচারব্যবস্থা বিচার বিভাগ করবে এবং বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারে যে আলোচনা হয়েছে, এখানেও তাঁদের কোনো দ্বিমত নেই। সুতরাং ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন করা সম্ভব, এই আলোচনাও হয়েছে।’

সাংবাদিকদের সঙ্গে যমুনার সামনে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানও। তিনি বলেন, ‘যদি দ্রুত নির্বাচন দেওয়া হয়, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলেছি যে আজকে বাংলাদেশে যে নৈরাজ্য হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবনতি হচ্ছে, এক অ্যানাউন্সমেন্টের (ঘোষণা) ফলে বাংলাদেশে শান্তিশৃঙ্খলা এবং গণতন্ত্র ফিরে আসবে।’

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে যমুনার সামনে একটি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান বিএনপির প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়া দলের স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘যেকোনো অসিলায় নির্বাচন যত বিলম্ব করা হবে, আমরা মনে করি, জাতির কাছে আবার স্বৈরাচার পুনরায় ফিরে আসার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। এর দায়দায়িত্ব বর্তমান সরকার এবং তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ওপরে বর্তাবে।’

খন্দকার মোশাররফ বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে, অন্তবর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা। বিএনপি প্রথম থেকেই একটি সুস্পষ্ট জাতীয় নির্বাচনী রোডম্যাপ (পথনকশা) দাবি করে আসছে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন করতে হবে। বিএনপির প্রতিটি নেতা-কর্মী পারিবারিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এ জন্য আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি সবচেয়ে বেশি বিএনপির। এই বিচারপ্রক্রিয়া কোনোভাবে অসম্পন্ন থেকে গেলে বিএনপি সরকারে গেলে তা বিচারের আওতায় এনে স্বাধীন বিচার বিভাগের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করবে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, তাঁরা কখনোই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চাননি, বরং প্রথম দিন থেকেই এই সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে বিএনপি।

আজ শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পর প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় যান বিএনপির ওই চার নেতা। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন তাঁরা। বৈঠকে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।