ঢাকা ১২:৩১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ

বিটিভিতে নিয়োগ বাণিজ্যের পাঁয়তারা

বিশেষ প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৮:১৪:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৪
  • / ২৩ Time View

বিটিভিতে অনিয়ম দুর্নীতি বা বৈষম্য দিন দিন বেড়েই চলছে। ৬৪ জেলা প্রতিনিধি ও তিনজন বিশেষ প্রতিনিধি চাকুরিচ্যুত করার নামে নিয়োগ বাণিজ্যের পায়ঁতারা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একইভাবে নিজেদের পকেটের লোক নিয়োগের ক্ষেত্র তৈরী করেতে ঢাকায় ১৩ জন রিপোর্টারকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। শ্রম আইনের বিধি বিধানের তোয়াক্কা না করে শুধুমাত্র কতিপয় কর্মকর্তার ব্যক্তিগত আগ্রহে এসব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আর সবকিছুর নাটের গুরু বিটিভির উপ-মহাপরিচালক ড. সৈয়দা তাসমিনা আহমেদ ও মুখ্য বার্তা সম্পাদক মুন্সী ফরিদুজ্জামানসহ কয়েকজন সুবিধাভোগি কর্মকর্তা-কর্মচারি। বিটিভি থেকে চাকরি হারানোর পর এরই মধ্যে ৫ জন রিপোর্টার আদালতে রিট করেছেন।

জানা গেছে, বিটিভিতে কর্মরত ৬৪ জেলা প্রতিনিধি ও তিনজন বিশেষ প্রতিনিধি মিলিয়ে মোট ৬৭ জনকে চাকরিচ্যুত করেছে বাংলাদেশ টেলিভিশন। কোন রকম কারণ দর্শানো ছাড়াই এক আদেশে সকল জেলা প্রতিনিধির নিয়োগ বাতিল করা হয়। গত ৩ নভেম্বর নতুন জেলা প্রতিনিধি নিয়োগের জন্য বিটিভির ওয়েবসাইটে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

বিটিভি কর্তৃপক্ষের এমন হটকারী সিদ্ধান্তে চাকরি হারানো জেলা প্রতিনিধিগণ পরিবার নিয়ে অথৈ সাগরে নিমজ্জিত। তাদের একটাই প্রশ্ন, কি কারণে তাদের সকলের নিয়োগ একসঙ্গে বাতিল করা হলো? কার ইন্ধনে বা আদেশে ঘটানো হলো এমন কাণ্ড? কর্তৃপক্ষ বলছেন, সরকার থেকে তাদের উপর চাপ রয়েছে এবং সেই চাপেই তারা এমনটি করতে বাধ্য হয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলার প্রতিটি সংবাদ প্রচারের জন্য বিটিভির কয়েকজন প্রযোজককে ঘুষ দিতে হয়েছে। প্রযোজকদের নিয়মিত ঘুষ না দিলে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদও প্রচার করা হয় না। অথচ গ্রামবাংলার সংবাদে ঘুষের বিনিময়ে কর্পোরেট সংবাদও প্রচার হচ্ছে। ওইসব প্রযোজক এবং কথিত দুই কর্মকর্তা নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে লাভবান হতেই পুরনো সব জেলা প্রতিনিধিকে চাকুরিচ্যুত করেছেন। চাকুরিচ্যুত কয়েকজন জেলা প্রতিনিধি বিটিভির উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেন, তাদেরকে পুনরায় আবেদন করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ঢালাওভাবে চাকরিচ্যুত করা সম্পূর্ণ অনৈতিক। কিন্তু অনেক জেলা প্রতিনিধির চাকরি ইতিমধ্যে ২০ বছর হয়েছে। যারা আওয়ামী লীগ সরকারের আগে থেকেই বিটিভিতে কর্মরত। অনেকের আবার অবসরের বাকি আর মাত্র কয়েক মাস বা কয়েক বছর।

বিটিভির জেলা প্রতিনিধি হওয়ার কারণে জেলা প্রতিনিধিগণ নিজ নিজ এলাকায় সর্বমহলে সম্মানিত ব্যক্তি। হঠাৎ তাদের চাকরি চলে যাওয়ায় তারা সামাজিকভাবে অবমূল্যায়িত হচ্ছেন এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। যারা আওয়ামী লীগ সরকারের আগে বিটিভিতে যোগদান করেছে তাদের প্রশ্ন, কেন তাদেরকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলো? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছেন সকলেই। কিন্তু বিটিভির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কেউ এর সঠিক উত্তর দিচ্ছেন না। উপরের দোহাই দিলেও সেই উপরের কে বা কারা তা একমাত্র তারাই জানে।

এমন হঠকারী সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাহত হচ্ছে দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সংবাদের প্রচার। দেশ ও জনপদের সংবাদ যেখানে আগে গ্রামবাংলার মানুষের কথা বলা হতো, সেই সংবাদে এখন আর নেই গ্রামবাংলার মানুষের কথা। কার ইন্ধনে বা প্ররোচনায় ৬৪ জেলার সংবাদ প্রতিনিধিকে একযোগে বাতিলের সিদ্ধান্ত হলো, দেশ ও জনপদের সংবাদের প্রচারে কারা ব্যাঘাত ঘটালো এবং সারাদেশে জেলা প্রতিনিধিদের মাঝে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করলো? কি তাদের উদ্দেশ্য? এটি খুঁজে বের করে দ্রুত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান জেলা প্রতিনিধিরা।

এ বিষয়ে বিটিভির সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের মতামত জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের মতামত পাওয়া যায়নি।

Please Share This Post in Your Social Media

বিটিভিতে নিয়োগ বাণিজ্যের পাঁয়তারা

বিশেষ প্রতিনিধি
Update Time : ০৮:১৪:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৪

বিটিভিতে অনিয়ম দুর্নীতি বা বৈষম্য দিন দিন বেড়েই চলছে। ৬৪ জেলা প্রতিনিধি ও তিনজন বিশেষ প্রতিনিধি চাকুরিচ্যুত করার নামে নিয়োগ বাণিজ্যের পায়ঁতারা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একইভাবে নিজেদের পকেটের লোক নিয়োগের ক্ষেত্র তৈরী করেতে ঢাকায় ১৩ জন রিপোর্টারকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। শ্রম আইনের বিধি বিধানের তোয়াক্কা না করে শুধুমাত্র কতিপয় কর্মকর্তার ব্যক্তিগত আগ্রহে এসব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আর সবকিছুর নাটের গুরু বিটিভির উপ-মহাপরিচালক ড. সৈয়দা তাসমিনা আহমেদ ও মুখ্য বার্তা সম্পাদক মুন্সী ফরিদুজ্জামানসহ কয়েকজন সুবিধাভোগি কর্মকর্তা-কর্মচারি। বিটিভি থেকে চাকরি হারানোর পর এরই মধ্যে ৫ জন রিপোর্টার আদালতে রিট করেছেন।

জানা গেছে, বিটিভিতে কর্মরত ৬৪ জেলা প্রতিনিধি ও তিনজন বিশেষ প্রতিনিধি মিলিয়ে মোট ৬৭ জনকে চাকরিচ্যুত করেছে বাংলাদেশ টেলিভিশন। কোন রকম কারণ দর্শানো ছাড়াই এক আদেশে সকল জেলা প্রতিনিধির নিয়োগ বাতিল করা হয়। গত ৩ নভেম্বর নতুন জেলা প্রতিনিধি নিয়োগের জন্য বিটিভির ওয়েবসাইটে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

বিটিভি কর্তৃপক্ষের এমন হটকারী সিদ্ধান্তে চাকরি হারানো জেলা প্রতিনিধিগণ পরিবার নিয়ে অথৈ সাগরে নিমজ্জিত। তাদের একটাই প্রশ্ন, কি কারণে তাদের সকলের নিয়োগ একসঙ্গে বাতিল করা হলো? কার ইন্ধনে বা আদেশে ঘটানো হলো এমন কাণ্ড? কর্তৃপক্ষ বলছেন, সরকার থেকে তাদের উপর চাপ রয়েছে এবং সেই চাপেই তারা এমনটি করতে বাধ্য হয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলার প্রতিটি সংবাদ প্রচারের জন্য বিটিভির কয়েকজন প্রযোজককে ঘুষ দিতে হয়েছে। প্রযোজকদের নিয়মিত ঘুষ না দিলে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদও প্রচার করা হয় না। অথচ গ্রামবাংলার সংবাদে ঘুষের বিনিময়ে কর্পোরেট সংবাদও প্রচার হচ্ছে। ওইসব প্রযোজক এবং কথিত দুই কর্মকর্তা নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে লাভবান হতেই পুরনো সব জেলা প্রতিনিধিকে চাকুরিচ্যুত করেছেন। চাকুরিচ্যুত কয়েকজন জেলা প্রতিনিধি বিটিভির উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেন, তাদেরকে পুনরায় আবেদন করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ঢালাওভাবে চাকরিচ্যুত করা সম্পূর্ণ অনৈতিক। কিন্তু অনেক জেলা প্রতিনিধির চাকরি ইতিমধ্যে ২০ বছর হয়েছে। যারা আওয়ামী লীগ সরকারের আগে থেকেই বিটিভিতে কর্মরত। অনেকের আবার অবসরের বাকি আর মাত্র কয়েক মাস বা কয়েক বছর।

বিটিভির জেলা প্রতিনিধি হওয়ার কারণে জেলা প্রতিনিধিগণ নিজ নিজ এলাকায় সর্বমহলে সম্মানিত ব্যক্তি। হঠাৎ তাদের চাকরি চলে যাওয়ায় তারা সামাজিকভাবে অবমূল্যায়িত হচ্ছেন এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। যারা আওয়ামী লীগ সরকারের আগে বিটিভিতে যোগদান করেছে তাদের প্রশ্ন, কেন তাদেরকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলো? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছেন সকলেই। কিন্তু বিটিভির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কেউ এর সঠিক উত্তর দিচ্ছেন না। উপরের দোহাই দিলেও সেই উপরের কে বা কারা তা একমাত্র তারাই জানে।

এমন হঠকারী সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাহত হচ্ছে দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সংবাদের প্রচার। দেশ ও জনপদের সংবাদ যেখানে আগে গ্রামবাংলার মানুষের কথা বলা হতো, সেই সংবাদে এখন আর নেই গ্রামবাংলার মানুষের কথা। কার ইন্ধনে বা প্ররোচনায় ৬৪ জেলার সংবাদ প্রতিনিধিকে একযোগে বাতিলের সিদ্ধান্ত হলো, দেশ ও জনপদের সংবাদের প্রচারে কারা ব্যাঘাত ঘটালো এবং সারাদেশে জেলা প্রতিনিধিদের মাঝে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করলো? কি তাদের উদ্দেশ্য? এটি খুঁজে বের করে দ্রুত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান জেলা প্রতিনিধিরা।

এ বিষয়ে বিটিভির সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের মতামত জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের মতামত পাওয়া যায়নি।