ঢাকা ০১:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ৩০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিটরুটের যত উপকারিতা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১১:০৫:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫
  • / ২৮ Time View

বিটরুট,

বিটরুট নামের গাঢ় গোলাপি বা লালচে রঙের সবজিটি এখনও আমাদের দেশে খুব পরিচিত না। বাজারে দেখলেও কিনতে চান না অনেকে। শীতকালে এ সবজির উৎপাদন বেশি হলেও বর্তমানে সবসময়ই এ সবজির দেখা মেলে। বিভিন্ন পুষ্টিগুণ ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন এ সবজিটিকে সুপারফুডও বলা হয়ে থাকে। আসুন পুষ্টিবিদের কাছ থেকে জেনে নিই বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।

বিটরুটের পুষ্টি উপাদান

বিটরুট ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে ভরপুর। আয়রন, জিংক, আয়োডিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফোলেট, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি ইত্যাদি উপাদান আছে এতে। এতে আরও রয়েছে প্রচুর ফাইবার ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট।

কীভাবে খাবেন

বিটরুট কাঁচা এবং রান্না করে দুভাবেই খাওয়া যায়। কাঁচা খাওয়া হলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। বিটরুটের জুস, স্মুদি এবং সালাদ বানিয়ে খেতে পারেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সবজির সঙ্গে যোগ করে রান্না করে খেতে পারেন।

উপকারিতা

বিটরুটের উপকারিতা জেনে নেই –

বিটরুট প্রাকৃতিকভাবে হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে

বিটরুটে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রেট আছে। নাইট্রেট রক্তনালিকে শিথিল করে। এতে রক্তসঞ্চালন সহজ হয়। তাই বিটরুট খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমে।

ব্যায়ামের পারফরম্যান্সে উন্নতি ঘটায়

দৌড়বিদ ও খেলোয়াড়েরা বিটরুটের জুস খান। কারণ, এটি শরীরে অক্সিজেন এফিশিয়েন্সি বাড়ায়। কোনো কাজ করার সময় আপনার শরীর কতটা ভালোভাবে অক্সিজেন ব্যবহার করতে পারে, সেটাই অক্সিজেন এফিশিয়েন্সি। অক্সিজেন এফিশিয়েন্সি বাড়লে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যায়াম বা খেলাধুলা করা যায়। সহজে ক্লান্তি আসে না।

যকৃতের ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দেয়

বিটরুটে বিটেইনস নামের উপাদান থাকে। এটি যকৃতকে কর্মক্ষম রাখে। শরীর থেকে সহজেই ক্ষতিকর পদার্থগুলো বেরিয়ে যায়।

হজমে সহায়তা করে

বিটরুটের আঁশ পেটের জন্য ভালো। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। পরিপাকতন্ত্র সুস্থ থাকে।

মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়

বিটরুটের নাইট্রেট মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চালন বাড়ায়। এতে মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হয়। স্মৃতিশক্তি বাড়ে। বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ আরও দক্ষতার সঙ্গে করা সম্ভব হয়। এ কারণেই একটু বয়সীদের জন্য বিটরুট এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উপকারী।

রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়

বিটরুটে আছে প্রচুর ভিটামিন সি, আয়রন ও ফোলেট। এসব উপাদান রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এবং শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রাখে।

ত্বক সুন্দর করে

বিটরুটে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রদাহরোধী যৌগ আছে। এসব যৌগ ফ্রি র‍্যাডিক্যাল প্রতিরোধ করে। ত্বক হয় পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।

ওজন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে পারে

বিটরুটে ক্যালরি কম, কিন্ত আঁশ বেশি। তাই বিটরুট খেলে পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে। এতে ওজন কমানো সহজ হয়।

প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ করে

বিটরুটে রয়েছে বিটালেইনস। এই যৌগ বিভিন্ন রোগ থেকে সৃষ্ট দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ নির্মূলে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে।

ডিটক্স প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে

নিয়মিত বিটরুট খেলে ডিটক্স, অর্থাৎ শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান বের হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ার উন্নতি হয়। শরীর থাকে ঝরঝরে ও প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ।

কারা খাবেন না

  • বিটরুট শরীরের জন্য অনেক উপকারী হলেও একটানা নিয়মিত না খেয়ে সপ্তাহে ৪-৫ দিন খাওয়া ভালো।
  • যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা আছে তাদের জন্য বিটরুট ক্ষতিকর। কারণ এটি রক্তচাপ আরও কমিয়ে দেয়।
  • অনেকের বিটরুটে অ্যালার্জি হয়ে থাকে। যার ফলে ত্বকে ফুসকুড়ি, চুলকানি, জ্বালাপোড়া হতে পারে। অ্যালার্জির সমস্যা হলে এটি খাওয়া উচিত না।
  • যারা কিডনিতে পাথরের সমস্যায় ভুগছেন তাদের বিট খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • ডায়াবেটিস থাকলে বিট খাওয়া যাবে না। বিটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অত্যন্ত বেশি। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাবে দ্রুত।

তাই যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তারা বিটরুট খাদ্যতালিকায় রাখতে চাইলে অবশ্যই চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেবেন।

Please Share This Post in Your Social Media

বিটরুটের যত উপকারিতা

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update Time : ১১:০৫:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫

বিটরুট নামের গাঢ় গোলাপি বা লালচে রঙের সবজিটি এখনও আমাদের দেশে খুব পরিচিত না। বাজারে দেখলেও কিনতে চান না অনেকে। শীতকালে এ সবজির উৎপাদন বেশি হলেও বর্তমানে সবসময়ই এ সবজির দেখা মেলে। বিভিন্ন পুষ্টিগুণ ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন এ সবজিটিকে সুপারফুডও বলা হয়ে থাকে। আসুন পুষ্টিবিদের কাছ থেকে জেনে নিই বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।

বিটরুটের পুষ্টি উপাদান

বিটরুট ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে ভরপুর। আয়রন, জিংক, আয়োডিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফোলেট, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি ইত্যাদি উপাদান আছে এতে। এতে আরও রয়েছে প্রচুর ফাইবার ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট।

কীভাবে খাবেন

বিটরুট কাঁচা এবং রান্না করে দুভাবেই খাওয়া যায়। কাঁচা খাওয়া হলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। বিটরুটের জুস, স্মুদি এবং সালাদ বানিয়ে খেতে পারেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সবজির সঙ্গে যোগ করে রান্না করে খেতে পারেন।

উপকারিতা

বিটরুটের উপকারিতা জেনে নেই –

বিটরুট প্রাকৃতিকভাবে হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে

বিটরুটে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রেট আছে। নাইট্রেট রক্তনালিকে শিথিল করে। এতে রক্তসঞ্চালন সহজ হয়। তাই বিটরুট খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমে।

ব্যায়ামের পারফরম্যান্সে উন্নতি ঘটায়

দৌড়বিদ ও খেলোয়াড়েরা বিটরুটের জুস খান। কারণ, এটি শরীরে অক্সিজেন এফিশিয়েন্সি বাড়ায়। কোনো কাজ করার সময় আপনার শরীর কতটা ভালোভাবে অক্সিজেন ব্যবহার করতে পারে, সেটাই অক্সিজেন এফিশিয়েন্সি। অক্সিজেন এফিশিয়েন্সি বাড়লে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যায়াম বা খেলাধুলা করা যায়। সহজে ক্লান্তি আসে না।

যকৃতের ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দেয়

বিটরুটে বিটেইনস নামের উপাদান থাকে। এটি যকৃতকে কর্মক্ষম রাখে। শরীর থেকে সহজেই ক্ষতিকর পদার্থগুলো বেরিয়ে যায়।

হজমে সহায়তা করে

বিটরুটের আঁশ পেটের জন্য ভালো। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। পরিপাকতন্ত্র সুস্থ থাকে।

মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়

বিটরুটের নাইট্রেট মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চালন বাড়ায়। এতে মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হয়। স্মৃতিশক্তি বাড়ে। বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ আরও দক্ষতার সঙ্গে করা সম্ভব হয়। এ কারণেই একটু বয়সীদের জন্য বিটরুট এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উপকারী।

রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়

বিটরুটে আছে প্রচুর ভিটামিন সি, আয়রন ও ফোলেট। এসব উপাদান রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এবং শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রাখে।

ত্বক সুন্দর করে

বিটরুটে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রদাহরোধী যৌগ আছে। এসব যৌগ ফ্রি র‍্যাডিক্যাল প্রতিরোধ করে। ত্বক হয় পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।

ওজন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে পারে

বিটরুটে ক্যালরি কম, কিন্ত আঁশ বেশি। তাই বিটরুট খেলে পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে। এতে ওজন কমানো সহজ হয়।

প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ করে

বিটরুটে রয়েছে বিটালেইনস। এই যৌগ বিভিন্ন রোগ থেকে সৃষ্ট দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ নির্মূলে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে।

ডিটক্স প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে

নিয়মিত বিটরুট খেলে ডিটক্স, অর্থাৎ শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান বের হয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ার উন্নতি হয়। শরীর থাকে ঝরঝরে ও প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ।

কারা খাবেন না

  • বিটরুট শরীরের জন্য অনেক উপকারী হলেও একটানা নিয়মিত না খেয়ে সপ্তাহে ৪-৫ দিন খাওয়া ভালো।
  • যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা আছে তাদের জন্য বিটরুট ক্ষতিকর। কারণ এটি রক্তচাপ আরও কমিয়ে দেয়।
  • অনেকের বিটরুটে অ্যালার্জি হয়ে থাকে। যার ফলে ত্বকে ফুসকুড়ি, চুলকানি, জ্বালাপোড়া হতে পারে। অ্যালার্জির সমস্যা হলে এটি খাওয়া উচিত না।
  • যারা কিডনিতে পাথরের সমস্যায় ভুগছেন তাদের বিট খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • ডায়াবেটিস থাকলে বিট খাওয়া যাবে না। বিটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অত্যন্ত বেশি। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাবে দ্রুত।

তাই যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তারা বিটরুট খাদ্যতালিকায় রাখতে চাইলে অবশ্যই চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেবেন।