বিচার বিভাগ সংস্কারে প্রধান বিচারপতির রোডম্যাপ জনগণকে আশা দেখিয়েছে

- Update Time : ০৭:২৭:০৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫
- / ১২৩ Time View
বাংলাদেশে ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সংঘটিত অবিস্মরণীয় গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে দেশের বিচার বিভাগের সংস্কারের একটি জোরালো দাবি জনমানসে উত্থাপিত হয়। কারণ জুলাই অভ্যুত্থান ছিল মূলত ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার এক যৌথ আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন, যা ন্যায়ভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের অপরিহার্য উপাদানও বটে। এই পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ২০২৪ সালের ১০ আগস্ট বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বাংলাদেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, যা জাতির বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করে। শনিবার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়।
এতে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতি হিসেবে তিনি এমন এক কঠিন সময়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন যখন বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা পর্বতসম এবং বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্গঠন ছিল এক অপরিহার্য সময়ের দাবি। এমন এক প্রেক্ষাপটে জনগণের প্রত্যাশা এবং জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে সামনে রেখে প্রধান বিচারপতি ২০২৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন, যার মাধ্যমে বিচারব্যবস্থাকে আধুনিক, দক্ষ এবং সুশৃঙ্খল করার এক যুগোপযুগী কর্মসূচি শুরু হয়।
প্রধান বিচারপতি ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ এমন একটি কৌশলগত পরিকল্পনা, যার মূল লক্ষ্য বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং স্বাধীনতা, সততা ও দক্ষতার নীতির সাথে দেশের বিচারব্যবস্থাকে পরিচালিত করা। এক্ষেত্রে, প্রধান বিচারপতির দৃষ্টিভঙ্গি এই যে, বিচার বিভাগ কেবল ন্যায়বিচার প্রদান করেই সন্তুষ্ট থাকবে না, বরং নিজের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচারের আদর্শ সমাজে এমনভাবে প্রতিফলিত করবে, যেন বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা ও প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা দৃশ্যমান হয়। মূলত জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে প্রধান বিচারপতির এই সংস্কার উদ্যোগ বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাকে জনগণকেন্দ্রিক এবং সময়োপযোগী করে তোলার এক অনন্য প্রচেষ্টা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বিচার বিভাগ, আইনজীবী, উন্নয়ন সহযোগী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে বিচার বিভাগের সংস্কারে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বিশেষ করে বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতার বিষয়টিতে গুরুত্ব প্রদান করেন।
প্রধান বিচারপতি কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের হারানো আস্থা ফিরিয়ে আনা। তাঁর এই সংস্কার উদ্যোগের সফল বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণ, সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে আইন মন্ত্রণালয়, বার কাউন্সিল, একাডেমিয়া এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে ইতোমধ্যে একটি জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ভিত্তিক কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে, যা জাতির এই ক্রান্তিকালে বিচার বিভাগের সার্বিক মানোন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে, এই সমন্বিত প্রক্রিয়ার কারণে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের এই নবযাত্রাকে একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা হিসেবেই সংজ্ঞায়িত করা বাঞ্ছনীয়।
এতে আরও বলা হয়, জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তীকালে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের এই ইতিবাচক রূপান্তর থেকে যে মূল্যবান শিক্ষা দৃশ্যমান, তা অন্যান্য পরিবর্তনশীল দেশের জন্যও সমরূপে তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের এই রূপান্তরের অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরপরই বিচার বিভাগের জন্য যতদ্রুত সম্ভব একটি স্পষ্ট সংস্কার রূপরেখা ঘোষণা করা কতটা জরুরি। প্রধান বিচারপতি ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ বাংলাদেশের জনগণকে নতুন করে আশার আলো দেখিয়েছে এবং একই সঙ্গে প্রমাণ করেছে যে, জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনাই হতে পারে একটি টেকসই বিচার বিভাগের মূল ভিত্তি।
এছাড়া, বাংলাদেশের বিচার বিভাগের এই রূপান্তরের অভিজ্ঞতা আরও দেখিয়েছে যে, বিচার বিভাগীয় সংস্কার সফল করতে হলে বহুমাত্রিক অংশীদারিত্ব প্রয়োজন। বিচারক, আইনজীবী, নীতি নির্ধারক ও নাগরিকদের সম্মিলিত অংশগ্রহণ ছাড়া ফলপ্রসূ সংস্কার সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, প্রধান বিচারপতিও অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্কারের উপর গুরুত্ব আরোপ করে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের এই সার্বিক সংস্কার কার্যক্রমকে একটি সফল অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ায় পরিণত করেছেন। এর ফলে জনগণ ও বিচারপ্রার্থীদের সঙ্গে কৌশলগত যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ ক্রমশ গণমানুষের প্রত্যাশা হতে বিচ্ছিন্ন একটি দূরবর্তী প্রতিষ্ঠান থেকে জনগণের নিকটবর্তী এক আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে সেই বিরল উদাহরণগুলোর একটি, যেখানে বিচার বিভাগ জাতীয় রূপান্তরের রূপক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। মূলত প্রধান বিচারপতির দূরদর্শী নেতৃত্ব ও সাহসী উদ্যোগের ফলেই বাংলাদেশের বিচার বিভাগ জুলাই বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে জনআকাঙ্ক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সক্ষম হয়েছে। তাই বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা আজ বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর জন্যও অনুপ্রেরণার উৎস। বাংলাদেশের বিচার বিভাগ দেখিয়েছে, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য, অংশিদারিত্ব ও সংবিধাননিষ্ঠ প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিচার বিভাগ জাতি পুনর্গঠনের এক অনন্য চালিকাশক্তিতে পরিণত হতে পারে।
এভাবে প্রধান বিচারপতির বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ স্কিমের আওতায় গৃহীত পদক্ষেপগুলো বাংলাদেশের বিচার বিভাগকে এক নতুন মর্যাদায় আসীন করেছে। এই রূপান্তর কেবল বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি করেনি, বরং বিচার বিভাগের সঙ্গে জনগণের নৈতিক ও সামাজিক সম্পর্ককে নতুন রূপে নির্ণিত করেছে। পরিবর্তনের এই সময়ে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ জনগণের প্রত্যাশার প্রতি সাড়া দিয়ে আইনের মর্যাদা রক্ষার সুদৃঢ় ভূমিকা রেখে প্রমাণ করেছে যে, ন্যায়বিচারই জাতীয় অগ্রগতির সবচেয়ে শক্তিশালী নিয়ামক।
প্রধান বিচারপতির উদ্যোগে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সংস্কারের এই রূপরেখা তাই নিছক কোনো প্রশাসনিক পুনর্গঠনের গৎবাঁধা বিবরণ নয়; বরং এটি একটি জাতির ন্যায়বিচারের প্রতি বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদাহরণ যা প্রমাণ করেছে যে, টেকসই উন্নতির সূচনা ঘটে সংস্কারের সাহস ও নেতৃত্বের দূরদর্শিতা থেকে।