ঢাকা ১০:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ

বিচার বিভাগে নিয়োগ: হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য আর হচ্ছে না

আরিফুল হক নভেল
  • Update Time : ০৯:২৯:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫
  • / ১১৬ Time View

পতিত স্বৈরাচারের আমলে বিচার বিভাগে নিয়োগকে কেন্দ্র করে হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য এবার আর হচ্ছে না। নিয়োগ বিধি সংশোধন করে সারাদেশের অধস্তন আদালতের শূন্য পদে তিন হাজার লোকবল নিয়োগ দেয়া হবে।

আজ মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) আইন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সুত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

নিয়োগ বিধি সংশোধনের মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের হাতে দেওয়া হয়েছে।

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, এ্যাডভোকেট কামরুল ও আইন সচিব গোলাম সরওয়ার গং দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। ঐ সময় নিম্ন আদালতের অধিকাংশ কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে জনপ্রতি ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ নিতেন বলে অভিযোগ উঠেছে। লোকবল নিয়োগে এই ত্রিরত্ন সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন। এ কারণে সারা দেশের আদালতগুলোয় তিন হাজারের বেশি লোক নিয়োগ হয়েছে শুধু সাবেক মন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলা থেকে। টাকার বিনিময়ে অদক্ষ-অযোগ্য লোকদের নিয়োগ দেওয়ায় বিচার বিভাগের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা এখন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিচার বিভাগে নিয়োগ নিয়ে এ তুঘলকি কান্ড দেখে হতবাক ও বিস্মিত হন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। পরে নিয়োগবিধি সংশোধন করে বিচার বিভাগে সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতায় পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

সংশোধনের পর এসব পদে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা পাচ্ছে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন। এ লক্ষ্যে অধঃস্তন আদালতের দুটি নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করা হয়েছে।

জানা গেছে, জেলা জজ ও অধস্তন আদালতগুলো এবং বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতগুলো (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮৯ এবং জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসির আদালতগুলো (সহায়ক কর্মকর্তা ও কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ২০০৮-এর সংশোধন করা হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, আগের নিয়োগবিধি অনুযায়ী লোকবল নিয়োগের জন্য একজন অতিরিক্ত ও একজন যুগ্ম জেলা জজ এবং একজন সিনিয়র সহকারী জজের সমন্বয়ে প্রার্থী বাছাই কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি প্রার্থী বাছাই করে নিয়োগের জন্য জেলা জজের কাছে সুপারিশ করেন। সুপারিশ অনুযায়ী জেলা জজ নিয়োগ দিয়ে থাকেন; কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ের সরাসরি নির্দেশে জনবল নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়। ওপরের হস্তক্ষেপে নিয়োগ নিয়ে বিরক্ত অনেক জেলা জজও। এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে মন্ত্রী ও সচিবের কথা না শুনায় অনেক জেলা জজকে শাস্তিমূলক বদলীসহ হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। আবার কেউ কেউ গণহারে অর্থের বিনময়ে লোকবল নিয়োগ দেয়ায় ও এস ডি ও হয়েছেন। এমন অপকর্ম করতে গিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আদিব আলী বর্তমানে ও এস ডি। তার বিরুদ্ধে চলছে তদন্ত। বিধি সংশোধনের পর নিয়োগ প্রার্থী বাছাইকারী কর্তৃপক্ষ হবে জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন। এ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আপিল বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি। এ ছাড়া হাইকোর্ট বিভাগের দুজন বিচারপতি, জনপ্রশাসন সচিব, অর্থ সচিব, আইন সচিব, অ্যাটর্নি জেনারেলসহ ১০ সদস্যের এ কমিশন পরীক্ষা নিয়ে প্রার্থী বাছাই করবেন। এরপর প্রার্থী তালিকা তৈরি করে নিয়োগের সুপারিশ করবেন। তালিকা থেকে জেলা জজ নিয়োগ প্রদান করবেন। এতে নিয়োগের ক্ষেত্রে অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Please Share This Post in Your Social Media

বিচার বিভাগে নিয়োগ: হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য আর হচ্ছে না

আরিফুল হক নভেল
Update Time : ০৯:২৯:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫

পতিত স্বৈরাচারের আমলে বিচার বিভাগে নিয়োগকে কেন্দ্র করে হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য এবার আর হচ্ছে না। নিয়োগ বিধি সংশোধন করে সারাদেশের অধস্তন আদালতের শূন্য পদে তিন হাজার লোকবল নিয়োগ দেয়া হবে।

আজ মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) আইন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সুত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

নিয়োগ বিধি সংশোধনের মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের হাতে দেওয়া হয়েছে।

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, এ্যাডভোকেট কামরুল ও আইন সচিব গোলাম সরওয়ার গং দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। ঐ সময় নিম্ন আদালতের অধিকাংশ কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে জনপ্রতি ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ নিতেন বলে অভিযোগ উঠেছে। লোকবল নিয়োগে এই ত্রিরত্ন সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন। এ কারণে সারা দেশের আদালতগুলোয় তিন হাজারের বেশি লোক নিয়োগ হয়েছে শুধু সাবেক মন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলা থেকে। টাকার বিনিময়ে অদক্ষ-অযোগ্য লোকদের নিয়োগ দেওয়ায় বিচার বিভাগের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা এখন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিচার বিভাগে নিয়োগ নিয়ে এ তুঘলকি কান্ড দেখে হতবাক ও বিস্মিত হন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। পরে নিয়োগবিধি সংশোধন করে বিচার বিভাগে সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতায় পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

সংশোধনের পর এসব পদে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা পাচ্ছে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন। এ লক্ষ্যে অধঃস্তন আদালতের দুটি নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করা হয়েছে।

জানা গেছে, জেলা জজ ও অধস্তন আদালতগুলো এবং বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতগুলো (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮৯ এবং জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসির আদালতগুলো (সহায়ক কর্মকর্তা ও কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ২০০৮-এর সংশোধন করা হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, আগের নিয়োগবিধি অনুযায়ী লোকবল নিয়োগের জন্য একজন অতিরিক্ত ও একজন যুগ্ম জেলা জজ এবং একজন সিনিয়র সহকারী জজের সমন্বয়ে প্রার্থী বাছাই কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি প্রার্থী বাছাই করে নিয়োগের জন্য জেলা জজের কাছে সুপারিশ করেন। সুপারিশ অনুযায়ী জেলা জজ নিয়োগ দিয়ে থাকেন; কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ের সরাসরি নির্দেশে জনবল নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়। ওপরের হস্তক্ষেপে নিয়োগ নিয়ে বিরক্ত অনেক জেলা জজও। এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে মন্ত্রী ও সচিবের কথা না শুনায় অনেক জেলা জজকে শাস্তিমূলক বদলীসহ হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। আবার কেউ কেউ গণহারে অর্থের বিনময়ে লোকবল নিয়োগ দেয়ায় ও এস ডি ও হয়েছেন। এমন অপকর্ম করতে গিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আদিব আলী বর্তমানে ও এস ডি। তার বিরুদ্ধে চলছে তদন্ত। বিধি সংশোধনের পর নিয়োগ প্রার্থী বাছাইকারী কর্তৃপক্ষ হবে জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন। এ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আপিল বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি। এ ছাড়া হাইকোর্ট বিভাগের দুজন বিচারপতি, জনপ্রশাসন সচিব, অর্থ সচিব, আইন সচিব, অ্যাটর্নি জেনারেলসহ ১০ সদস্যের এ কমিশন পরীক্ষা নিয়ে প্রার্থী বাছাই করবেন। এরপর প্রার্থী তালিকা তৈরি করে নিয়োগের সুপারিশ করবেন। তালিকা থেকে জেলা জজ নিয়োগ প্রদান করবেন। এতে নিয়োগের ক্ষেত্রে অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।