বিচারাঙ্গণে ক্ষোভ
বিচারপতি নিয়োগের সিদ্ধান্তে নিয়োগ পাচ্ছেন বিতর্কিতরাও

- Update Time : ১০:২৭:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫
- / ৭৫ Time View
দেশের বিচারাঙ্গনে মামলার জট নিরসন আইনাঙ্গনকে আরো গতিশীল করার মানসে বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকার উচ্চ আদালতে শিগগিরই আরো বেশ কিছু বিচারপতি নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য জানা গেছে।
বিচার বিভাগ থেকে যারা বিচারপতি হচ্ছেন, তাদের একটি সম্ভাব্য তালিকা পাওয়া গেছে। ঐ তালিকায় বর্তমান আইন সচিব আবু তাহের, যুগ্ম সচিব মতামত এম, এ, আউয়াল, সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমেদ ভুঁইয়া ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিব, ঢাকার জেলা জজ হেলাল উদ্দিন, মানিকগঞ্জের জেলা জজ লিয়াকত আলী মোল্লা, বগুড়ার জেলা জজ শাজাহান কবির, সিলেটের জেলা জজ শেখ আসফাকুর রহসানসহ আরো দু’একজনের নাম শোনা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ঐ নামগুলো উচ্চ আদালতের অনেক বিচারপতির কানেও গেছে। বিচারকদের শীর্ষস্থান যেখানে গিয়ে বিচারবঞ্চিত বিড়ম্বিত বণি আদম স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। সেই ঠিকানায় যদি কোন ব্যর্থ, দূর্নীতিপরায়ণ, তদবীরবাজ অনৈতিক ও অযোগ্য লোকের প্রবেশ ঘটে তাহলে বিচার বিভাগ কলঙ্কিত হবে এমন অভিমত নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক খোদ বিচারপতিদের মধ্যেও পরিলক্ষিত হয়। তবে উল্লেখিত বিচারকদের মধ্যে কতিপয় বিচারকের সত্যতা, যোগ্যতা ও দক্ষতা প্রশ্নাতীত হলেও কতিপয় দুর্নীতিবাজ বিচারকদের নাম আসায় বিচারাঙ্গনে অসন্তোষ ও সমালোচনা সৃষ্টি হচ্ছে।
বিচারপতিদের সম্ভাব্য তালিকায় শীর্ষে আছেন বর্তমান আইন সচিব আবু তাহের। স্বৈরাচারের আমলে তোষামোদি এবং খয়ের খা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকুরী করেছেন তিনি। এজন্য দীর্ঘদিন তিনি সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হয়ে নিয়োগ কমিটি পরিচালনা করেছেন। স্বৈরাচারের পছন্দের লোক নিয়োগ দিয়ে বাহবা কুড়িয়েছেন। মৌলভীবাজারের জেলা জজ থাকাকালে হাসিনাকে খুশি করার জন্য জজ কোর্ট প্রাঙ্গনে শেখ মুজিবের বিশাল মূর্তি বানিয়ে নিচে তার নাম লিখেছিলেন সুবিধাভোগী এই আবু তাহের। ৫ আগস্টের পর বরিশাল থেকে ঢাকায় বদলী হয়ে এসে ঢাকা থেকে মৌলভীবাজারে লোক পাঠিয়ে রাতারাতি তার নাম মুছে ফেলে। পরে অবশ্য উত্তেজিত জনতা মূর্তিটি উচ্ছেদ করে। আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব নিযুক্ত হবার পর তার আমলে সবচাইতে বেশি আইন লংঘিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
মন্ত্রণালয়ের কোন কাজ তিনি সঠিকভাবে করতে পারেননি। নৈতিকতাবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত নিম্ন আদালতের কোন বিচারকের বিরুদ্ধেই তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি। পরকীয়ায় আসক্ত, স্ত্রী নির্যাতনে অভিযুক্ত যৌতুকলোভী অধঃস্তন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও তিনি নিতে পারেননি কোন কার্যকরি ব্যবস্থা। অবশ্য তার সম্পর্কে অনেক কথা শোনা যায় বিচারকদের মধ্যে। খোদ নিজের বিরুদ্ধেই যখন রয়েছে স্ত্রী নির্যাতনসহ নৈতিক স্থলনজনিত অপরাধ, তিনি কিভাবে অন্যের দোষ উদঘাটন করবেন? কিভাবে অন্যের ব্যাভিচার আর নৈতিকতা বিরোধী কর্মকান্ডে বিচার করবেন? এই প্রশ্ন বিচারাঙ্গণে উঠতে শুরু করেছে।
মানিকগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ লিয়াকত আলী মোল্লা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা জজ থাকাকালে হেরোইনসহ মাদক মামলার আসামীদের ঢালাওভাবে জামিন দিতেন। জামিন বাণিজ্যে তার নাম উঠে আসে মানুষের মুখে মুখে। এক সময় ১০ কেজি হেরোইনসহ গ্রেফতার মূল আসামীকে মোটা অংকের অর্থেও বিনিময়ে জামিন প্রদান করেন।
এ নিয়ে দৈনিক নওরোজে প্রথম পাতায় ২০২০ সালের ২ মার্চ তারিখে ‘চাঞ্চল্যকর ১০ কেজি হেরোইন মামলার আসামী ৪২ দিনেই জামিন’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়। আলোচ্য সংবাদের সূত্র ধরে তাকে ৭২ ঘন্টার মধ্যে স্ট্যান্ড রিলিজ করে শাস্তিমূলক বদলী হিসেবে রাজশাহী মানব পাচার ট্রাইব্যুনালে বদলী করা হয়। পরবর্তীতে জয় বাংলা গান গেয়ে শেখ হাসিনা ও আনিসুল হককে খুশি করে নিম্নতম মজুরী বোর্ডের চেয়ারম্যান হন। বর্তমানে ভোল পাল্টিয়ে মানিকগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ। বিএনপি’র নাম ভাংগিয়ে বড় নেতাদের তদবীরে তিনি নাকী বিচারপতি হচ্ছেন। এমন খবর শুনে হেরোইন ও মাদক মামলাসহ বড় বড় মামলার আসামীদের মুখে হাসি ফুটেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে অপরাধী মহল মিষ্টি বিতরণ করছে বলে জানা গেছে। তার শশুর বিএনপি’র আমলে মাগুরাতে বিএনপি’র নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। শশুরের প্রভাব খাটিয়ে মানিকগঞ্জের জেলা জজের পদটি হাসিল করেন।
আলোচ্য লিয়াকত আলী মোল্লা চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা জজ থাকাকালে অফিসের আসবাবপত্র, দোকান-পাট ভাড়া, গ্যারেজ ভাড়াবাবদ প্রাপ্ত বাৎসরিক আয় প্রায় ৭ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাত করেন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা জজ থাকাকালে নতুন ভবনের নথি রাখার জন্য সরবরাহকৃত লোহার র্যাক যার একটির ওজন ২০০ কেজি। এমন ৩০টি র্যাক গোপনে তৎকালীন নায়েব নাজির মাহবুব আলমের সহযোগিতায় মাহবুব ফার্নিচার মার্ট-এর নিকট রাতের আঁধারে গোপনে বিক্রি করে দেয়। এসব সরকারী মালামালের টাকাও তিনি আত্মসাত করেন। এরপরও তার নিজ জেলার ৬জন আত্মীয়-স্বজনকে নিয়োগ দান করেন। এছাড়া ৩০ লক্ষ টাকা করে অন্যান্য কর্মচারীদের নিয়োগ দেন। এই নিয়োগের সময় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও আইন সচিবের প্রত্যক্ষ মদদ ছিল।
চাঁপাইনবাগঞ্জের গোমস্তাপুর থানার মামলা নং-২, তারিখ ২/১২/১৯, জিআর নং-২৯৪/১৯ (গোমস্তাপুর) ১০ কেজি হেরোইনসহ গ্রেফতারকৃত আসামী হিরা ওরফে হিরো ওরফে প্রিন্স খানকে ২৬/২/২০২০ ইং তারিখে ফৌজদারী মিস ৩৬৬/২০২০০ নং মোকদ্দমায় জেলা ও দায়রা জজ লিয়াকত
আলী মোল্লা জামিন মঞ্জুর করেন। অপরদিকে ৩ কেজি ২শ গ্রাম হিরোইন ও ৩২ প্যাকেট ইয়াবাসহ গেফতারকৃত আসামী শফিকুল ইসরাম ওরফে লাদেনকে ৫/১১/১৮ সালে জামিন প্রদান করেন জেলা জজ লিয়াকত আলী মোল্লা। যার জিআর নং-৪৪৩/১৬ (চাঁপাই) ফৌজদারী মিস কেস নং-১৪৭৭/১৮আদেশ নং-২, তারিখ-৫/১১/১৮ সালে ধারা ১৯৯০ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে ১৯(১) এর ১-খ ধারার মামলা।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়