বিচারপতি খায়রুল হককে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত: মির্জা ফখরুল

- Update Time : ০৭:৪১:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫
- / ২৭ Time View
সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে দেশের ‘সবচেয়ে বড় শত্রু’ আখ্যা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দেশের রাজনৈতিক সংকট তৈরিতে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক শতভাগ দায়ী। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে তার দেওয়া রায় রাষ্ট্রবিরোধী। বিলম্ব হলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ।’
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিচারপতি খায়রুল হককে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত, যেন ভবিষ্যতে কেউ ওই জায়গাটাতে বসে রাষ্ট্রের ক্ষতি করতে হতে না পারেন। তার রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান বাতিলের রায়কে কার্যকর করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের পরবর্তী সময়ের রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে। জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক গ্রেপ্তার
খাইরুল হকের গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘তিনি বাংলাদেশের একজন বড় শত্রু। তিনি বাংলাদেশের একটা বিশাল ক্ষতি করেছেন। একটা বড় পদে থেকে বাংলাদেশের ভাগ্য নির্ধারণ করার একটা ব্যাপারে দায়িত্বে ছিলেন। সেখানে তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন, রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে তার দেওয়া রায় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গেছে।
তিনি বলেন, বিলম্বে হলেও এ বি এম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে সরকার (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা আশা করি, তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ যথাযথভাবে তদন্ত হবে এবং সঠিকভাবে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। দেশের একজন বড় শত্রু অবশেষে গ্রেপ্তার হলো—এটা জাতির জন্য স্বস্তির বিষয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই, কারণ বাংলাদেশের একজন বড় শত্রু—যিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দেশের বিপুল ক্ষতি করেছেন। অবশেষে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তিনি এমন একটি পদে ছিলেন, যেখান থেকে দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে। কিন্তু সে জায়গায় তিনি জনগণ ও রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে যে সংক্ষিপ্ত রায় দিয়েছিলেন এবং পরে যে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়, তার মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ ছিল। সেই রায় দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে গেছে বলে আমরা মনে করি। তার এই বেআইনি ও রাষ্ট্রবিরোধী ভূমিকার জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
রাজনৈতিক সংকট তৈরিতে নিঃসন্দেহে খায়রুল হক দায়ী ছিলেন, তার কী ধরনের শাস্তি হওয়া উচিত—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই সংকটের জন্য তিনি শতভাগ দায়ী। তবে শাস্তির বিষয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে কিছু বলতে চাই না। আইন অনুযায়ী যেসব বিধান আছে, তা অনুসরণ করেই তাকে প্রসিকিউট করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তবে আমি মনে করি, তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ ওই গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজ করার সাহস না পায়। শুধু তিনি নন, যারা এ ধরনের অপকর্মে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধেও সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে আমরা আশা করি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সাবেক বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের রায়ের পরই দেশের সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়। এর পর থেকেই দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংকটের সূচনা ঘটে, যা জাতিকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আমরা মনে করি, বিচার বিভাগ এমন একটি সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান, যেখানে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস থাকে। কিন্তু তিনি সে আস্থার জায়গাটি ধ্বংস করেছেন—শুধু তার রাজনৈতিক চিন্তাভাবনার কারণে। এতে করে দেশের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, আমরা পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, কার্জন হলের উল্টো পাশে, হাইকোর্টের পাশেই অবস্থিত শিশু একাডেমির ভবনটি ভেঙে ফেলার বিষয়ে আলোচনা চলছে বা এরকম কোনো প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করছি। এই বিরোধিতার কারণ হলো—শিশু একাডেমি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান, যার মাধ্যমে শিশুদের মানসিক, সৃজনশীল ও নৈতিক বিকাশের জন্য নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এই একাডেমি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং তিনিই এটি প্রথম চালু করেন। বর্তমানে এটি সারা দেশে শাখা বিস্তার করেছে। তাই আমরা মনে করি, শিশু একাডেমিকে ওই স্থান থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি জাতি গঠনের পথে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার, শিশু একাডেমির ভবনটি যেন স্থানান্তর বা অপসারণ না করা হয়।
এই সময়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সমাজ কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর নিয়োগ পান এ বি এম খায়রুল হক। ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে তার নিয়োগ কার্যকর হয়। পরের বছরের ১৭ মে তিনি অবসরে যান।
উত্তরায় তিন শিশুর কবর জিয়ারত
এর আগে, উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত তিন শিক্ষার্থীর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপি মহাসচিব। সকাল ১১টায় তিনি উত্তরার দিয়াবাড়ির তারারটেকের কাছে একটি পারিবারিক কবরস্থানে যান। সেখানে এক পরিবারের তিন শিক্ষার্থী শায়িত আছে। বিএনপি মাইলস্টোন স্কুলের তিন শিক্ষার্থী আরিয়ান, হুমায়ূরা ও বাপ্পির পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তাদের কবর জিয়ারত করেন। এরপর সেখানে আরও দুই শহীদ জুনায়েদ ও শারিয়ার করবও জিয়ারত করেন তিনি। বিএনপি মহাসচিব নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের সান্ত্বনা দেন।
এ সময় মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম জাহাঙ্গীর, কফিল উদ্দিন আহমেদ, আফাজ উদ্দিন ও বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়