ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় বিএনপির নবগঠিত কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল করেছেন পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন ও আওয়ামী লীগের পদধারীদের কমিটিতে স্থান দেওয়ায় অভিযোগে রোববার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে এ কর্মসূচি হয়।
মিছিলটি স্থানীয় বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে পৌরসদরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে চৌরাস্তায় প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশ শেষে মশাল মিছিল বের করেন বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দুটি কমিটিতে বিগত ১৭ বছর হামলা মামলা, জেল-জুলুম সহ্য করা ত্যাগী ও ছাত্রদল, যুবদল থেকে উঠে আসা নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর আওয়ামী লীগের পদ পদবিতে থাকা একাধিক নেতাকর্মী কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) রাতে বিএনপির আলফাডাঙ্গা উপজেলা ও পৌরসভার ১০১ সদস্য বিশিষ্ট পৃথক দুটি কমিটি ঘোষণা করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ইছা ও সদস্যসচিব একেএম কিবরিয়া স্বপন। কমিটির ১১ নম্বর সহ-সভাপতি করা হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মিয়া আসাদুজ্জামানকে। তিনি ২০২১ সালে নৌকা প্রতীকে টগরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ৫ নম্বর সহসভাপতি হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য আবদুল ওহাব ওরফে পান্নু, আর ৪ নম্বর সহ-সভাপতি হয়েছেন উপজেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। সহ-সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে মনিরুজ্জামানকে, যিনি গত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুর রহমানের পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন। সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন গোপালপুর ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওহিদ শিকদার এবং সহ-সমবায় বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়ন যুবলীগের প্রচার সম্পাদক মো. জাকারকে।
এছাড়া সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার শ্যালক নুরুল ইসলামকে। কমিটিতে ফরিদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি কামরুজ্জামান কদরকে প্রচার সম্পাদক করা হয়েছে। কমিটি থাকা এসব নেতাকর্মীরা বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে বিএনপিকে কোণঠাসা করে রাখার সব ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল।
বিক্ষোভ ও মশাল মিছিলে অংশগ্রহণকারী পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যারা বিএনপির দুর্দিনে পাশে থেকে দলকে ধরে রেখেছেন, সেই ত্যাগী নেতাদের উপেক্ষা করে নতুন কমিটিতে চিহ্নিত আওয়ামী লীগের পদপদবীতে থাকা নেতাকর্মী ও সমর্থকদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। বিএনপিকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলার যোগ্যতা বা অধিকার খন্দকার নাসিরুল ইসলামের নেই। তিনি বিনিময়ে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে আ’লীগের চিহ্নিত নেতাদের বিএনপির কমিটিতে পদ দিয়েছেন। তিনি অর্থের বিনিময়ে বিএনপিকে বিক্রি করে দিয়েছেন।
এসময় পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা খন্দকার নাসিরুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি বাতিল ও নতুন করে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের দাবি জানান। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এই কমিটি বাতিল না হলে অচিরেই কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হবে।
এদিকে ফরিদপুর -১ আসন ( বোয়ালমারী, মধুখালী, আলফাডাঙ্গা) এ দলটির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে দুটি শক্তিশালী গ্রুপ নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। এর একটি গ্রুপের নেতৃত্ব রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ও অপর গ্রুপের নেতৃত্ব রয়েছেন ছাত্রদল থেকে উঠে আসা বোয়ালমারী সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি, ফরিদপুর-১ আসনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু। সম্প্রতি নবগঠিত কমিটিতে সামসুদ্দিন মিয়া ঝুনু গ্রুপের ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নেতাকর্মীরা।
বিক্ষোভ ও মশাল মিছিলে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খোশবুর রহমান খোকন, পৌর বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক কামরুল ইসলাম দাউদ, পৌর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক সৈয়দ মিজানুর রহমান, উপজেল শ্রমিক দলের সভাপতি মাহমুদুল হাসান ইয়াদ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক এম এ আজিজ, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক ইমরান খান ইয়ানুর, উপজেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক আলামিন ইসলাম নাজমুল, ও জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ মুসা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।







































































































































































































