বাসস ছিল সাবেক এমডি আজাদসহ কয়েকজনের লুটপাটের আঁখড়া

- Update Time : ১০:৩৩:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ১০৮ Time View
সাংবাদিকতার বর্ম পরিধান করে, সরকারি অর্থ হরিলুটই ছিল তাদের মিশন। ক্ষমতার দাপটে দূর্নীতি দমন কমিশন এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ে অকাট্য প্রমাণ সমেত এক ডজন অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
বাসসের পরিচালনা বোর্ড প্রচলিত বিধি বিধান, সচ্ছতা ও জবাবদিহিতার তোয়াক্কা না করে এমডি সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেন ব্যক্তিগত স্বার্থে। এমডির অপকর্মে সহায়তা করে অতি অল্প সময়ে হতদরিদ্র অবস্থা থেকে কোটিপতি বনে গেছেন গুটিকয়েক সাংবাদিক কর্মচারী।
তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী খান, সাংবাদিক নেতা ওমর ফারুক।
এদের লাঠিয়াল হল বিশ্ব স্বীকৃত বিশিষ্ট ল্যাপটপ চোর স্বপন বসু। অব্যাহত লুটপাটের কারণেই বার্ষিক ৩৮ কোটি টাকা সরকারি বরাদ্দ পেয়েও সংস্থাটির ঋণ ও দায়দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫ কোটি টাকা।
বাসস বোর্ডের পূর্বানুমতি ছাড়াই ১০ নিকট আত্মীয়সহ ৪০ ছাত্রলীগ ক্যাডারকে নিয়োগ দিয়ে স্বল্প সময়ে বেতন-ভাতা ২ লাখ টাকায় উন্নীত করে দিয়েছেন এমডি আবুল কালাম আজাদ।
অষ্টম শ্রেণী পাস করা তার দুই আপন ভাগিনা লজিক চাকলাদার ও সুজন চাকলাদারকে পিয়ন পদে চাকরি দিয়ে তাদের বেতন ভাতা নির্ধারণ করেছেন মাসিক ৮০ হাজার টাকা। নবাগত সাংবাদিক নাতিন জামাই তুষারকে ধরিয়ে দেন সর্বোচ্চ বিশেষ বেতন গ্রেড।
পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সাংবাদিক নেতা ওমর ফারুকও বাসস এ ঢুকিয়ে দিয়েছেন নিজ পরিবারের পাঁচজন। এসব অবৈধ নিয়োগ প্রাপ্তদের দফায় দফায় পদোন্নতি এবং উচ্চতর বেতন গ্রেড এবং হরেক রকমের অবৈধ ভাতা প্রদানের জন্য তিনি জারি করেন ৩০০ টি বেআইনি অফিস আদেশ।
এতে করে সরকারি তহবিল থেকে লোপাট হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। তাছাড়া ৫০ কোটি টাকা লুটে নেয়া হয়েছে চুরি ও ভাউচার জ্বালিয়াতির মাধ্যমে।
অডিও ভিজুয়াল প্রকল্পের কেনাকাটায় সংঘটিত হয়েছে বড় ধরনের পুকুর চুরি। প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা এবং প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা সকল ধরনের লেনদেন এবং তসরুপের মূল সহযোগী।
সরকারি তহবিল হরিলুটের দায় মেটাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০২০- ২১ অর্থবছরে তথ্য মন্ত্রণালয় বাসস কে ৫ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দেয়।
এরপরেও এমডি সরকারি তহবিল থেকে বেহাত করেছেন ১৫০ কোটি টাকা। প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে ১০ কোটি টাকা এবং গ্রাচুইটি ফান্ড থেকে প্রায় ১২ কোটি টাকা।
গ্রাচুইটির টাকা যথাসময়ে না পেয়ে সিনিয়র সাংবাদিক মুজিবুল হক ভূঁইয়া সহ পাঁচ অবসরপ্রাপ্ত কর্মী বিনা চিকিৎসায় মারা যান। এই নিদারুণ ঘটনার বিবরণ দুর্নীতি দমন কমিশন এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়েরকৃত বিভিন্ন অভিযোগে খুঁজে পাওয়া যাবে।
এমডি আবুল কালাম আজাদের ব্যক্তিগত দুর্নীতি এবং লুটপাটের খতিয়ান বেশ লম্বা ও চমকপ্রদ। অনুমোদিত বেতনভাতার বাইরে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন অনেক বেআইনি ও আর্থিক সুবিধা। সার্বক্ষণিক সরকারি গাড়ি ড্রাইভার এর সুবিধা প্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা হয়েও তিনি বিধি লংঘন করে বাসস থেকে প্রতি মাসে নিচ্ছেন ৩০ হাজার টাকা গাড়ি ভাতা। ১০ হাজার টাকা স্থানীয় যাতায়াত ভাতা, ৫ হাজার টাকা কথিত স্পেশাল ভাতা, ল্যান্ড টেলিফোন ব্যবহার না করেও প্রতিমাসে বিল নিচ্ছেন ছয় হাজার টাকা। মোবাইল ফোন বাবদ ৫০০ টাকা, ইন্টারনেট বাবদ নিচ্ছেন ১৫০০ টাকা।
তাছাড়া করোনাকালে বাসায় বসে স্বঘোষিত প্রণোদনার নামে নিজে নিয়েছেন ১ লাখ টাকা ও সাংবাদিক নেতা ওমর ফারুরকে দিয়েছেন ৮৫ হাজার টাকা।
এইখাতে লুট হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা। বেতন ভাতার বাইরেও করোনাকালে তারা এই অর্থ নিয়েছেন। তথাকথিত বাজেট কমিটির নামে তিনি আত্মসাৎ করেছেন প্রায় ১০ লক্ষ টাকা।
বাসস এর এমডি পদে যোগ দিয়ে একটানা আট বছর সংস্থা থেকে বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন একটি সরকারি বাড়িতে বসবাস করেও। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য সচিব থাকা অবস্থায় উক্ত বাড়িটি বরাদ্দ নিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে উচ্চ পর্যায়ে আপত্তি উঠলে তিনি বাড়িটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। গাড়ি সুবিধা হাতিয়ে নিতে তিনি গ্রহণ করেছেন ন্যক্কারজনক দুর্নীতির আশ্রয়।
আবুল কালাম আজাদ বাসস থেকে সার্বক্ষণিক গাড়ি ও ড্রাইভার সুবিধা নিয়ে থাকেন। এই খাতে মাসিক ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতে সংস্থায় চালু করেছেন অবৈধ গাড়ি ভাতা। পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই পাঁচ সুবিধা ভোগী অর্ধতন কর্মচারীর সুপারিশের ভিত্তিতে চালু করা হয় এই অবৈধ ভাতা।
এই ক্ষেত্রে কর্মচারীরা নিয়েছে মাসিক ২৮ হাজার টাকা আর এমডিকে দিয়েছে ৩০ হাজার টাকা। এসব দুর্নীতিবাজরা ১০ হাজার টাকা স্থানীয় যাতায়াত ভাতাও নেন। এমডির কুকর্ম এখানেই থেমে নেই, সচিব মর্যাদার প্রভাব খাটিয়ে পরিবহন পুল থেকে একটি গাড়ি নিয়ে পরিবারের সদস্যদের দিয়েছেন ব্যবহারের জন্য। বাসস থেকে মাসিক ৩০ হাজার টাকার জ্বালানি নেয়া হয় গাড়িটির জন্য। এইটা আবার দেয়া হয় ২০ হাজার টাকা ওভারটাইম বিল। এমডি তার নিজস্ব বেতন ভাতা মর্জি মাফিক নির্ধারণ করতেন।
কখনো নেন সরকারি পে স্কেলে কখনো নেন সরকারি ওয়েব বোর্ড অনুসারে যেটাতে নগদ টাকা বেশি আসে। বাসসের পেটি ক্যাশ থেকে ব্যক্তিগত অজুহাতে টাকা তুলে নেওয়া এমডির নিত্য অভ্যাসে পরিণত হয়।
এক্ষেত্রে মাসে পঞ্চাশ হাজার টাকা চুরি করা হয় বিভিন্ন টেলিভিশন, পত্রিকা, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও নানা অনুষ্ঠানে ফুলের তোড়া উপহার দেয়ার নামে। ভুয়া ভাউচারে প্রতিটি ফুলের তোড়ার দাম ধরা হয় ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা। আর সেই ভুয়া ভাউচার তৈরি করে দেন প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা।
বাসসের অডিও ভিজুয়াল ইনফোটেইনমেন্ট প্রজেক্টের কোটি কোটি টাকা লোপাটের সিংহভাগ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে। কেনাকাটায় সাগর চুরির ফলে ১৩ কোটি টাকার ইনফোটেইনমেন্ট প্রজেক্টের পুরোটাই ব্যর্থ হয়েছে।
এই প্রজেক্টে ১৯৮৩ মডেলের একটি ৫০০ টাকার সিসকো সি ৩ ৯৭ মডেলের টেলিফোন সেটের দাম ধরা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা।
কোটি কোটি টাকা ব্যয় চলমান অডিও ভিজুয়াল স্টুডিও নিউজ রুম এক বছরের মধ্যেই ধসে পড়েছে। এসব প্রজেক্টে কোন অডিট ই হয়নি। এছাড়াও আবুল কালাম আজাদ প্রধানমন্ত্রীর তথ্য সচিব এর পদ অপব্যবহার করে সীমাহীন দুর্নীতি করে অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।
মুন্সীগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে বিলাসবহুল ভবন নির্মাণ করেছেন অবৈধ সম্পদ দিয়ে। ঢাকার উত্তরায় তার একটি বাড়িও রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর অফিসের প্রভাব খাটিয়ে পরিবারের নারী পুরুষ প্রতিটি সদস্যের নামে সরকারি অন্তত ২৫টি প্লট বাগিয়ে নিয়েছেন। এর সততা স্বীকার করেন রাজউকের তৎকালীন তথ্য উপদেষ্টা পরবর্তীতে বাসসে যোগদানকারী প্রবীণ সাংবাদিক জনাব আলী সানোয়ার। তার উপস্থিতিতেই তৎকালীন রাজউক চেয়ারম্যানকে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারীর প্রভাব খাটিয়ে আবুল কালাম আজাদ ঐ অপকর্মটি করেন।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়