ঢাকা ১০:২২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে শর্টকোড চালুর সিদ্ধান্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হচ্ছে বাস ট্র্যাকিং সিস্টেম ধর্ষণকারীর মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে গাজীপুরে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিল নোয়াখালীতে নামাজ পড়তে গেলে মসজিদের শৌচাগারে শিশুকে বলৎকার বান্দরবানে দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় ৪ আসামীর যাবজ্জীবন, ১ লাখ টাকা জরিমানা ধর্ষণ বিরোধী স্লোগানে মুখরিত কুবি ক্যাম্পাস বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়কসহ ৭ জন কারাগারে মেয়েকে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় বাবাকে কুপিয়ে জখম কিশোরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বহির্বিভাগের টিকিট বাণিজ্য ধর্ষণের বিরুদ্ধে কুবিতে মানববন্ধন 

বাবার অকৃত্রিম ভালোবাসার গল্প, গল্প নয় সত্যি

মোঃ ফিরোজ ফরাজী, রাঙাবালী, (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৪:১২:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ৭৫ Time View

 গল্প নয় সত্যি!!! বাবার অকৃত্রিম ভালোবাসার গল্প!!!

এক(১) : ২০০০ ইং ২/৩ সাল আমি এবং আমার ছোট ভাই ফরিদ পারিবারিক সমস্যার কারণে ঢাকায় মিরপুর সারে ১১ বসবাস করছি ,বাড়িওয়ালা খালার টেলিফোনে বাড়িতে যোগাযোগ করার পরে বাবা ওই টেলিফোন নম্বর নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করেন।

বাবা ঢাকায় পৌঁছে ওই টেলিফোন নাম্বারে ফোন দিলে দুর্ভাগ্যবশত বলে আমরা ওদের কে ফিরোজ ও ফরিদ চিনি না। তখনকার সময় আমার বাবা সদরঘাট থেকে হেঁটে এসেছিলেন মিরপুর সাড়ে ১১, ফোনে না পেয়ে( রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করে ) বাবা মনের কষ্টে দুঃখে শাহ আলি মাজার এর কাছে গিয়ে দশ টাকা দিয়ে কোন দোকানে ঘুমিয়ে ছিলেন রাত্রে ।

(সারাদিনই সে কিছুই খায়নি আমাদেরকে না পেয়ে) তারপর আবার হেঁটে চলে যান সেই সদরঘাটের লঞ্চঘাট, আল্লাহর কি ইশারা! কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই ঐদিন আমি গিয়েছিলাম লঞ্চঘাটে (রক্তের কি বাঁধন) লঞ্চে উঠে দেখি আমার বাবা গামছা বিছিয়ে ,ডেকে ঘুমিয়ে আছে ক্ষুধার্ততা নিয়ে, হঠাৎ করে চোখ পরলো বাবার মাথাটার দিকে খুবই পরিচিত মনে হচ্ছে? আমার ধারণাই সঠিক উনি আমার বাবা ঘুমিয়ে আছেন। নির্ভেজাল সরল সাদা মনের মানুষ আমার বাবা, আমি কাছে গিয়ে শরীরে হাত বুলিয়ে যখন ডাক দিলাম, আব্বা আমি ফিরোজ! বাবা তো হতবাক হয়ে আমাকে জড়িয়ে কাঁদতে শুরু করলাম দুজনে।

কেউ দেখার আগেই আবার ইজি হয়ে গেলাম, তখন বলছিল কিভাবে এসেছে এবং কিভাবে আমাদেরকে না পেয়ে চলে যাচ্ছে আর অঝোরে কাঁদছে! আর বলছে তোরা কেমন আছিস? তোদেরকে দেখতে আসছিলাম? ওই ফোন নাম্বারে ফোন করি ,বলছিল যে আমরা তাদেরকে চিনি না ! এরপর থেকে আমি আর কিছু খাইনি! লঞ্চ থেকে নেমেছি বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টায় আর ওই দিন ছিল শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা ,৪২ঘন্টা (ছেলেদের দেখা না পাওয়ায় কিছুই খাইনি!) আমার হাতে ৩০০০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলে যা কিছু খেয়ে নে!

এরপর বাবাকে সাথে নিয়ে হোটেলে ভাত খেয়েছিলাম ,খাবার মধ্যে বাবা হু হু করে কেঁদেছিল সন্তানের মায়ায়! তখন হোটেলে খাবারের বিল হয়েছিল ৩৮০ টাকা, আমি তখন বলছিলাম আপনার কাছে তো টাকা আছে আপনি খেয়ে নিলেন না কেন? তখন আমাকে বলছিল জীবনে বেঁচে থাকলে যখন সন্তানের বাবা হবে তখনই বুঝবে আমি না খাওয়ার কারণটা কি? ইটের শহরে বাবার কান্না পৌছেনি কারো কর্ণ কুহুরে ?মায়ার টানে পৌঁছেছিল আমার কাছে! আমার বাবা এখনো জীবিত আছে বাবার দীর্ঘায়ু সুস্থতা কামনা করছি, সেলুট বাবাকে, বাবা সেলুট, বাবার ঋণ শোধ করা যায় না।

দুই (২) : যখন গলাচিপা কলেজের ২০০০/২০০১ ইং ছাত্র ছিলাম তখন হোস্টেলে আমার জন্য বাড়ি থেকে খাবার রান্না করে নিয়ে আসতো বাবা ,আমি প্রায় সময় বাহিরে থাকতাম, সন্ধ্যায় ফিরলে দেখতাম বাবা বসে আছে খাবার নিয়ে আমার জন্য, তখন আমাকে খাবার দিয়ে চলে যেত, খাইতে বললে বলতো আমি খেয়েছি ,কিন্তু যখন বাড়িতে যাইতাম মা বলতো না খেয়ে গিয়েছিল, বাড়িতে এসেও বলে খাইছি, আমি তো তখন বাবার গভীরতা বুঝতাম না! সেলুট বাবাকে সেলুট।

তিন(৩) : বাবাকে নিয়ে যখন বাড়ি থেকে হজের উদ্দেশ্যে ঢাকা রওনা করলাম আমাদের এলাকার মসজিদের মুসল্লিরা ওনার সাথে এসেছিল লঞ্চ ঘাট পর্যন্ত আমার সাথে যারা আসছে সবাইকে কিছু খাওয়া মানুষ তো টাকা দিয়ে কেনা যায় না আমাকে ভালোবাসে বিধায় আসছে আর তিনটা অটো আসছে ওদের ভাড়া দিতে আমি বাবার কাছে শিখছিলাম আদর্শ মানবিকতা সর্বশেষ ঢাকায় গিয়ে যখন হাজী ক্যাম্পে ঢুকবে তখন আমাকে বলছে সৎ পথে থেকে মিথ্যা কথা না বলে মানুষকে ভালোবাসবে বাবার কাছে পেয়েছিলাম নৈতিক শিক্ষা আমার আদর্শ বাবা স্যালুট । আমার রক্ত দিয়ে বাবাকে গোসল করালেও বাবার ঋণ আমি শোধ করতে পারবো না । আলহামদুলিল্লাহ বাবা এখনো জীবিত আছে বাবার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। বাবার চেয়ে দায়িত্বশীল কোনো পুরুষ হয় না, আর মায়ের চেয়ে যত্নশীল কোনো নারী হয় না।

Please Share This Post in Your Social Media

বাবার অকৃত্রিম ভালোবাসার গল্প, গল্প নয় সত্যি

মোঃ ফিরোজ ফরাজী, রাঙাবালী, (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
Update Time : ০৪:১২:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

 গল্প নয় সত্যি!!! বাবার অকৃত্রিম ভালোবাসার গল্প!!!

এক(১) : ২০০০ ইং ২/৩ সাল আমি এবং আমার ছোট ভাই ফরিদ পারিবারিক সমস্যার কারণে ঢাকায় মিরপুর সারে ১১ বসবাস করছি ,বাড়িওয়ালা খালার টেলিফোনে বাড়িতে যোগাযোগ করার পরে বাবা ওই টেলিফোন নম্বর নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করেন।

বাবা ঢাকায় পৌঁছে ওই টেলিফোন নাম্বারে ফোন দিলে দুর্ভাগ্যবশত বলে আমরা ওদের কে ফিরোজ ও ফরিদ চিনি না। তখনকার সময় আমার বাবা সদরঘাট থেকে হেঁটে এসেছিলেন মিরপুর সাড়ে ১১, ফোনে না পেয়ে( রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করে ) বাবা মনের কষ্টে দুঃখে শাহ আলি মাজার এর কাছে গিয়ে দশ টাকা দিয়ে কোন দোকানে ঘুমিয়ে ছিলেন রাত্রে ।

(সারাদিনই সে কিছুই খায়নি আমাদেরকে না পেয়ে) তারপর আবার হেঁটে চলে যান সেই সদরঘাটের লঞ্চঘাট, আল্লাহর কি ইশারা! কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই ঐদিন আমি গিয়েছিলাম লঞ্চঘাটে (রক্তের কি বাঁধন) লঞ্চে উঠে দেখি আমার বাবা গামছা বিছিয়ে ,ডেকে ঘুমিয়ে আছে ক্ষুধার্ততা নিয়ে, হঠাৎ করে চোখ পরলো বাবার মাথাটার দিকে খুবই পরিচিত মনে হচ্ছে? আমার ধারণাই সঠিক উনি আমার বাবা ঘুমিয়ে আছেন। নির্ভেজাল সরল সাদা মনের মানুষ আমার বাবা, আমি কাছে গিয়ে শরীরে হাত বুলিয়ে যখন ডাক দিলাম, আব্বা আমি ফিরোজ! বাবা তো হতবাক হয়ে আমাকে জড়িয়ে কাঁদতে শুরু করলাম দুজনে।

কেউ দেখার আগেই আবার ইজি হয়ে গেলাম, তখন বলছিল কিভাবে এসেছে এবং কিভাবে আমাদেরকে না পেয়ে চলে যাচ্ছে আর অঝোরে কাঁদছে! আর বলছে তোরা কেমন আছিস? তোদেরকে দেখতে আসছিলাম? ওই ফোন নাম্বারে ফোন করি ,বলছিল যে আমরা তাদেরকে চিনি না ! এরপর থেকে আমি আর কিছু খাইনি! লঞ্চ থেকে নেমেছি বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টায় আর ওই দিন ছিল শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা ,৪২ঘন্টা (ছেলেদের দেখা না পাওয়ায় কিছুই খাইনি!) আমার হাতে ৩০০০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলে যা কিছু খেয়ে নে!

এরপর বাবাকে সাথে নিয়ে হোটেলে ভাত খেয়েছিলাম ,খাবার মধ্যে বাবা হু হু করে কেঁদেছিল সন্তানের মায়ায়! তখন হোটেলে খাবারের বিল হয়েছিল ৩৮০ টাকা, আমি তখন বলছিলাম আপনার কাছে তো টাকা আছে আপনি খেয়ে নিলেন না কেন? তখন আমাকে বলছিল জীবনে বেঁচে থাকলে যখন সন্তানের বাবা হবে তখনই বুঝবে আমি না খাওয়ার কারণটা কি? ইটের শহরে বাবার কান্না পৌছেনি কারো কর্ণ কুহুরে ?মায়ার টানে পৌঁছেছিল আমার কাছে! আমার বাবা এখনো জীবিত আছে বাবার দীর্ঘায়ু সুস্থতা কামনা করছি, সেলুট বাবাকে, বাবা সেলুট, বাবার ঋণ শোধ করা যায় না।

দুই (২) : যখন গলাচিপা কলেজের ২০০০/২০০১ ইং ছাত্র ছিলাম তখন হোস্টেলে আমার জন্য বাড়ি থেকে খাবার রান্না করে নিয়ে আসতো বাবা ,আমি প্রায় সময় বাহিরে থাকতাম, সন্ধ্যায় ফিরলে দেখতাম বাবা বসে আছে খাবার নিয়ে আমার জন্য, তখন আমাকে খাবার দিয়ে চলে যেত, খাইতে বললে বলতো আমি খেয়েছি ,কিন্তু যখন বাড়িতে যাইতাম মা বলতো না খেয়ে গিয়েছিল, বাড়িতে এসেও বলে খাইছি, আমি তো তখন বাবার গভীরতা বুঝতাম না! সেলুট বাবাকে সেলুট।

তিন(৩) : বাবাকে নিয়ে যখন বাড়ি থেকে হজের উদ্দেশ্যে ঢাকা রওনা করলাম আমাদের এলাকার মসজিদের মুসল্লিরা ওনার সাথে এসেছিল লঞ্চ ঘাট পর্যন্ত আমার সাথে যারা আসছে সবাইকে কিছু খাওয়া মানুষ তো টাকা দিয়ে কেনা যায় না আমাকে ভালোবাসে বিধায় আসছে আর তিনটা অটো আসছে ওদের ভাড়া দিতে আমি বাবার কাছে শিখছিলাম আদর্শ মানবিকতা সর্বশেষ ঢাকায় গিয়ে যখন হাজী ক্যাম্পে ঢুকবে তখন আমাকে বলছে সৎ পথে থেকে মিথ্যা কথা না বলে মানুষকে ভালোবাসবে বাবার কাছে পেয়েছিলাম নৈতিক শিক্ষা আমার আদর্শ বাবা স্যালুট । আমার রক্ত দিয়ে বাবাকে গোসল করালেও বাবার ঋণ আমি শোধ করতে পারবো না । আলহামদুলিল্লাহ বাবা এখনো জীবিত আছে বাবার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। বাবার চেয়ে দায়িত্বশীল কোনো পুরুষ হয় না, আর মায়ের চেয়ে যত্নশীল কোনো নারী হয় না।