বাকৃবি গবেষকদের উদ্ভাবিত হাঁসের প্লেগ ভ্যাকসিন হস্তান্তর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে
- Update Time : ০৫:১১:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫
- / ১০৬ Time View
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদের উদ্ভাবিত ডাক প্লেগ ভ্যাকসিনের সিড প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
বুধবার (৫ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের মেডিসিন বিভাগের কনফারেন্স কক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ‘ডেভেলপমেন্ট অব লো কস্ট ইনঅ্যাক্টিভেটেড এবং লাইভ অ্যাটেনিউয়েটেড ডাক প্লেগ ভ্যাকসিন ইউজিং লোকাল ডাক প্লেগ ভাইরাস’ প্রকল্পের আওতায় মাইক্রোবায়োলজি এন্ড হাইজিন বিভাগের তত্ত্বাবধানে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
অনুষ্ঠানে ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো বাহানুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড মাসুম আহমাদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড মো রফিকুল ইসলাম সরদার, বাউরেসের পরিচালক অধ্যাপক ড হাম্মাদুর রহমান, প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের (এলডিডিপি) এর চীফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ড. মো জাহাঙ্গীর হোসেন। অনুষ্ঠানে শিক্ষক, গবেষক, শিক্ষার্থী ও প্রাণিসম্পদ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান বলেন, ২০২৩ সালের ৭ই মার্চ থেকে হাঁস-মুরগির জীবিকা-সম্পর্কিত রোগ প্রতিরোধে একটি ভ্যাকসিন উন্নয়ন প্রকল্প শুরু করা হয়। এটি ২০২৬ সালের ৬ই মার্চ পর্যন্ত চলার কথা থাকলেও বর্তমানে প্রকল্পটির সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। পূর্ব অভিজ্ঞতা অনুযায়ী প্রচলিত ডাক কলেরা ও ফাউল পক্স ভ্যাকসিন ব্যবহারের পরও হাঁসের মধ্যে ৩০-৪০ শতাংশ থেকে শুরু করে কখনও ১০০ শতাংশ পর্যন্ত মৃত্যুহার (মর্টালিটি) দেখা গেছে, যা একটি নতুন ও কার্যকর ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের প্রয়োজনীয়তাকে স্পষ্ট করে। এই রোগটি একটি ডিএনএ ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। এটি মূলত দূষিত পানি ও সরাসরি সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায় এবং হাঁসের যকৃৎকে আক্রমণ করে।
তিনি আরও বলেন, হাওর অঞ্চলে কাজ করতে গিয়ে আমি দেখেছি ডাক কলেরা ও ডাক প্লেগ রোগের ভয়াবহতা। প্রান্তিক খামারিরা এই দুইটি রোগের ভ্যাকসিনের জন্য বারবার বলতো। চোখের সামনে হাঁস ছটফট করে মারা যেত। এই রোগের বিস্তার রোধে আমরা এই উদ্ভাবনে কাজ করেছি। আমরা আগে শুধু ফুড সিকিউরিটি বা খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতাম, এখন ভাবছি সেফটি বা নিরাপত্তা নিয়েও। দেশের যত উদ্ভাবন হয়েছে, তার পেছনে বাকৃবির অবদান বিশাল। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা থেকে শুরু করে কৃষির প্রতিটি অগ্রগতিতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আমার গবেষণাও এমন একটি প্রচেষ্টা, যা থেকে অন্যরা অনুপ্রেরণা পাবে। বাকৃবিতে অনেক মেধাবী ও দক্ষ গবেষক রয়েছেন, যারা যথাযথ ফান্ডিং পেলে আরও বড় সাফল্য অর্জন করতে পারবেন।
বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. কে. ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশের লাইভস্টক সেক্টরের উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন দুটি বিষয়ে—প্রজনন এবং ভ্যাকসিন। এই দুটি ক্ষেত্র ছাড়া দেশের প্রাণিসম্পদ টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। দুঃখজনকভাবে এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ খাতেই সরকারের বিনিয়োগ এখনো খুবই সীমিত। অথচ যদি প্রজনন ও ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে আমাদের পর্যাপ্ত সক্ষমতা থাকতো, তাহলে বাংলাদেশের লাইভস্টক সেক্টরকে রপ্তানিমুখী করা সম্ভব হতো। তাই এই খাতে আরও বেশি গুরুত্ব ও বিনিয়োগ জরুরি। আমি বিশ্বাস করি এই ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা অত্যন্ত ভালোভাবে যাচাই করা হয়েছে। এটি মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে এবং কন্ট্রোল ও ট্রিটমেন্ট গ্রুপের তুলনামূলক বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে এর ফলাফল মূল্যায়ন করা হয়েছে। সবগুলো ধাপ সফলভাবে অতিক্রম করে ভ্যাকসিনটি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এটি দেশের প্রাণিসম্পদ খাতে প্রভূত উন্নতি ও নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়






































































































































































































