ঢাকা ০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০১ জুন ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাকৃবিতে উদযাপিত হবে ১৩তম বিশ্ব দুগ্ধ দিবস

বাকৃবি প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৬:০২:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫
  • / ১১৩ Time View

‘বর্তমানে দেশে বছরে প্রায় ১৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন দুধ উৎপাদিত হয়, যেখানে প্রয়োজন ১৫ দশমিক ৮৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক ২৫০ মিলিলিটার দুধ প্রয়োজন হলেও আমাদের দেশে গড়ে সরবরাহ মাত্র ২৩৫ মিলিলিটার। এর মানে দেশে এখনও তরল দুধের ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি পূরণে দুধের উৎপাদন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।’

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণার আলোকে এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ডেয়রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম।

আসন্ন ১ জুন ‘আসুন দুগ্ধশিল্প এবং দুধের প্রভাব উদযাপন করি’ প্রতিপাদ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ১৩তম বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উদযাপন করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে শুক্রবার (৩০ মে) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের ডিন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘দিবসটি উপলক্ষে  দুই দিন ব্যাপি কর্মসূচী হাতে নিয়েছে ডেয়রি বিজ্ঞান বিভাগ। ৩১ মে বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন করিডোরে শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, হোম কিচেন ডেয়রি রেসিপি প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হবে। পরেরদিন সকালে বাকৃবি ক্যাম্পাসে অবস্থিত বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রায় ২ হাজার ৫’শ শিশুকে দুধপান করানো হবে। এছাড়াও ওইদিন বর্ণাঢ্য র‍্যালি, সচেতনতামূলক সেমিনার এবং ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং সভা অনুষ্ঠিত হবে।’

ডেয়রি বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. এ কে এম মাসুম বলেন, ‘প্রতি বছর প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য আমদানি করতে হয়। উৎপাদন ঘাটতির পেছনে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো উন্নত জাতের দুধেল গাভীর অভাব, গো-খাদ্যের উচ্চ মূল্য এবং বাজারজাতকরণে জটিলতা। দুধের উৎপাদন বাড়লেও দেশে দুধ পানের অভ্যাস গড়ে ওঠেনি, ফলে প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আগ্রহও কমে যাচ্ছে।’

বাকৃবিতে দুধ উৎপাদনের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উদযাপন কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘বাকৃবির নিজস্ব ডেয়রি খামারে প্রতিদিন ৫’শ লিটার দুধ উৎপাদিত হয়, যা ৬ থেকে ৭ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য খুবই অপ্রতুল। অবকাঠামোগত উন্নয়নে ২ কোটি টাকার প্রয়োজন হলেও বাজেট বরাদ্দ মাত্র ৮৫ লাখ টাকা। এই অর্থে চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়। তবে কেউ খামারে গিয়ে দুধ চাইলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় না, অন্তত ১ থেকে ২ লিটার করে দুধ দেওয়া হয়।’

সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ড. খান মো. সাইফুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, অধ্যাপক ড. সুবাস চন্দ্র দাস, অধ্যাপক ড. মোছাব্বির আহাম্মদসহ পশুপালন অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও গবেষকগণ উপস্থিত ছিলেন।

দিবসটি উদযাপনে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড (মিল্কভিটা), আকিজ ডেয়রি লিমিটেড, ঢাকা আইসক্রিম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, নাবিল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, নিউজিল্যান্ড ডেয়রি প্রোডাক্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, আরলা ফুডস বাংলাদেশ লিমিটেড, আড়ং ডেয়রি, নেসলে বাংলাদেশ, প্রাণ ডেয়রি, ঈগলু আইসক্রিমসহ আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) উদ্যোগে ২০০১ সালে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উদযাপন শুরু হয়। বাংলাদেশে ২০১৩ সাল থেকে এই দিবসটি পালন করা হচ্ছে, যার মূল লক্ষ্য হলো ডেইরি শিল্পের বিকাশ এবং দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা।

Please Share This Post in Your Social Media

বাকৃবিতে উদযাপিত হবে ১৩তম বিশ্ব দুগ্ধ দিবস

বাকৃবি প্রতিনিধি
Update Time : ০৬:০২:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫

‘বর্তমানে দেশে বছরে প্রায় ১৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন দুধ উৎপাদিত হয়, যেখানে প্রয়োজন ১৫ দশমিক ৮৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক ২৫০ মিলিলিটার দুধ প্রয়োজন হলেও আমাদের দেশে গড়ে সরবরাহ মাত্র ২৩৫ মিলিলিটার। এর মানে দেশে এখনও তরল দুধের ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতি পূরণে দুধের উৎপাদন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।’

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণার আলোকে এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ডেয়রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম।

আসন্ন ১ জুন ‘আসুন দুগ্ধশিল্প এবং দুধের প্রভাব উদযাপন করি’ প্রতিপাদ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ১৩তম বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উদযাপন করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে শুক্রবার (৩০ মে) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের ডিন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘দিবসটি উপলক্ষে  দুই দিন ব্যাপি কর্মসূচী হাতে নিয়েছে ডেয়রি বিজ্ঞান বিভাগ। ৩১ মে বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন করিডোরে শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, হোম কিচেন ডেয়রি রেসিপি প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হবে। পরেরদিন সকালে বাকৃবি ক্যাম্পাসে অবস্থিত বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রায় ২ হাজার ৫’শ শিশুকে দুধপান করানো হবে। এছাড়াও ওইদিন বর্ণাঢ্য র‍্যালি, সচেতনতামূলক সেমিনার এবং ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং সভা অনুষ্ঠিত হবে।’

ডেয়রি বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. এ কে এম মাসুম বলেন, ‘প্রতি বছর প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য আমদানি করতে হয়। উৎপাদন ঘাটতির পেছনে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো উন্নত জাতের দুধেল গাভীর অভাব, গো-খাদ্যের উচ্চ মূল্য এবং বাজারজাতকরণে জটিলতা। দুধের উৎপাদন বাড়লেও দেশে দুধ পানের অভ্যাস গড়ে ওঠেনি, ফলে প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আগ্রহও কমে যাচ্ছে।’

বাকৃবিতে দুধ উৎপাদনের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উদযাপন কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘বাকৃবির নিজস্ব ডেয়রি খামারে প্রতিদিন ৫’শ লিটার দুধ উৎপাদিত হয়, যা ৬ থেকে ৭ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য খুবই অপ্রতুল। অবকাঠামোগত উন্নয়নে ২ কোটি টাকার প্রয়োজন হলেও বাজেট বরাদ্দ মাত্র ৮৫ লাখ টাকা। এই অর্থে চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়। তবে কেউ খামারে গিয়ে দুধ চাইলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় না, অন্তত ১ থেকে ২ লিটার করে দুধ দেওয়া হয়।’

সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ড. খান মো. সাইফুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, অধ্যাপক ড. সুবাস চন্দ্র দাস, অধ্যাপক ড. মোছাব্বির আহাম্মদসহ পশুপালন অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও গবেষকগণ উপস্থিত ছিলেন।

দিবসটি উদযাপনে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড (মিল্কভিটা), আকিজ ডেয়রি লিমিটেড, ঢাকা আইসক্রিম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, নাবিল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, নিউজিল্যান্ড ডেয়রি প্রোডাক্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, আরলা ফুডস বাংলাদেশ লিমিটেড, আড়ং ডেয়রি, নেসলে বাংলাদেশ, প্রাণ ডেয়রি, ঈগলু আইসক্রিমসহ আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) উদ্যোগে ২০০১ সালে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস উদযাপন শুরু হয়। বাংলাদেশে ২০১৩ সাল থেকে এই দিবসটি পালন করা হচ্ছে, যার মূল লক্ষ্য হলো ডেইরি শিল্পের বিকাশ এবং দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা।