বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে স্টারলিংকের যাত্রা শুরু

- Update Time : ১১:০৬:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫
- / ৮ Time View
বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করলো যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা ‘স্টারলিংক’।
রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে শুক্রবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্টারলিংকের কার্যক্রমের সূচনা ঘোষণা করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা পরিচালনা বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ার।
তিনি স্টারলিংককে শুধুমাত্র একটি ইন্টারনেট সেবা নয়, বরং ‘নির্ভরযোগ্য এবং স্পর্শকাতর লাইফ লাইন’ হিসেবে অভিহিত করেন। বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় নিরবিচ্ছিন্ন সংযোগ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব তুলে ধরেন লরেন।
লরেন ড্রেয়ার বলেন, ‘উচ্চগতির ইন্টারনেট এখন আর কল্পনা নয়—এটি বাস্তব। স্টারলিংক এমন এক সংযোগ, যা ঘূর্ণিঝড়, বন্যার মতো দুর্যোগেও টিকিয়ে রাখতে পারে যোগাযোগের সেতুবন্ধন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শুধু স্যাটেলাইট পাঠাচ্ছি না, আমরা সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছি—টেলিমেডিসিন, দূরশিক্ষা, ই-কমার্স, ডিজিটাল হেলথকেয়ার—সবকিছুর ভিত্তি এখন নিরবিচ্ছিন্ন কানেক্টিভিটি।’
বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে স্টারলিংকের কার্যক্রম রয়েছে। বাংলাদেশের প্রসঙ্গে লরেন বলেন, ‘এই জাতি অন্যদের জন্য অনুকরণীয় উদাহরণ। যেভাবে প্রযুক্তিকে গ্রহণ করা হয়েছে, তা অনন্য।’
স্মরণীয়ভাবে, সংবাদ সম্মেলনের দিনটি ছিল বাংলাদেশে ইন্টারনেট শাটডাউনের এক বছর পূর্তির দিন। এ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়ব বলেন, ‘আজ ডিজিটাল ডার্কনেসের ৩৬৫তম দিন। সেই বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতার এক বছর পর আজ আমরা ঘোষণা দিচ্ছি—বাংলাদেশ আবার কানেক্টেড। এবার কেউ আমাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।’
তিনি জানান, স্টারলিংকের অর্ডার নেওয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে এবং সফট লঞ্চের পর এটাই তাদের প্রথম আনুষ্ঠানিক ঘোষণা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমাদুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম।
যদিও সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমের বিপুল উপস্থিতি ছিল, তবে স্টারলিংকের দুই প্রতিনিধি কোনো প্রশ্ন গ্রহণ করেননি। এমনকি চলমান টেলিযোগাযোগ নীতিমালা সংস্কার নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি ফয়েজ তৈয়ব।
বাংলাদেশে এখনো অনেক দুর্গম গ্রামে ব্রডব্যান্ড বা মোবাইল ইন্টারনেট পৌঁছেনি। ফাইবার অপটিকের অভাব, নেটওয়ার্ক অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা—এসব জায়গায় স্টারলিংক হয়ে উঠতে পারে ‘ডিজিটাল ইকুয়ালাইজার’।
এ প্রসঙ্গে স্পেসএক্সের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালক রিচার্ড গ্রিফিথস বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করতে পেরেছি। এখানকার ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সত্যিই প্রশংসনীয়।’
তবে বড় প্রশ্ন থেকে যায়—এটি কতটা সাশ্রয়ী হবে সাধারণ জনগণের জন্য?
উল্লেখ্য, প্রায় তিন মাস ধরে পরীক্ষামূলক সম্প্রচার চালানোর পর শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে স্টারলিংক তার সেবা চালু করে। প্রতিষ্ঠানটি বিটিআরসি থেকে ‘স্যাটেলাইট অপারেটর লাইসেন্স’ এবং ‘রেডিও কমিউনিকেশন অ্যাপারেটার্স লাইসেন্স’ পায়, যার বৈধতা ১০ বছর।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, স্টারলিংকের সেবা নিতে হলে গ্রাহকদের প্রাথমিকভাবে ৪২ হাজার টাকা খরচে একটি সেটআপ কিট কিনতে হবে। এতে থাকবে স্যাটেলাইট রিসিভার ডিস, রাউটার, পাওয়ার সাপ্লাইসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ। এরপর গ্রাহকরা মাসিক ভিত্তিতে দুটি প্যাকেজের মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে পারবেন।
স্টারলিংকের ঘোষিত দুটি প্যাকেজ হলো— স্টারলিংক রেসিডেন্সিয়াল ও স্টারলিংক লাইট।
রেসিডেন্সিয়াল প্যাকেজের মাসিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার টাকা, যেখানে পাওয়া যাবে সর্বোচ্চ ৩০০ এমবিপিএস পর্যন্ত গতির আনলিমিটেড ইন্টারনেট। অপরদিকে, স্টারলিংক লাইট প্যাকেজের মূল্য ৪ হাজার ২০০ টাকা, যা অপেক্ষাকৃত কম দামে নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা দেবে।