বরগুনায় একটি এজলাসে চলে একাধিক বিচারকের বিচারকাজ

- Update Time : ০১:৫১:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫
- / ২০ Time View
পর্যাপ্ত অবকাঠামো সংকটে ভূগছে বরগুনার আদালতপাড়া। কক্ষ সংকটে বসার জায়গা পাচ্ছেন না বিচারকরা। ফলে একই এজলাসে একাধিক বিচারকের করতে হচ্ছে বিচার কাজ। আদালত ভবনে পর্যাপ্ত জায়গা নেই আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের জন্য। এতে বিচার পেতে এসে উল্টো বিড়ম্বনায় পরতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন- বিচারক, এজলাস ও ভবন সংকটের কারণে বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা যাচ্ছে না।
আদালত সূত্রে জানা গেছে- বরগুনায় প্রায় ২৬ হাজার মামলা বিচারাধীন। জেলার ২১ জন বিচারকের পদের মধ্যে ৬টিই শূন্য। এছাড়াও সংকটের কারণে একই এজলাসে দুইজন বিচারক পালাক্রমে ব্যবহার করেন। এতে বাড়ছে মামলার দীর্ঘসূত্রতা।
আইনজীবীদের তথ্য অনুযায়ী- বরগুনায় প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি মানুষ আদালত সংশ্লিষ্ট কাজে আসেন। কিন্তু পর্যাপ্ত বসার জায়গা না থাকায় নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা খোলা মাঠ বা বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়- জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বারান্দায় গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকশ’ বিচারপ্রার্থী। তিল ধারণের ঠাঁই নেই সেখানে। সদর উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের বারান্দায় দাঁড়ানোর জায়গা না থাকায় অনেকে উত্তপ্ত রোদের মধ্যে আদালতের সামনের খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে থাকেন।
নারী বিচারপ্রার্থীদের সঙ্গে শিশুরা থাকায় চরম বিপাকে পরছেন তারা। অন্যদিকে, স্থান সংকটের কারণে একটি এজলাসের মধ্যে দাপ্তরিক কর্মকান্ড সারছেন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। এছাড়া যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। এর মধ্যে ভিড় ঠেলে কোনো রকমে আদালত কক্ষে প্রবেশ করছেন আইনজীবীরা।
বেতাগী উপজেলার বাসিন্দা জামাল ইবনে মুসার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান- ২০০৭ সালে জমিজমা সংক্রান্ত একটি বিরোধ নিষ্পত্তি করতে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি, এরপর পেরিয়ে গেছে ১৮ বছর। এখন পর্যন্ত এ মামলার কোনো সুরাহা হয়নি। দীর্ঘ সময় আদালতে ঘুরে ঘুরে হতাশ তিনি।
আদালতের বারান্দায় কথা হয় কাজল রেখা নামের পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ থেকে আসা এক বিচারপ্রার্থীর সঙ্গে। তিনি জানান- ২০১২ সালে বেতাগীতে তার মায়ের জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মামলা করেছিলেন। সেটি এখনো কোনো সুরাহা হয়নি। দীর্ঘ ১৩ বছর কেটে গেলেও বিচারক সংকটসহ নানা জটিলতায় বিচার পাচ্ছেন না।
বিচারক না থাকায় মামলা জট বাড়ছে জানিয়ে অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন বলেন- বরগুনাতে সব আদালতে বিচারক নেই বিধায় মামলার জটিলতা বাড়ছে। যদি বিচারকের শূন্যতা কেটে যায়, তবে বিচার ব্যবস্থাও ত্বরান্বিত হবে। আমরা আশা করি অতি দ্রুতই শূন্য পদে বিচারক প্রদানের মাধ্যমে বরগুনার মানুষের দুর্দশা কাটবে।
চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের জন্য ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়ে বরগুনা নারী ও শিশু ট্রাইবুনালের সাবেক সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন- বৃষ্টির দিনে আদালতে আসা মানুষজনকে ভিজে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আবার গরমের সময়ও একইভাবে এই মাঠে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বর্তমান সরকারের কাছে একটাই দাবি যাতে এখানে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জন্য একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। এতে বিচার ব্যবস্থা ত্বরান্বিত হবে।
চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. আকতার হোসেন বলেন- এজলাস সংকট ও বিচারক পদ শূন্য থাকার ফলে প্রতিদিন মামলার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে মামলা জটও বাড়ছে। এছাড়া আমাদের দাপ্তরিক কাজেও বিঘœ ঘটছে। নতুন একটি ভবন হলে আমাদের সব সমস্যা সমাধান হবে।
বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন বলেন- আমাদের পার্শ্ববর্তী জেলায় চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন আছে, কিন্তু আমাদের সাবেক জনপ্রতিনিধিরা বরগুনার জন্য কিছুই করতে পারেননি। শুধু একটি ভবন না থাকায় বিচারক ও আইনজীবীরা ভোগান্তিতে আছেন। সংকট নিরসনে ও বিচারিক প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করছি। পাশাপাশি চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণের জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে আলোচনা চলছে।