ঢাকা ০৪:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বগুড়ায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৭

বগুড়া প্রতিনিধি
  • Update Time : ১১:৩০:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ১৫ Time View

বগুড়ার শাজাহানপুরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ফার্নিচারবোঝাই একটি পিকআপভ্যান ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পিকআপের মালিক আরিফ হোসেন বাদী হয়ে শাজাহানপুর থানায় মামলা করেন। পুলিশ এরইমধ্যে ৭ ডাকাতকে গ্রেপ্তার এবং তাদের ব্যবহৃত প্রাইভেট কার ও বার্মিজ চাকু উদ্ধার করেছে।

গ্রেফতার ডাকাতরা হলেন- বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার রহিমাবাদ উত্তরপাড়ার শফিকুল ইসলামের ছেলে রাতুল (২২), বগুড়া সদরের সাতশিমুলিয়া গ্রামের মৃত আলমগীর প্রামানিকের ছেলে সুমন প্রামানিক (২২), শহরের সুলতানগঞ্জপাড়ার মৃত গোলাম পাশা পুটুর দুই ছেলে সাব্বির পাশা শাওন (৩৩) ও মোস্তফা পাশা শ্যামল (৩৫), মালগ্রাম উত্তরপাড়ার মৃত কামাল মিয়ার ছেলে কালাম ওরফে সুরমা কালাম ওরফে জামাল (৩৪), নিশিন্দারা মধ্যপাড়ার মৃত সাজ্জাদের ছেলে রাসেল আহমেদ (৩৫) ও শাজাহানপুর উপজেলার সাবরুল কারিগরপাড়ার বিপুল হোসেনের ছেলে তারেক হোসেন (৩২)।

বৃহস্পতিবার (০৪ সেপ্টেম্বর) সকালে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন শাজাহানপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম শফিক।

জব্দ করা প্রাইভেটকার।

এঘটনায় পিকআপ মালিক মৌলভীবাজার সদর উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের আরিফ হোসেন বাদী হয়ে ১৩ আগস্ট শাজাহানপুর থানায় মামলা করেন। মামলা দায়েরের দিন রাতেই সন্দেহভাজন হিসেবে রাতুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যে পরে মোট ৭ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মৌলভীবাজার সদরের জগন্নাথপুর গ্রামের সিরাজ মিয়ার ছেলে পিকআপের মালিক আরিফ হোসেন (৪০) এজাহারে উল্লেখ করেন, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বিক্রমপুর কামারগাঁও গ্রামের জালাল বেপারির ছেলে আল আমিন (৩৫) ও হেলপার রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার গুদিবাড়ী গ্রামের নুরুর ছেলে রফিক দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাড়ায় পিকআপে মালামাল পরিবহন করে থাকেন। তারা গত ১২ আগস্ট রাত সোয়া ১২টার দিকে ঢাকা মহানগরের কেরানীগঞ্জ উপজেলার বছিলা এলাকা থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের ফার্নিচার লোড করেন। এরপর ফার্নিচারগুলো গাইবান্ধা ও দিনাজপুরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রওনা দেন। রাত সাড়ে ৪টার দিকে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের রহিমাবাদ বি-ব্লক এলাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের ওভারপাসের ওপরে পৌঁছে।

এ সময় তিনটি প্রাইভেটকারে অজ্ঞাত কয়েকজন পুলিশের ব্যবহৃত লাল সিগন্যাল লাইট ব্যবহার করে পিকআপ থামাতে বাধ্য করে। এ সময় ১৪/১৫ জন ডাকাত নিজেদের ডিবি পুলিশের লোকজন পরিচয় দেয় ও চালক আল আমিনের হাতে হাতকড়া পরায়। এরপর পিকআপের চালক ও হেলপার রফিককে প্রাইভেটকারে তুলে গামছা দিয়ে চোখ ও হাত বেঁধে ফেলে।

চিৎকার করলে তাদের মারধর ও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। ডাকাতরা পিকআপ চালক ও হেলপারের কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন, নগদ তিন হাজার টাকা কেড়ে নেয়।

ডাকাতদল তাদের নিয়ে প্রায় আধা ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে ভোর ৫টার দিকে বগুড়া সদরের ধনিয়াতলা এলাকায় দ্বিতীয় বাইপাস মহাসড়কে পৌঁছে। সেখানে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় চালক ও হেলপারকে মহাসড়কের পাশে গর্তে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর ডাকাতরা সাড়ে চার লাখ টাকা মূল্যের পিকআপ ও সোয়া লাখ টাকা মূল্যের ফার্নিচার নিয়ে পালিয়ে যায়।

পিকআপের মালিক আরিফ হোসেন গত ১৩ আগস্ট বগুড়ার শাজাহানপুর থানায় মামলা করেন। থানার এসআই রাসেল আহমেদকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। রাত ১১টার দিকে সন্দিগ্ধ আসামি রাতুলকে গ্রেফতার করে। তার হেফাজত থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়।

রাতুলের দেওয়া তথ্যমতে র‌্যাব ও শাজাহানপুর থানা পুলিশ গত ১৭ আগস্ট রাতে সন্দিগ্ধ আসামি সুমন প্রামানিক, সাব্বির পাশা শাওন, তার ভাই মোস্তফা পাশা শ্যামলকে গ্রেফতার করে।

আসামিদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা ফার্নিচার ডাকাতির কথা স্বীকার করে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুসারে র‌্যাব ও শাজাহানপুর থানা পুলিশ ৩ সেপ্টেম্বর রাতে কালাম ওরফে সুরমা কালাম ওরফে জামাল, রাসেল আহমেদ এবং তারেক হোসেনকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি বার্মিজ চাকু পাওয়া যায়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে শাজাহানপুর থানার ওসি শফিকুল ইসলাম পলাশ জানান, গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে রাতুলের বিরুদ্ধে মাদকসহ বিভিন্ন ধারায় পাঁচটি, সাব্বির পাশা শাওনের বিরুদ্ধে তিনটি, মোস্তফা পাশা শ্যামলের বিরুদ্ধে ছয়টি, কালাম ওরফে সুরমা কালাম ওরফে জামালের বিরুদ্ধে ১১টি, রাসেল আহমেদের বিরুদ্ধে চারটি ও তারেক হোসেনের বিরুদ্ধে সাতটি মামলা রয়েছে। গ্রেফতার আসামিদের আদালতের মাধ্যমে বগুড়া কারাগারে পাঠানো হয়েছে। লুণ্ঠিত মালামাল ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

বগুড়ায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৭

বগুড়া প্রতিনিধি
Update Time : ১১:৩০:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বগুড়ার শাজাহানপুরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ফার্নিচারবোঝাই একটি পিকআপভ্যান ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পিকআপের মালিক আরিফ হোসেন বাদী হয়ে শাজাহানপুর থানায় মামলা করেন। পুলিশ এরইমধ্যে ৭ ডাকাতকে গ্রেপ্তার এবং তাদের ব্যবহৃত প্রাইভেট কার ও বার্মিজ চাকু উদ্ধার করেছে।

গ্রেফতার ডাকাতরা হলেন- বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার রহিমাবাদ উত্তরপাড়ার শফিকুল ইসলামের ছেলে রাতুল (২২), বগুড়া সদরের সাতশিমুলিয়া গ্রামের মৃত আলমগীর প্রামানিকের ছেলে সুমন প্রামানিক (২২), শহরের সুলতানগঞ্জপাড়ার মৃত গোলাম পাশা পুটুর দুই ছেলে সাব্বির পাশা শাওন (৩৩) ও মোস্তফা পাশা শ্যামল (৩৫), মালগ্রাম উত্তরপাড়ার মৃত কামাল মিয়ার ছেলে কালাম ওরফে সুরমা কালাম ওরফে জামাল (৩৪), নিশিন্দারা মধ্যপাড়ার মৃত সাজ্জাদের ছেলে রাসেল আহমেদ (৩৫) ও শাজাহানপুর উপজেলার সাবরুল কারিগরপাড়ার বিপুল হোসেনের ছেলে তারেক হোসেন (৩২)।

বৃহস্পতিবার (০৪ সেপ্টেম্বর) সকালে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন শাজাহানপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম শফিক।

জব্দ করা প্রাইভেটকার।

এঘটনায় পিকআপ মালিক মৌলভীবাজার সদর উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের আরিফ হোসেন বাদী হয়ে ১৩ আগস্ট শাজাহানপুর থানায় মামলা করেন। মামলা দায়েরের দিন রাতেই সন্দেহভাজন হিসেবে রাতুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যে পরে মোট ৭ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মৌলভীবাজার সদরের জগন্নাথপুর গ্রামের সিরাজ মিয়ার ছেলে পিকআপের মালিক আরিফ হোসেন (৪০) এজাহারে উল্লেখ করেন, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বিক্রমপুর কামারগাঁও গ্রামের জালাল বেপারির ছেলে আল আমিন (৩৫) ও হেলপার রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার গুদিবাড়ী গ্রামের নুরুর ছেলে রফিক দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাড়ায় পিকআপে মালামাল পরিবহন করে থাকেন। তারা গত ১২ আগস্ট রাত সোয়া ১২টার দিকে ঢাকা মহানগরের কেরানীগঞ্জ উপজেলার বছিলা এলাকা থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের ফার্নিচার লোড করেন। এরপর ফার্নিচারগুলো গাইবান্ধা ও দিনাজপুরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রওনা দেন। রাত সাড়ে ৪টার দিকে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের রহিমাবাদ বি-ব্লক এলাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের ওভারপাসের ওপরে পৌঁছে।

এ সময় তিনটি প্রাইভেটকারে অজ্ঞাত কয়েকজন পুলিশের ব্যবহৃত লাল সিগন্যাল লাইট ব্যবহার করে পিকআপ থামাতে বাধ্য করে। এ সময় ১৪/১৫ জন ডাকাত নিজেদের ডিবি পুলিশের লোকজন পরিচয় দেয় ও চালক আল আমিনের হাতে হাতকড়া পরায়। এরপর পিকআপের চালক ও হেলপার রফিককে প্রাইভেটকারে তুলে গামছা দিয়ে চোখ ও হাত বেঁধে ফেলে।

চিৎকার করলে তাদের মারধর ও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। ডাকাতরা পিকআপ চালক ও হেলপারের কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন, নগদ তিন হাজার টাকা কেড়ে নেয়।

ডাকাতদল তাদের নিয়ে প্রায় আধা ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে ভোর ৫টার দিকে বগুড়া সদরের ধনিয়াতলা এলাকায় দ্বিতীয় বাইপাস মহাসড়কে পৌঁছে। সেখানে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় চালক ও হেলপারকে মহাসড়কের পাশে গর্তে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর ডাকাতরা সাড়ে চার লাখ টাকা মূল্যের পিকআপ ও সোয়া লাখ টাকা মূল্যের ফার্নিচার নিয়ে পালিয়ে যায়।

পিকআপের মালিক আরিফ হোসেন গত ১৩ আগস্ট বগুড়ার শাজাহানপুর থানায় মামলা করেন। থানার এসআই রাসেল আহমেদকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। রাত ১১টার দিকে সন্দিগ্ধ আসামি রাতুলকে গ্রেফতার করে। তার হেফাজত থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়।

রাতুলের দেওয়া তথ্যমতে র‌্যাব ও শাজাহানপুর থানা পুলিশ গত ১৭ আগস্ট রাতে সন্দিগ্ধ আসামি সুমন প্রামানিক, সাব্বির পাশা শাওন, তার ভাই মোস্তফা পাশা শ্যামলকে গ্রেফতার করে।

আসামিদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা ফার্নিচার ডাকাতির কথা স্বীকার করে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুসারে র‌্যাব ও শাজাহানপুর থানা পুলিশ ৩ সেপ্টেম্বর রাতে কালাম ওরফে সুরমা কালাম ওরফে জামাল, রাসেল আহমেদ এবং তারেক হোসেনকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি বার্মিজ চাকু পাওয়া যায়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে শাজাহানপুর থানার ওসি শফিকুল ইসলাম পলাশ জানান, গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে রাতুলের বিরুদ্ধে মাদকসহ বিভিন্ন ধারায় পাঁচটি, সাব্বির পাশা শাওনের বিরুদ্ধে তিনটি, মোস্তফা পাশা শ্যামলের বিরুদ্ধে ছয়টি, কালাম ওরফে সুরমা কালাম ওরফে জামালের বিরুদ্ধে ১১টি, রাসেল আহমেদের বিরুদ্ধে চারটি ও তারেক হোসেনের বিরুদ্ধে সাতটি মামলা রয়েছে। গ্রেফতার আসামিদের আদালতের মাধ্যমে বগুড়া কারাগারে পাঠানো হয়েছে। লুণ্ঠিত মালামাল ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।