বকশীগঞ্জে দশানী নদীর তীব্র ভাঙ্গন, ভিটেহারা দুই শতাধিক পরিবার

- Update Time : ০৩:৩৬:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫
- / ৪৭ Time View
জামালপুরের বকশীগঞ্জে গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে দশানী নদীর তীব্র ভাঙ্গন শুরু হয়েছে ফলে ভাঙ্গন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদীপাড়ের মানুষ। আর নদী ভাঙ্গনের ফলে ভিটেহারা হয়েছে প্রায় দুই শতাধিক পরিবার। তাছাড়া প্রায় ৩০০ একর কৃষিজমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বলে স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে বকশীগঞ্জ-দেওয়ানগঞ্জ এলজিডির সড়কে মুন্দিপাড়া এলাকায় ব্রীজের মাথা থেকে মাটি সড়ে যাওয়ায় বকশীগঞ্জ-দেওয়ানগঞ্জ সড়ক যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে উক্ত সড়ক দিয়ে ভারী যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আর যে কোন সময় ব্রীজটি ভেঙে পড়তে পারে বলে এলাকাবাসীর আশংকা করছেন। ব্রীজের ভাঙ্গন ঠেকাতে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশক্রমে এলাকাবাসীর সহায়তায় মেরুরচর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কাজ করে যাচ্ছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, দশানি নদীর একটি শাখা বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের খাপড়াপাড়ার ভিতর দিয়ে মেরুরচর ইউনিয়নে প্রবাহিত হয়েছে। বিগত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে পানির তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় দুই পাড়ে ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়। ফলে নদী পাড়ে
খাপড়াপাড়া, মুন্দীপাড়া, ঘুগরাকান্দি, কলকীহাড়া উজান এ চার গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক পাকা, আধা-পাকা বাড়ীঘর ও প্রায় ৩০০ একর কৃষিজমি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। তাছাড়া পানির প্রবাহ বৃদ্ধির সাথে সাথে বাহাদুরাবাদ, মেরুরচর ও সাধুরপাড়া ইউনিয়নে আরও প্রায় তিনশতাধিক পরিবারের পাকা আধা-পাকা বসত বাড়ী, কৃষি জমি নদী গর্ভে বিলীনের দারপ্রান্তে রয়েছে।
মেরুরচর ইউনিয়নের মুন্দীপাড়া গ্রামের রোকসানা বেগম জানান, আমাদের বাপ চাচা পূর্বপুরুষদের যে বসত বাড়ি ঘর ছিল তা নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে, আবাদি জমি কৃষি জমি নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। ক্রমাগত নদী ভাঙ্গনে বসতবাড়ি কৃষিজমি বিলীন হয়ে গেলে আমাদের বাপ, চাচারা একসময় স্টোক করে মারা যেতে পারে।
মুন্দীপাড়া গ্রামের কৃষক ফজল মিয়া বলেন ব্যাপক ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে নদী তীরের কৃষিজমি তাই তাড়াহুড়ো করে আধা-পাকা ধান কাটতে হয়েছে আমাদের। ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে কৃষি জমি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে তিনি জানান।
এছাড়া ঘুঘরাকান্দি এলাকাতেও নদীর দুই তীরের মানুষ ব্যাপক ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে।
ঘুগরাকান্দি বজার মসজিদটি ভেঙ্গে গেছে। এছাড়াও বকশীগঞ্জ-দেওয়ানগঞ্জ এলজিইডি’র একমাত্র সড়কটি হুমকির মধ্যে রয়েছে। অনেকেই আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন এবং ঘরবাড়ী হারিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার বাসিন্দারা উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
ঘুগরাকান্দি গ্রামের মিজানুর রহমান অনুসন্ধান প্রতিদিন কে বলেন এটি একটি খাল ছিল আইরমারী নতুন পাড়ায় দশানী নদীতে বাধ দেওয়ার ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে এই খাল দিয়ে পানি তীব্র গতিতে প্রবাহিত হওয়ার কারনে আমাদের বসতভিটা মসজিদ, কবরস্থান, কৃষিজমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নদীপাড়ে আমরা মানবেতর জীবন যাপন করছি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন দশানী নদীর ভাঙন ঠেকাতে পাউবোর বা উপজেলা প্রশাসন এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই। এখনই নদী ভাঙ্গন রোধের ব্যবস্থা গ্রহন করতে না পারলে নদী গিলে খাবে বসতভিটা, ফসলি জমি, বাঁশঝাড়, বাগান, কবরস্থান, রাস্তা-ঘাট, স্কুল, মাদরাসাসহ পাকা-আধাপাকা স্থাপনা।
সব হারিয়ে নি:স্ব হবে নদী পাড়ের মানুষ।
মেরুরচর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, মেরুরচর ইউনিয়ন একটি নদী ভাঙ্গন এলাকা, কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে মেরুরচর ইউনিয়নের খাপরাপাড়া, আইরমারী নতুনপাড়া, কলকীহাড়া, মুন্দীপাড়া, ঘুগরাকান্দি এলাকায় ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয় মুন্দীপাড়ায় যে ব্রীজটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা উপজেলা প্রশাসনসহ ইঞ্জিনিয়ার অফিস থেকে একটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী ব্রীজটি মেরামত করে যান চলাচলের উপযোগী করার চেষ্ঠা করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন ধরনের সহযোগিতা আমরা পায়নি।
বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ রানা জানান, খাপড়াপাড়া, আইরমারি, মেরুরচর পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, আর কয়েক কিলোমিটার নদী ভাঙ্গন একদম সাথে সাথেই কোন ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব না তবে একটু সময় নিয়ে ধীরস্থিরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর নদীভাঙনে যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে, ইতিমধ্যে আমরা ১০৬ জনের একটা তালিকা তৈরি করেছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে
জামালপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নকিবুজ্জামান খান জানান, বকশীগঞ্জ- দেওয়ানগঞ্জ মুন্দীরপাড়া এলাকায় ব্রীজটি এলজিইডির। ব্রীজ রক্ষায় ইতিমধ্যে এলজিইডি কাজ শুরু করেছে। নদী ভাঙ্গন রোধে মেরুরচরে ১০০ মিটার কাজ চলমান এমনকি মুন্দীরপাড়ায় ১০০ মিটার কাজ শুরু হবে আর ঘুগরাকান্দি বাজার এলাকায় আমি পরিদর্শনে এসেছি এখনেও নদী ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়