প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি শুরু, চলবে তিনদিন
- Update Time : ০৩:০২:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫
- / ১৯ Time View
তিন দাবিতে তিন দিনের পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু করেছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেড নিয়ে জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ পদোন্নতির দাবিতে মঙ্গলবার থেকে বারোটি শিক্ষক সংগঠনের মোর্চা ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে এ কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
মোর্চাভুক্ত সংগঠন বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের সভাপতি শাহীনুর আল আমিন বলেন, “সহকারী শিক্ষক এন্ট্রিপদে বেতন ১১তম গ্রেড নির্ধারণ, ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা চেয়ে আমরা সরকারকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছিলাম।
“দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় রোববার ও সোমবার অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছি। আজ থেকে আমাদের তিন দিনের পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু হয়েছে।”
ঢাকার কেরানিগঞ্জের বাঘাসুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন বলে জানিয়েছেন স্কুলটির সহকারী শিক্ষক শাহীনুর আল আমিন।
পুরান ঢাকার সুরীটোলা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং মোর্চাভুক্ত সংগঠন বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের সভাপতি মো. আনিসুর রহমানও তাদের স্কুলে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।
“যদি এই সময়ের মধ্যে দাবি আদায়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি বা ঘোষণা না আসে, তাহলে ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন এবং ১১ ডিসেম্বর থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করা হবে।”
সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার থানাগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলছে বলে জানিয়েছেন স্কুলটির শিক্ষক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ।
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ১১৪ নম্বর ওমর ব্যাপারীকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলছে বলে স্কুলটির শিক্ষক রেজাউল করিম জানিয়েছেন।
এদিকে কিছুদিন আগে দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে আন্দোলন করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের চার সংগঠনের মোর্চা ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ অনুসারী শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করেছেন না।
নোয়াখালী সদর উপজেলার ত্রিপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস চলছে বলে জানিয়েছেন স্কুলটির সহকারী শিক্ষক ও দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দিন মাসুদ।
তিনি বলেন, “আন্দোলনের প্রেক্ষিতে একাদশ গ্রেডে বেতন দেওয়ার যে আশা সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের দেওয়া হয়েছিল তা বাস্তবায়নে আমরা ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছি। দাবি মেনে নেওয়া না। হলে আমরা ৩০ নভেম্বর থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন শুরু করব।”
দশম গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা নিরসন ও শতভাগ পদোন্নতির দাবিতে ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ ব্যানারে গত ৮ নভেম্বর ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকরা।
‘কলম বিরতি কর্মসূচি’ পালনে সেদিন বিকালে তারা মিছিল নিয়ে শাহাবাগের দিকে এগিয়ে যাওয়া চেষ্টা করলে শাহবাগ থানার সামনে তাদের আটকে দেয় পুলিশ। সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে, কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে এবং লাঠিপেটা করে তাদের শহীদ মিনারে ফেরত পাঠায়।
এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষকরা পরদিন থেকেই কর্মবিরতি শুরু করেন।
পরে গত ১০ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। সেখানে একাদশ গ্রেডে বেতন নির্ধারণ এবং উচ্চতর গ্রেড ও পদোন্নতির জটিলতা নিরসনে সরকারে আশ্বাস দিয়েছে জানিয়ে ওইদিন রাতে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন৷
এদিকে ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ আন্দোলনরত শিক্ষকরা তিন দাবিতে গত ২৬ মে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু করেছিলেন। দাবি আদায়ে তারা ৫ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত দিনে ১ ঘণ্টা, ১৬ থেকে ২০ মে পর্যন্ত ২ ঘণ্টা, ২১ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন।
পরে গত ২৯ মে সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলে কর্মবিরতির কর্মসূচি ২৫ জুন পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। গত ৩০ অগাস্ট দিনভর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ করার পর ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ‘আমরণ অনশন’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষকরা।
দূর্গা পূজার কারণে অনশন কর্মসূচি ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়। পরে গত ১৬ অক্টোবর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনার পর শিক্ষকরা অনশন কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেন। পরে সরকারের আশ্বাসে ওই ককর্মসূচিও স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছিল।
কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করা সহকারী শিক্ষকদের মূল দাবি একাদশ গ্রেডে বেতন নির্ধারণের উদ্যোগ ইতোমধ্যে নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ত্রয়োদশ গ্রেডে বেতন পাওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন একাদশ গ্রেডে উন্নীত করার প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে গত ১৮ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, “সহকারী শিক্ষকরা যারা ১৩তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন তারা যেন এগারোতম গ্রেডে বেতন পান সেজন্য আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ে লিখেছি, উনারা রেফার করেছেন বেতন কমিশনে। আমরা কেবিনেট ডিভিশনে তদবির করেছি, যেন উনারা আমাদের ফেভারে বলেন, উপদেষ্টাদের তদবির করছি যেন ফেভারে বলেন, আমি নিজে বেতন কমিশনে গিয়েছি, আমি গিয়ে উনাদের কনভিন্স করার চেষ্টা করছি।”
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়






































































































































































































