ঢাকা ০১:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
প্রথমবারের আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার প্রথম সাক্ষাৎকার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না হলে দায় নেবেন ড. ইউনূস: ফখরুল ওসমানী বিমানবন্দরে ইঞ্জিনে বোর্ডিং ব্রিজের ধাক্কা শাহবাগ-আগারগাঁও মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ শরিয়তপুরের জেলা জজের বক্তব্য ঠিক নয় : রেজিস্ট্রার জেনারেল বাকৃবিতে নারী হয়ে নিজের সহপাঠীর অপ্রীতিকর ছবি সিনিয়র ভাইকে পাঠানোর অভিযোগ ‘লগি-বৈঠার তাণ্ডবের বিচার বাংলার মাটিতেই হবে’ তিন বিচারপতিকে শোকজের তথ্য সত্য নয়: সুপ্রিম কোর্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক জেলা কারাগার পরিদর্শন গণপূর্তে একটি অনিয়ম ঢাকতে আরেকটি অনিয়ম

ফার্নেস তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে চাপের মুখে পিডিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১০:৫৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
  • / ১০৬ Time View

প্রতি মাসে গড়ে ৬০ হাজার টন ফার্নেস তেল নিচ্ছে পিডিবি। এতে পিডিবির বাড়তি খরচ হচ্ছে ৯৬ কোটি টাকা। অঙ্কটি বছরে হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে।

ফার্নেস তেল প্রতি লিটারে ৭০ টাকা খরচ পড়ছে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে। একই তেল বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সরবরাহ করছে ৮৬ টাকা দরে। অর্থাৎ প্রতি লিটারে ১৬ টাকা বাড়তি দিতে হচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি)

সর্বশেষ গত বছরের ২ আগস্ট ফার্নেস তেলের দাম নির্ধারণ করে বিপিসি। এরপর গত এক বছরে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলেও দেশে তা সমন্বয় করা হয়নি। বিপিসি সূত্র বলছে, গত জানুয়ারিতে প্রতি টন ফার্নেস তেলের দাম ছিল ৪৮৬ ডলার। এখন তা কমে হয়েছে ৩৭৩ ডলার। এর মানে গত ১০ মাসেই বিশ্ববাজারে দাম কমেছে ২৩ শতাংশ, অথচ দেশে কমানো হয়নি।

জ্বালানি খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত বছর বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি গেছে ৬২ হাজার কোটি টাকা। এ বছরও বিদ্যুৎ খরচ কমাতে হিমশিম খাচ্ছে পিডিবি। একদিকে পিডিবির কাছে তেল বিক্রি করে বাড়তি মুনাফা করছে সরকারি সংস্থা বিপিসি; অন্যদিকে সরকারি আরেক সংস্থা পিডিবিকে নিয়মিত ভর্তুকি দিতে পারছে না সরকার। এতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছে না পিডিবি।

চুক্তি অনুসারে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে জ্বালানি তেল সরবরাহের ব্যবস্থা করে দেয় পিডিবি। আর বিদ্যুৎকেন্দ্র নিজেরা আমদানি করলে ৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জসহ তাদের তেলের দাম পিডিবি পরিশোধ করে দেয়।

বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র মালিকদের সংগঠন (বিআইপিপিএ) সূত্র জানিয়েছে, প্রতি লিটার ফার্নেস তেলে গত জানুয়ারিতে তারা নিয়েছিল ৮৫ থেকে ৮৭ টাকা। তারা এখন পিডিবির কাছ থেকে গড়ে নিচ্ছে ৭০ টাকা। পিডিবির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তাও দামের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পিডিবি ও বিপিসি সূত্র বলছে, গত বছর বিপিসির কাছ থেকে ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫১২ টন ফার্নেস তেল নিয়েছিল পিডিবি। এ বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে ৫ লাখ ৭২ হাজার ৫৫৮ টন। এর মানে বছরের ৯ মাসে পিডিবি মোট ফার্নেস তেল নিয়েছে ৫৭ কোটি ২৫ লাখ ৫৮ হাজার লিটার। পুরোটা সময়ই বাড়তি দাম শোধ করে আসছে পিডিবি। বাকি ৩ মাসে আরও ১৩ কোটি লিটার ফার্নেস তেল সরবরাহের কথা রয়েছে। দাম না কমালে পিডিবিকে ৩ মাসেই বাড়তি দিতে হবে ২০৮ কোটি টাকা।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, একটি সরকারি সংস্থা লিটারে ১৬ টাকা বেশি নেয় কেমন করে? এটা তো অপরাধ। এ লুণ্ঠনের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। জ্বালানি বিভাগও এর দায় এড়াতে পারে না।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ হিসেবে ২০০৩ সালে গঠিত হয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গণশুনানি করে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করার কথা এ কমিশনের। তবে প্রবিধানমালা চূড়ান্ত না করায় জ্বালানি তেলের (অকটেন, পেট্রল, ডিজেল, কেরোসিন) দাম নির্ধারণ করে জ্বালানি বিভাগ।

আর ফার্নেস তেলের দাম নির্ধারণ করে বিপিসি। যদিও সরকার পরিবর্তনের পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে ফার্নেস তেলের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা বিইআরসির হাতে দেওয়া হয়।

বিইআরসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, বিইআরসির লাইসেন্স নেই বিপিসির। তাই তাদের প্রস্তাব ধরে গণশুনানি আয়োজনের আইনগত সুযোগ নেই।

বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন, ফার্নেস তেলের দাম নির্ধারণের পরের মাসেই দাম নির্ধারণের ক্ষমতা বিইআরসির হাতে দেয় সরকার। তাই বিপিসির দাম সমন্বয়ের আর সুযোগ নেই। দাম নির্ধারণে বিইআরসির কাছে প্রস্তাব করা হলেও শুনানি হয়নি।

Please Share This Post in Your Social Media

ফার্নেস তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে চাপের মুখে পিডিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update Time : ১০:৫৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

প্রতি মাসে গড়ে ৬০ হাজার টন ফার্নেস তেল নিচ্ছে পিডিবি। এতে পিডিবির বাড়তি খরচ হচ্ছে ৯৬ কোটি টাকা। অঙ্কটি বছরে হাজার কোটি টাকা ছাড়াতে পারে।

ফার্নেস তেল প্রতি লিটারে ৭০ টাকা খরচ পড়ছে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে। একই তেল বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সরবরাহ করছে ৮৬ টাকা দরে। অর্থাৎ প্রতি লিটারে ১৬ টাকা বাড়তি দিতে হচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি)

সর্বশেষ গত বছরের ২ আগস্ট ফার্নেস তেলের দাম নির্ধারণ করে বিপিসি। এরপর গত এক বছরে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলেও দেশে তা সমন্বয় করা হয়নি। বিপিসি সূত্র বলছে, গত জানুয়ারিতে প্রতি টন ফার্নেস তেলের দাম ছিল ৪৮৬ ডলার। এখন তা কমে হয়েছে ৩৭৩ ডলার। এর মানে গত ১০ মাসেই বিশ্ববাজারে দাম কমেছে ২৩ শতাংশ, অথচ দেশে কমানো হয়নি।

জ্বালানি খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত বছর বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি গেছে ৬২ হাজার কোটি টাকা। এ বছরও বিদ্যুৎ খরচ কমাতে হিমশিম খাচ্ছে পিডিবি। একদিকে পিডিবির কাছে তেল বিক্রি করে বাড়তি মুনাফা করছে সরকারি সংস্থা বিপিসি; অন্যদিকে সরকারি আরেক সংস্থা পিডিবিকে নিয়মিত ভর্তুকি দিতে পারছে না সরকার। এতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছে না পিডিবি।

চুক্তি অনুসারে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে জ্বালানি তেল সরবরাহের ব্যবস্থা করে দেয় পিডিবি। আর বিদ্যুৎকেন্দ্র নিজেরা আমদানি করলে ৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জসহ তাদের তেলের দাম পিডিবি পরিশোধ করে দেয়।

বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র মালিকদের সংগঠন (বিআইপিপিএ) সূত্র জানিয়েছে, প্রতি লিটার ফার্নেস তেলে গত জানুয়ারিতে তারা নিয়েছিল ৮৫ থেকে ৮৭ টাকা। তারা এখন পিডিবির কাছ থেকে গড়ে নিচ্ছে ৭০ টাকা। পিডিবির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তাও দামের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পিডিবি ও বিপিসি সূত্র বলছে, গত বছর বিপিসির কাছ থেকে ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫১২ টন ফার্নেস তেল নিয়েছিল পিডিবি। এ বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে ৫ লাখ ৭২ হাজার ৫৫৮ টন। এর মানে বছরের ৯ মাসে পিডিবি মোট ফার্নেস তেল নিয়েছে ৫৭ কোটি ২৫ লাখ ৫৮ হাজার লিটার। পুরোটা সময়ই বাড়তি দাম শোধ করে আসছে পিডিবি। বাকি ৩ মাসে আরও ১৩ কোটি লিটার ফার্নেস তেল সরবরাহের কথা রয়েছে। দাম না কমালে পিডিবিকে ৩ মাসেই বাড়তি দিতে হবে ২০৮ কোটি টাকা।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, একটি সরকারি সংস্থা লিটারে ১৬ টাকা বেশি নেয় কেমন করে? এটা তো অপরাধ। এ লুণ্ঠনের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। জ্বালানি বিভাগও এর দায় এড়াতে পারে না।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ হিসেবে ২০০৩ সালে গঠিত হয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গণশুনানি করে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করার কথা এ কমিশনের। তবে প্রবিধানমালা চূড়ান্ত না করায় জ্বালানি তেলের (অকটেন, পেট্রল, ডিজেল, কেরোসিন) দাম নির্ধারণ করে জ্বালানি বিভাগ।

আর ফার্নেস তেলের দাম নির্ধারণ করে বিপিসি। যদিও সরকার পরিবর্তনের পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে ফার্নেস তেলের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা বিইআরসির হাতে দেওয়া হয়।

বিইআরসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, বিইআরসির লাইসেন্স নেই বিপিসির। তাই তাদের প্রস্তাব ধরে গণশুনানি আয়োজনের আইনগত সুযোগ নেই।

বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন, ফার্নেস তেলের দাম নির্ধারণের পরের মাসেই দাম নির্ধারণের ক্ষমতা বিইআরসির হাতে দেয় সরকার। তাই বিপিসির দাম সমন্বয়ের আর সুযোগ নেই। দাম নির্ধারণে বিইআরসির কাছে প্রস্তাব করা হলেও শুনানি হয়নি।