ঢাকা ০২:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রধান উপদেষ্টার সামনে কাঁদলেন আবু সাঈদের মা-বাবা

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর ব‌্যু‌রো
  • Update Time : ০৬:১০:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৪৭ Time View

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর ঢাকার বাইরে প্রথম রংপুর সফরে এসেছেন প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি গিয়েছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের বাড়িতে। সেখানে আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের পর কথা বলেছেন তার পরিবারের সদস্যদের সাথে।

এসময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন হু হু করে কাঁদতে থাকেন। আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম এবং পরিবারের অন্য সদস্যরাও এসময় অশ্রুসজল ছিলেন। এমন হৃদয়বিদারক পরিবেশে চোখের জল আটকে রাখতে পারেননি অন্যরা। প্রধান উপদেষ্টা শোকসন্তপ্ত আবু সাঈদের পরিবারকে সান্ত্বনা দেন। একই সঙ্গে আবু সাঈদের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন।

সেখানে তিনি আবু সাঈদের বাবা-মা এবং পরিবারের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টাকে আবু সাঈদকে নিয়ে তাদের স্মৃতি ও আকাঙ্ক্ষার জানান। আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম তার ছেলেকে হারানোর কথা তুলে ধরেন। পরে আবু সাঈদের বাবা-মা, পরিবারের সদস্য এবং অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে নিয়ে জাতীয় পতাকা মেলে ধরেন ড. ইউনূস।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন, ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আখতার হোসেন, সমন্বয়ক সারজিস আলমসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

এর আগে শনিবার (১০ আগস্ট) সকালে হেলিকপ্টারযোগে রংপুরের পীরগঞ্জে আসেন তিনি। আবু সাঈদের বাড়ি থেকে তিনি আসেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কসহ শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় করেন। পরে আহতদের দেখতে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে যান। এরপর রংপুর সার্কিট হাউসে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এদিকে শুক্রবার থেকেই ড. ইউনূসের আগমন ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে ওই এলাকায়। সেনাবাহিনীর সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যরা সেখানে অবস্থান করছেন। তবে পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি।

ফ্রান্স থেকে বৃহস্পতিবার ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছার পর ড. ইউনূস আবু সাঈদকে স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘এই মুহুর্তে আমি আবু সাঈদকে স্মরণ করছি, যার ছবি প্রত্যেক বাংলাদেশীর স্মৃতিতে খোদাই করা আছে। কেউ এটি ভুলতে পারে না। কি অবিশ্বাস্যভাবে সাহসী যুবক ছিলেন তিনি! তিনি বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে যান এবং তারপর থেকে আন্দোলনরত তরুণ-তরুণীরা হার মানেনি। সামনে এগিয়ে গেছে এবং বলেছে, যত গুলি মারতে পারো মারো , আমরা এখানে আছি।’

প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সামনের সাড়িতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন আবু সাঈদ। গত ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন পার্ক মোড়ে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। পরদিন ১৭ জুলাই তাকে পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন আবু সাঈদ।

Please Share This Post in Your Social Media

প্রধান উপদেষ্টার সামনে কাঁদলেন আবু সাঈদের মা-বাবা

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর ব‌্যু‌রো
Update Time : ০৬:১০:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৪

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর ঢাকার বাইরে প্রথম রংপুর সফরে এসেছেন প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি গিয়েছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের বাড়িতে। সেখানে আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের পর কথা বলেছেন তার পরিবারের সদস্যদের সাথে।

এসময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন হু হু করে কাঁদতে থাকেন। আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম এবং পরিবারের অন্য সদস্যরাও এসময় অশ্রুসজল ছিলেন। এমন হৃদয়বিদারক পরিবেশে চোখের জল আটকে রাখতে পারেননি অন্যরা। প্রধান উপদেষ্টা শোকসন্তপ্ত আবু সাঈদের পরিবারকে সান্ত্বনা দেন। একই সঙ্গে আবু সাঈদের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন।

সেখানে তিনি আবু সাঈদের বাবা-মা এবং পরিবারের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টাকে আবু সাঈদকে নিয়ে তাদের স্মৃতি ও আকাঙ্ক্ষার জানান। আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম তার ছেলেকে হারানোর কথা তুলে ধরেন। পরে আবু সাঈদের বাবা-মা, পরিবারের সদস্য এবং অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে নিয়ে জাতীয় পতাকা মেলে ধরেন ড. ইউনূস।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন, ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আখতার হোসেন, সমন্বয়ক সারজিস আলমসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

এর আগে শনিবার (১০ আগস্ট) সকালে হেলিকপ্টারযোগে রংপুরের পীরগঞ্জে আসেন তিনি। আবু সাঈদের বাড়ি থেকে তিনি আসেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কসহ শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় করেন। পরে আহতদের দেখতে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে যান। এরপর রংপুর সার্কিট হাউসে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এদিকে শুক্রবার থেকেই ড. ইউনূসের আগমন ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে ওই এলাকায়। সেনাবাহিনীর সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যরা সেখানে অবস্থান করছেন। তবে পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি।

ফ্রান্স থেকে বৃহস্পতিবার ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছার পর ড. ইউনূস আবু সাঈদকে স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘এই মুহুর্তে আমি আবু সাঈদকে স্মরণ করছি, যার ছবি প্রত্যেক বাংলাদেশীর স্মৃতিতে খোদাই করা আছে। কেউ এটি ভুলতে পারে না। কি অবিশ্বাস্যভাবে সাহসী যুবক ছিলেন তিনি! তিনি বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে যান এবং তারপর থেকে আন্দোলনরত তরুণ-তরুণীরা হার মানেনি। সামনে এগিয়ে গেছে এবং বলেছে, যত গুলি মারতে পারো মারো , আমরা এখানে আছি।’

প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সামনের সাড়িতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন আবু সাঈদ। গত ১৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন পার্ক মোড়ে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। পরদিন ১৭ জুলাই তাকে পীরগঞ্জ উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন আবু সাঈদ।