ঢাকা ০৮:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রতি মাসে ৮২০ মিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে শুধু জ্বালানি আমদানিতেই – হাসান মেহেদী

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৪:৪০:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫
  • / ১৭ Time View

খুলনার সিএসএস আভা সেন্টারে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হয়েছে নাগরিক কর্মশালা: জ্বালানি রূপান্তরঃ সঙ্কট ও সম্ভাবনা শীর্ষক কর্মশালা। আয়োজনটি করে প্রতিবেশ ও উন্নয়ন ফোরাম (এফইডি), খুলনা। সহযোগিতায় ছিল উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন) এবং বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়ন কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি)।

বর্তমান বাংলাদেশের সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়ের একটি হচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। দেশে ২৭ হাজার মেগাওয়াট স্থাপিত ক্ষমতা থাকলেও প্রকৃত সরবরাহ হয় মাত্র ১৬ হাজার মেগাওয়াট, যার ফলে ১০ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি ক্ষমতা সারাবছর অলস পড়ে থাকে। গত ১৬ বছরে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা শুধুমাত্র ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ বাবদ দেওয়া হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে।

কর্মশালার উদ্বোধন করেন হুমায়ুন কবির ববি, সদস্য সচিব, প্রতিবেশ ও উন্নয়ন ফোরাম, খুলনা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিডব্লিউজিইডি এর সদস্য সচিব জনাব হাসান মেহেদী। তিনি বাংলাদেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের বর্তমান অবস্থা, জীবাশ্ম জ্বালানির সামাজিক ও পরিবেশগত প্রভাব, নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা এবং নাগরিকদের করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

হাসান মেহেদী বলেন, বাংলাদেশ এখন প্রতি মাসে প্রায় ৮২০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে শুধু জ্বালানি আমদানিতে, যা আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর বিপুল চাপ সৃষ্টি করছে। বর্তমানে দেশে কয়লা, এলএনজি, এলপিজি, ফার্নেস অয়েল ও ডিজেলসহ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, অথচ নবায়নযোগ্য শক্তি (RE) মোট উৎপাদনের মাত্র ০.৯%।

তিনি আরও বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির আমদানি নির্ভরতা আমাদের অর্থনীতি, পরিবেশ ও জনগণের জীবিকা, তিন দিক থেকেই বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাই এখনই সময় ন্যায্য ও টেকসই জ্বালানি রূপান্তরের।

মূল প্রবন্ধে তুলে ধরা হয় যে, দেশের মোট নির্গমনের ৪৯% আসে জ্বালানি খাত থেকে, যার মধ্যে বিদ্যুৎ খাতের অংশ ৩৫%। কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ প্রতিটি ইউনিটে প্রায় ১ কেজি কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমন করে, যেখানে সৌর বিদ্যুতের ক্ষেত্রে তা মাত্র ৫০ গ্রাম।

এদিকে, এক মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ বছরে প্রায় ২.৬১ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে এবং ১,৫০৭ টন কার্বন নিঃসরণ রোধ করতে পারে।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা জোর দিয়ে বলেন, দেশের টেকসই জ্বালানি ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হলে এখনই কয়লা, এলএনজি ও ডিজেল নির্ভর প্রকল্প বাতিল করে নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

অনুষ্ঠানে স্থানীয় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, নারী উদ্যোক্তা, শিক্ষার্থী, গবেষক এবং গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালায় অংশ নেন সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর আনোয়ারুল কাদির, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি রেহানা আক্তার ও গৌরাঙ্গ নন্দী, সাজ্জাদুর রহিম পান্থ, সভাপতি (ক্লিন), সাংবাদিক আবু হেনা মোস্তফা কামাল (মাছরাঙা টেলিভিশন), সাংবাদিক দীপংকর রায় (দ্য ডেইলি স্টার) এবং সাংবাদিক হাসান হিমালয় (সমকাল) প্রমুখ।

Please Share This Post in Your Social Media

প্রতি মাসে ৮২০ মিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে শুধু জ্বালানি আমদানিতেই – হাসান মেহেদী

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update Time : ০৪:৪০:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫

খুলনার সিএসএস আভা সেন্টারে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হয়েছে নাগরিক কর্মশালা: জ্বালানি রূপান্তরঃ সঙ্কট ও সম্ভাবনা শীর্ষক কর্মশালা। আয়োজনটি করে প্রতিবেশ ও উন্নয়ন ফোরাম (এফইডি), খুলনা। সহযোগিতায় ছিল উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন) এবং বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়ন কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি)।

বর্তমান বাংলাদেশের সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয়ের একটি হচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। দেশে ২৭ হাজার মেগাওয়াট স্থাপিত ক্ষমতা থাকলেও প্রকৃত সরবরাহ হয় মাত্র ১৬ হাজার মেগাওয়াট, যার ফলে ১০ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি ক্ষমতা সারাবছর অলস পড়ে থাকে। গত ১৬ বছরে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা শুধুমাত্র ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ বাবদ দেওয়া হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে।

কর্মশালার উদ্বোধন করেন হুমায়ুন কবির ববি, সদস্য সচিব, প্রতিবেশ ও উন্নয়ন ফোরাম, খুলনা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিডব্লিউজিইডি এর সদস্য সচিব জনাব হাসান মেহেদী। তিনি বাংলাদেশের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের বর্তমান অবস্থা, জীবাশ্ম জ্বালানির সামাজিক ও পরিবেশগত প্রভাব, নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা এবং নাগরিকদের করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

হাসান মেহেদী বলেন, বাংলাদেশ এখন প্রতি মাসে প্রায় ৮২০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে শুধু জ্বালানি আমদানিতে, যা আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর বিপুল চাপ সৃষ্টি করছে। বর্তমানে দেশে কয়লা, এলএনজি, এলপিজি, ফার্নেস অয়েল ও ডিজেলসহ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, অথচ নবায়নযোগ্য শক্তি (RE) মোট উৎপাদনের মাত্র ০.৯%।

তিনি আরও বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির আমদানি নির্ভরতা আমাদের অর্থনীতি, পরিবেশ ও জনগণের জীবিকা, তিন দিক থেকেই বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাই এখনই সময় ন্যায্য ও টেকসই জ্বালানি রূপান্তরের।

মূল প্রবন্ধে তুলে ধরা হয় যে, দেশের মোট নির্গমনের ৪৯% আসে জ্বালানি খাত থেকে, যার মধ্যে বিদ্যুৎ খাতের অংশ ৩৫%। কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ প্রতিটি ইউনিটে প্রায় ১ কেজি কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গমন করে, যেখানে সৌর বিদ্যুতের ক্ষেত্রে তা মাত্র ৫০ গ্রাম।

এদিকে, এক মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ বছরে প্রায় ২.৬১ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করে এবং ১,৫০৭ টন কার্বন নিঃসরণ রোধ করতে পারে।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা জোর দিয়ে বলেন, দেশের টেকসই জ্বালানি ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হলে এখনই কয়লা, এলএনজি ও ডিজেল নির্ভর প্রকল্প বাতিল করে নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

অনুষ্ঠানে স্থানীয় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, নারী উদ্যোক্তা, শিক্ষার্থী, গবেষক এবং গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালায় অংশ নেন সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর আনোয়ারুল কাদির, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি রেহানা আক্তার ও গৌরাঙ্গ নন্দী, সাজ্জাদুর রহিম পান্থ, সভাপতি (ক্লিন), সাংবাদিক আবু হেনা মোস্তফা কামাল (মাছরাঙা টেলিভিশন), সাংবাদিক দীপংকর রায় (দ্য ডেইলি স্টার) এবং সাংবাদিক হাসান হিমালয় (সমকাল) প্রমুখ।