ঢাকা ০২:৫৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ৩০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
সূচনা মেমোরিয়াল ট্রাস্টের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু রংপুরে অসুস্থ বাবাকে হাসপাতালে রেখে ঢাকায় এসে হলেন ২৬ খণ্ড ড্রামে পাওয়া ২৬ টুকরো লাশটি রংপুরের আশরাফুলের, বন্ধুর সঙ্গে গিয়েছিলেন ঢাকায় আর্জেন্টিনা ও আয়ারল্যান্ডে দূতাবাস খুলছে বাংলাদেশ বাসায় ঢুকে বিচারকের ছেলেকে ছুরিকাঘাতে হত্যা দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে নির্বাচনই একমাত্র বিকল্প : মির্জা ফখরুল প্রধান উপদেষ্টা জুলাই সনদ লঙ্ঘন করেছেন : সালাহউদ্দিন স্ত্রীসহ সাংবাদিক সুভাষ সিংহ রায়ের ‎ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ ‘লোকের দুটি বউ থাকতে পারে, আমার বান্ধবী থাকতে পারে না!’ ৩০১ রানের লিড নিয়ে ইনিংস ঘোষণা, রেকর্ডে ভাসছে বাংলাদেশ

পূজায় বরাদ্দ পাওয়া চালে সিন্ডিকেটের থাবা!

মোঃ মেহবুব আলম মনি, কটিয়াদী উপজেলা
  • Update Time : ০৫:৪৮:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ২৩১ Time View

এবারের দুর্গাপূজায় কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার পূজা মণ্ডপগুলোতে মিলেনি সরকারি বরাদ্দের চাল, মিলেছে চাল বিক্রির অর্ধেক টাকা। আর বাকি টাকা ভাগাভাগি করে নিয়ে গেছে সিন্ডিকেট। এমন অভিযোগ প্রায় প্রতিটি পূজামণ্ডপ থেকেই পাওয়া গেছে।

১৪ সেপ্টেম্বর উপজেলার প্রতিটি পূজামণ্ডপে ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয় প্রশাসন। বাজারমূল্য অনুযায়ী বরাদ্দের ৫০০ কেজি চাল থেকে প্রায় ২৫ হাজার টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু সিন্ডিকেটের থাবায় তারা পেয়েছেন মাত্র ১৫ হাজার টাকা। এতে করে ৪২ টি পূজামণ্ডপ থেকে সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৬ লাখ টাকা।

স্থানীয়সূত্র জানায়, প্রশাসন ১৪ সেপ্টেম্বর চাল বরাদ্দ দিলেও খাদ্য কর্মকর্তারা কালোবাজারিদের সঙ্গে মিলে ইচ্ছাকৃতভাবে চাল বিতরণে বিলম্ব করেছেন। পরে তড়িঘড়ি করে বিভিন্ন মণ্ডপের সভাপতি/ সাধারণ সম্পাদককে খাদ্যগুদামে ডেকে এনে ফাঁকা রেজিস্ট্রারে স্বাক্ষর রেখে চালের ডি ও প্রতি ১৫ হাজার টাকা ধরিয়ে দেন। এ কাজে খাদ্য কর্মকর্তা ও কালোবাজারিদের হয়ে কাজ করেছেন পূজা উদযাপন ফ্রন্টের বেশ কয়েকজন ব্যক্তি।

বর্মনপাড়া পূজা মণ্ডপের সভাপতি শীতল চন্দ্র বর্মণ বলেন, বরাদ্দের ডি ও নিয়ে খাদ্য গুদামে যাওয়ার পরে কর্মকর্তা বলেন স্বাক্ষর করে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে যান।  তখন টাকা নেওয়া ছাড়া কোন উপায় ছিল না। বরাদ্দের চালগুলো তাকে দেখার সুযোগও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

আনন্দময়ী যুব সংঘের সভাপতি উষা রঞ্জন সরকার বলেন, পূজার ব্যস্ততার মাঝেই বরাদ্দ আসে। এমন সময় চাল বুঝে নেওয়া কঠিন, তাই বাধ্য হয়েই বিক্রি করে দেন বলে জানান তিনি।

ফুটন্ত কলি যুব সংঘের সভাপতি লিটন রবি দাস বলেন, ইউএনও সাহেব মিটিংয়ে চাল বরাদ্দের কথা জানান। পরে গুদামে গিয়ে দেখি কিছু লোক ১৫ হাজার টাকা দরে সবার ডি ও কিনে নিচ্ছে। পাশের জেলায় একই চাল ২২-২৫ হাজারে বিক্রি হলেও, আমরা ১৫ হাজারেই নিতে বাধ্য হই।

কটিয়াদী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, প্রতিটি পূজামণ্ডপে আগত ভক্তদের আহার্য (খাবার) বাবদ বিতরণের জন্য ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পূজামণ্ডপের সভাপতি/সম্পাদক এসে বরাদ্দকৃত চালের ডিও সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন। এরপর বাকি কাজ খাদ্য বিভাগের।

খাদ্যগুদামের ভেতরে চালের পরিবর্তে টাকা লেনদেনের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কনক কান্তি দেবনাথ।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কটিয়াদি উপজেলার পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সভাপতি দিলীপ কুমার সাহা ও সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব চন্দ্র রায় নিমাই কথা বলতে রাজি হয়নি।

কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: মাইদুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি পূজামণ্ডপে সরকারের পক্ষ থেকে ৫০০ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চালের পরিবর্তে টাকা দেওয়ার কোন সুযোগ নেই বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান তিনি।

উল্লেখ্য যে, জেলায় ৩৯৪ টি পূজামণ্ডপে এবার ১৯৭ মেট্রিক চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। এরমধ্যে কটিয়াদী উপজেলার ৪২ টি পূজামণ্ডপে বরাদ্দ সাড়ে ২১ মেট্রিক টন চাল।

পূজার পবিত্রতায় সিন্ডিকেটের এই থাবা রোধে প্রশাসনের আরও কঠোর ভূমিকা কামনা করছেন এলাকাবাসী।

Please Share This Post in Your Social Media

পূজায় বরাদ্দ পাওয়া চালে সিন্ডিকেটের থাবা!

মোঃ মেহবুব আলম মনি, কটিয়াদী উপজেলা
Update Time : ০৫:৪৮:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এবারের দুর্গাপূজায় কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার পূজা মণ্ডপগুলোতে মিলেনি সরকারি বরাদ্দের চাল, মিলেছে চাল বিক্রির অর্ধেক টাকা। আর বাকি টাকা ভাগাভাগি করে নিয়ে গেছে সিন্ডিকেট। এমন অভিযোগ প্রায় প্রতিটি পূজামণ্ডপ থেকেই পাওয়া গেছে।

১৪ সেপ্টেম্বর উপজেলার প্রতিটি পূজামণ্ডপে ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয় প্রশাসন। বাজারমূল্য অনুযায়ী বরাদ্দের ৫০০ কেজি চাল থেকে প্রায় ২৫ হাজার টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু সিন্ডিকেটের থাবায় তারা পেয়েছেন মাত্র ১৫ হাজার টাকা। এতে করে ৪২ টি পূজামণ্ডপ থেকে সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৬ লাখ টাকা।

স্থানীয়সূত্র জানায়, প্রশাসন ১৪ সেপ্টেম্বর চাল বরাদ্দ দিলেও খাদ্য কর্মকর্তারা কালোবাজারিদের সঙ্গে মিলে ইচ্ছাকৃতভাবে চাল বিতরণে বিলম্ব করেছেন। পরে তড়িঘড়ি করে বিভিন্ন মণ্ডপের সভাপতি/ সাধারণ সম্পাদককে খাদ্যগুদামে ডেকে এনে ফাঁকা রেজিস্ট্রারে স্বাক্ষর রেখে চালের ডি ও প্রতি ১৫ হাজার টাকা ধরিয়ে দেন। এ কাজে খাদ্য কর্মকর্তা ও কালোবাজারিদের হয়ে কাজ করেছেন পূজা উদযাপন ফ্রন্টের বেশ কয়েকজন ব্যক্তি।

বর্মনপাড়া পূজা মণ্ডপের সভাপতি শীতল চন্দ্র বর্মণ বলেন, বরাদ্দের ডি ও নিয়ে খাদ্য গুদামে যাওয়ার পরে কর্মকর্তা বলেন স্বাক্ষর করে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে যান।  তখন টাকা নেওয়া ছাড়া কোন উপায় ছিল না। বরাদ্দের চালগুলো তাকে দেখার সুযোগও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

আনন্দময়ী যুব সংঘের সভাপতি উষা রঞ্জন সরকার বলেন, পূজার ব্যস্ততার মাঝেই বরাদ্দ আসে। এমন সময় চাল বুঝে নেওয়া কঠিন, তাই বাধ্য হয়েই বিক্রি করে দেন বলে জানান তিনি।

ফুটন্ত কলি যুব সংঘের সভাপতি লিটন রবি দাস বলেন, ইউএনও সাহেব মিটিংয়ে চাল বরাদ্দের কথা জানান। পরে গুদামে গিয়ে দেখি কিছু লোক ১৫ হাজার টাকা দরে সবার ডি ও কিনে নিচ্ছে। পাশের জেলায় একই চাল ২২-২৫ হাজারে বিক্রি হলেও, আমরা ১৫ হাজারেই নিতে বাধ্য হই।

কটিয়াদী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, প্রতিটি পূজামণ্ডপে আগত ভক্তদের আহার্য (খাবার) বাবদ বিতরণের জন্য ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পূজামণ্ডপের সভাপতি/সম্পাদক এসে বরাদ্দকৃত চালের ডিও সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন। এরপর বাকি কাজ খাদ্য বিভাগের।

খাদ্যগুদামের ভেতরে চালের পরিবর্তে টাকা লেনদেনের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কনক কান্তি দেবনাথ।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কটিয়াদি উপজেলার পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সভাপতি দিলীপ কুমার সাহা ও সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব চন্দ্র রায় নিমাই কথা বলতে রাজি হয়নি।

কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: মাইদুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি পূজামণ্ডপে সরকারের পক্ষ থেকে ৫০০ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চালের পরিবর্তে টাকা দেওয়ার কোন সুযোগ নেই বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান তিনি।

উল্লেখ্য যে, জেলায় ৩৯৪ টি পূজামণ্ডপে এবার ১৯৭ মেট্রিক চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। এরমধ্যে কটিয়াদী উপজেলার ৪২ টি পূজামণ্ডপে বরাদ্দ সাড়ে ২১ মেট্রিক টন চাল।

পূজার পবিত্রতায় সিন্ডিকেটের এই থাবা রোধে প্রশাসনের আরও কঠোর ভূমিকা কামনা করছেন এলাকাবাসী।