ঢাকা ০৫:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে আওয়ামী দোসররাই বিএনপি সেজে চাঁদাবাজীতে লিপ্ত

পুকুর তুমি কার?

রুনা লায়লা
  • Update Time : ০২:১৮:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ২২ Time View

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের একটি সরকারি পুকুর নিয়ে চলছে ভোজ-ভাজির খেলা। এই পুকুরটির পরিমাণ ১.০৩, প্রায় ৫ বিঘা খতিয়ান নং ০১. দাগ নং ৩৯৩৫ মৌজা শুভাঢ্যা, উপজেলা কেরানীগঞ্জ, জেলা ঢাকা। ভূমি অফিসের পাশেই পুকুরটি অবস্থিত। পুকুরের মাটি কেটে পাশে একটি রাস্তাও বানানো হয়েছে। সম্পূর্ণ মালিকানার পুকুর হলেও এটি দেখাশুনার লোক নেই। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তখন সে দলের নেতা-কর্মিরা নিজেদের মত পুকুরটি ব্যবহার করে থাকে। এই পুকুরটিতে মাছ চাষ করা হয়। পুকুরটি চার পাশে সবজি বাগান করা হয়।

বিগত সরকারের সময় সাবেক মন্ত্রি নসরুল হামিদ বিপু ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিনের লোকেরা নিয়ন্ত্রণ করতো পুকুরটি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫ আগষ্টের পরে সেই পুরোনো লোকেরাই অর্থাৎ আওয়ামী দোসররাই ইউএনওকে ভুল-ভাল বুঝিয়ে পুকুরটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। রাতা-রাতি ভোল পাল্টে আওয়ামী কর্মিরা এখন নব্য বিএনপি’র কর্মি সেজেছে। এদের একজন ইমতিয়াজ আহম্মেদ শাকিল ১ নং ওয়ার্ডের যুবলীগ নেতা ভোল পাল্টে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর রায় ও তার পুত্রবধূ নিপুণ রায়ের কর্মি সেজেছে।

অভিযোগ রয়েছে, শুধু পুকুরই নয় এই শাকিলের নেতৃত্বে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে চাঁদাবাজি দখলদারি, বালুর ব্যবসা, জেনারেটর ব্যবসা, অটোরিক্সা, ময়লারগাড়ি, মাদক ব্যবসার চাঁদা, ছোট বড় কারখানা থেকে মাসিকহারে চাঁদা আদায় করে থাকে। শুধু এখানেই শেষ নয় নতুন বাড়ী নির্মাণ কাজে চাঁদা এবং নতুন বাড়ী করতে হলে তার থেকে ইট-বালূ সিমেন্টসহ বিভিন্ন  সরঞ্জাম বাধ্যতামূলক নিতে হয়। তা না হলে বাড়ির নির্মান কাজ বন্ধ করে দেয়।

আবার কোন বাড়িতে নতুন বিদ্যুৎ-এর মিটার লাগালে তার সাথে লিয়াজোঁ করতে হয়। তা না হলে প্রশাসন দ্বারা সেই বাড়ির মিটারটি খুলে নিয়ে যায়। ফের টাকার বিনিময়ে সেই মিটার ফিরিয়ে দেওয়াসহ সকল অপকর্ম এই শাকিল গ্রুপ করে থাকে।

এখন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে প্রকাশ্যে চলছে এই সব হরিলুট। এই সব দেখার জন্য কেউ নেই। ফলে এলাকাবাসী হয়ে পড়েছে অতিষ্ঠ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি’র এক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই সব চলতে দেওয়া যায় না। এতে দলের বদনাম হচ্ছে। এইভাবে চলতে থাকলে বিএনপি’র ভাবমূর্তিক্ষুন্ন হচ্ছে।

এলাকাবাসী জানায়, গত ২২ শে আগষ্ট শুক্রবার সকাল থেকে ১নং ওয়ার্ডের যুব দলের সভাপতি (সাবেক যুবলীগ নেতা) ইমতিয়াজ আহম্মেদ শাকিল, সোহেল, হালিম, পারভেজ, শাওন গং পুকুরটির কচুরিপানা পরিস্কার করে। কেন এবং কি কারণে তারা পুকুরটির কচুরিপানা পরিস্কার করছে তার কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে এসি ল্যান্ড মামুনুর রহমান মামুনকে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি। তার ফোনে এসএমএস দেয়া হলেও তার কোন জবাব পাওয়া যায়নি। এরপর ইউএনও  রিনাত ফৌজিয়াকে ফোন করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

গত ২৮ আগষ্ট দৈনিক নওরোজে সেই পুকুর নিয়ে একটি প্রতিবেদন ছাপা হলে ই-পেপারের লিংকটি এসি ল্যান্ডের ওয়াটসঅ্যাপে দেয়া হয়। এর পর ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে সরকারি মোবাইল ফোনের ওয়াটসঅ্যাপে ই-পেপারের লিংকটি পাঠানো হয়।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে জানা গেছে, ইউএনও রিনাত ফৌজিয়া ১০ দিন ধরে অফিস করেন না। তিনি নাকি উপজেলার পাশে বাংলোতে অফিস করেন।

এই বিষয়ে এসি ল্যান্ড মামুনুর রহমান মামুন এই প্রতিবেদককে বলেন, পূর্বে কাজ করেছি কিন্তু এমন প্রেশার নিয়ে কাজ কখনো করিনি। আমাকে অনেক সময়ে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

তিনি আরোও বলেন, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, অ্যাডভোকেট নিপুন রায়ের কথা বলে অনেকেই আসে বিভিন্ন কাজের তদবির নিয়ে। কিন্তু আমি তাদের কারো কথায় কান দেই না।

তিনি জানান, ইউএনও রিনাত ফৌজিয়া অনেকবার ঘুষের প্রস্তাব দিলেও আমি তা গ্রহণ করিনি।

ইউএনও রিনাত ফৌজিয়া ফ্যাসিস্ট সরকারের সাকে এমপি’র স্ত্রী বলে জানা গেছে। তার স্বামী এখন বিএনপিতে যোগদান করার জন্য জোর তদবির চালাচ্ছে।

অভিযোগ উঠেছে, রিনাত ফৌজিয়া কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় নতুন ভবনের জন্য অনুমোদন দিয়ে থাকেন যা রাজউকের অনুমোদনহীন।

তার বিরুদ্ধে অনেক অপকর্মের অভিযোগ এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে যা জানতে আগামী সংখ্যা নওরোজে চোখ রাখুন।

Please Share This Post in Your Social Media

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে আওয়ামী দোসররাই বিএনপি সেজে চাঁদাবাজীতে লিপ্ত

পুকুর তুমি কার?

রুনা লায়লা
Update Time : ০২:১৮:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের একটি সরকারি পুকুর নিয়ে চলছে ভোজ-ভাজির খেলা। এই পুকুরটির পরিমাণ ১.০৩, প্রায় ৫ বিঘা খতিয়ান নং ০১. দাগ নং ৩৯৩৫ মৌজা শুভাঢ্যা, উপজেলা কেরানীগঞ্জ, জেলা ঢাকা। ভূমি অফিসের পাশেই পুকুরটি অবস্থিত। পুকুরের মাটি কেটে পাশে একটি রাস্তাও বানানো হয়েছে। সম্পূর্ণ মালিকানার পুকুর হলেও এটি দেখাশুনার লোক নেই। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তখন সে দলের নেতা-কর্মিরা নিজেদের মত পুকুরটি ব্যবহার করে থাকে। এই পুকুরটিতে মাছ চাষ করা হয়। পুকুরটি চার পাশে সবজি বাগান করা হয়।

বিগত সরকারের সময় সাবেক মন্ত্রি নসরুল হামিদ বিপু ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিনের লোকেরা নিয়ন্ত্রণ করতো পুকুরটি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫ আগষ্টের পরে সেই পুরোনো লোকেরাই অর্থাৎ আওয়ামী দোসররাই ইউএনওকে ভুল-ভাল বুঝিয়ে পুকুরটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। রাতা-রাতি ভোল পাল্টে আওয়ামী কর্মিরা এখন নব্য বিএনপি’র কর্মি সেজেছে। এদের একজন ইমতিয়াজ আহম্মেদ শাকিল ১ নং ওয়ার্ডের যুবলীগ নেতা ভোল পাল্টে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর রায় ও তার পুত্রবধূ নিপুণ রায়ের কর্মি সেজেছে।

অভিযোগ রয়েছে, শুধু পুকুরই নয় এই শাকিলের নেতৃত্বে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে চাঁদাবাজি দখলদারি, বালুর ব্যবসা, জেনারেটর ব্যবসা, অটোরিক্সা, ময়লারগাড়ি, মাদক ব্যবসার চাঁদা, ছোট বড় কারখানা থেকে মাসিকহারে চাঁদা আদায় করে থাকে। শুধু এখানেই শেষ নয় নতুন বাড়ী নির্মাণ কাজে চাঁদা এবং নতুন বাড়ী করতে হলে তার থেকে ইট-বালূ সিমেন্টসহ বিভিন্ন  সরঞ্জাম বাধ্যতামূলক নিতে হয়। তা না হলে বাড়ির নির্মান কাজ বন্ধ করে দেয়।

আবার কোন বাড়িতে নতুন বিদ্যুৎ-এর মিটার লাগালে তার সাথে লিয়াজোঁ করতে হয়। তা না হলে প্রশাসন দ্বারা সেই বাড়ির মিটারটি খুলে নিয়ে যায়। ফের টাকার বিনিময়ে সেই মিটার ফিরিয়ে দেওয়াসহ সকল অপকর্ম এই শাকিল গ্রুপ করে থাকে।

এখন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে প্রকাশ্যে চলছে এই সব হরিলুট। এই সব দেখার জন্য কেউ নেই। ফলে এলাকাবাসী হয়ে পড়েছে অতিষ্ঠ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি’র এক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই সব চলতে দেওয়া যায় না। এতে দলের বদনাম হচ্ছে। এইভাবে চলতে থাকলে বিএনপি’র ভাবমূর্তিক্ষুন্ন হচ্ছে।

এলাকাবাসী জানায়, গত ২২ শে আগষ্ট শুক্রবার সকাল থেকে ১নং ওয়ার্ডের যুব দলের সভাপতি (সাবেক যুবলীগ নেতা) ইমতিয়াজ আহম্মেদ শাকিল, সোহেল, হালিম, পারভেজ, শাওন গং পুকুরটির কচুরিপানা পরিস্কার করে। কেন এবং কি কারণে তারা পুকুরটির কচুরিপানা পরিস্কার করছে তার কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে এসি ল্যান্ড মামুনুর রহমান মামুনকে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি। তার ফোনে এসএমএস দেয়া হলেও তার কোন জবাব পাওয়া যায়নি। এরপর ইউএনও  রিনাত ফৌজিয়াকে ফোন করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

গত ২৮ আগষ্ট দৈনিক নওরোজে সেই পুকুর নিয়ে একটি প্রতিবেদন ছাপা হলে ই-পেপারের লিংকটি এসি ল্যান্ডের ওয়াটসঅ্যাপে দেয়া হয়। এর পর ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে সরকারি মোবাইল ফোনের ওয়াটসঅ্যাপে ই-পেপারের লিংকটি পাঠানো হয়।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে জানা গেছে, ইউএনও রিনাত ফৌজিয়া ১০ দিন ধরে অফিস করেন না। তিনি নাকি উপজেলার পাশে বাংলোতে অফিস করেন।

এই বিষয়ে এসি ল্যান্ড মামুনুর রহমান মামুন এই প্রতিবেদককে বলেন, পূর্বে কাজ করেছি কিন্তু এমন প্রেশার নিয়ে কাজ কখনো করিনি। আমাকে অনেক সময়ে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

তিনি আরোও বলেন, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, অ্যাডভোকেট নিপুন রায়ের কথা বলে অনেকেই আসে বিভিন্ন কাজের তদবির নিয়ে। কিন্তু আমি তাদের কারো কথায় কান দেই না।

তিনি জানান, ইউএনও রিনাত ফৌজিয়া অনেকবার ঘুষের প্রস্তাব দিলেও আমি তা গ্রহণ করিনি।

ইউএনও রিনাত ফৌজিয়া ফ্যাসিস্ট সরকারের সাকে এমপি’র স্ত্রী বলে জানা গেছে। তার স্বামী এখন বিএনপিতে যোগদান করার জন্য জোর তদবির চালাচ্ছে।

অভিযোগ উঠেছে, রিনাত ফৌজিয়া কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় নতুন ভবনের জন্য অনুমোদন দিয়ে থাকেন যা রাজউকের অনুমোদনহীন।

তার বিরুদ্ধে অনেক অপকর্মের অভিযোগ এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে যা জানতে আগামী সংখ্যা নওরোজে চোখ রাখুন।