ঢাকা ১০:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ

পাহাড়ের ঢাল আর পাদদেশে লাখো রোহিঙ্গা’র ঝুকিপূর্ণ বসবাস!

ইকবাল হোসাইন, উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৩:৪৩:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫
  • / ৬৬ Time View

গত তিনদিনের টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির। ঝুঁকিতে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা।

পাহাড়ের ঢাল আর পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস করায় বৃষ্টি আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। শিবিরের শেডগুলোতে ঢুকে পড়েছে বৃষ্টির পানি ও পাহাড়ি ঢল। নতুন করে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে বজ্রপাত, যা রীতিমতো জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব রোহিঙ্গাদের।

এরই মধ্যে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাটির দেয়াল চাপা পড়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে এক শিশু। পাশাপাশি, বজ্রপাতে আহত হয়েছে একই পরিবারের পাঁচজন।নিহত যুবকের নাম মোহাম্মদ আয়াছ (২০)। তিনি ক্যাম্প-২ ইস্টের ডি-৩ ব্লকের বাসিন্দা আবুল ফয়েজের ছেলে। আহত শিশুর নাম কামাল উদ্দিন (১২), সে একই ব্লকের বাসিন্দা জামাল উদ্দিনের ছেলে। তারা নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা, যারা এখনো বায়োমেট্রিক কার্ড সংগ্রহ করেনি। আয়াছ তার বোনের বাড়িতে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছিল।

সোমবার (২ জুন) দিবাগত রাতে উখিয়ার ২ ইস্ট ক্যাম্পের ডি-৩ ব্লকে নিজ শেল্টারে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।স্থানীয়রা জানান, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে নিজেদের তৈরি মাটির দেয়াল হঠাৎ ধ্বসে পড়ে। এতে মোহাম্মদ আয়াজ ও কামাল উদ্দিন গুরুতর আহত হন। আশপাশের রোহিঙ্গাদের সহায়তায় তাদের বিডিআরসি

এস-পিএইচসি হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কামাল উদ্দিন সুস্থ হয়ে উঠলেও আয়াছকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আরিফ হোসাইন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া টানা বর্ষণে শিবিরে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রবিবার রাত ৯টার দিকে ২০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্লক-৮-এ বজ্রপাতে একই পরিবারের পাঁচজন গুরুতর আহত হন। তারা হলেন— আনোয়ার বেগম (৪৭), জিয়াউর রহমান (২১), আয়েশা বিবি (১৫), সোনাউল্লাহ (২৮) ও হুসনে আরা (২৪)। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ক্যাম্প-২০-তে এনজিও ফ্রেন্ডশিপ পরিচালিত হাসপাতালে ভর্তি করেন।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, টানা বৃষ্টিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। পাহাড়ের ঢালে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট ক্যাম্প ইনচার্জ ও সেবাদানকারী সংস্থাগুলো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করছে। পাশাপাশি, রোহিঙ্গাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই রোহিঙ্গারা বন্যা, পাহাড়ি ঢল এবং বজ্রপাতের মতো দুর্যোগে বারবার বিপদের সম্মুখীন হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম নয় বলে জানিয়েছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

পাহাড়ের ঢাল আর পাদদেশে লাখো রোহিঙ্গা’র ঝুকিপূর্ণ বসবাস!

ইকবাল হোসাইন, উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
Update Time : ০৩:৪৩:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫

গত তিনদিনের টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির। ঝুঁকিতে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা।

পাহাড়ের ঢাল আর পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস করায় বৃষ্টি আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। শিবিরের শেডগুলোতে ঢুকে পড়েছে বৃষ্টির পানি ও পাহাড়ি ঢল। নতুন করে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে বজ্রপাত, যা রীতিমতো জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব রোহিঙ্গাদের।

এরই মধ্যে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাটির দেয়াল চাপা পড়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে এক শিশু। পাশাপাশি, বজ্রপাতে আহত হয়েছে একই পরিবারের পাঁচজন।নিহত যুবকের নাম মোহাম্মদ আয়াছ (২০)। তিনি ক্যাম্প-২ ইস্টের ডি-৩ ব্লকের বাসিন্দা আবুল ফয়েজের ছেলে। আহত শিশুর নাম কামাল উদ্দিন (১২), সে একই ব্লকের বাসিন্দা জামাল উদ্দিনের ছেলে। তারা নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা, যারা এখনো বায়োমেট্রিক কার্ড সংগ্রহ করেনি। আয়াছ তার বোনের বাড়িতে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছিল।

সোমবার (২ জুন) দিবাগত রাতে উখিয়ার ২ ইস্ট ক্যাম্পের ডি-৩ ব্লকে নিজ শেল্টারে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।স্থানীয়রা জানান, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে নিজেদের তৈরি মাটির দেয়াল হঠাৎ ধ্বসে পড়ে। এতে মোহাম্মদ আয়াজ ও কামাল উদ্দিন গুরুতর আহত হন। আশপাশের রোহিঙ্গাদের সহায়তায় তাদের বিডিআরসি

এস-পিএইচসি হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কামাল উদ্দিন সুস্থ হয়ে উঠলেও আয়াছকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আরিফ হোসাইন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া টানা বর্ষণে শিবিরে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রবিবার রাত ৯টার দিকে ২০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্লক-৮-এ বজ্রপাতে একই পরিবারের পাঁচজন গুরুতর আহত হন। তারা হলেন— আনোয়ার বেগম (৪৭), জিয়াউর রহমান (২১), আয়েশা বিবি (১৫), সোনাউল্লাহ (২৮) ও হুসনে আরা (২৪)। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ক্যাম্প-২০-তে এনজিও ফ্রেন্ডশিপ পরিচালিত হাসপাতালে ভর্তি করেন।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, টানা বৃষ্টিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। পাহাড়ের ঢালে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট ক্যাম্প ইনচার্জ ও সেবাদানকারী সংস্থাগুলো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করছে। পাশাপাশি, রোহিঙ্গাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই রোহিঙ্গারা বন্যা, পাহাড়ি ঢল এবং বজ্রপাতের মতো দুর্যোগে বারবার বিপদের সম্মুখীন হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম নয় বলে জানিয়েছেন।